অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে উদ্বেগ
দলের নাম করেই হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর
ত দিন নাম না-করে বলছিলেন। এ বার সরাসরি তাঁর নিজের দল তৃণমূলের নাম করেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, তিনি এমনকী, তাদের তরফে কোনও ‘অন্যায়’ হলে তা-ও সহ্য করবেন না!
ভোট-পরবর্তী সময়ে জেলায় জেলায় সিপিএমের নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রীদের বাড়ি বা সিপিএম অফিসের অদূরে যে ভাবে অস্ত্র-উদ্ধার হচ্ছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ‘কটাক্ষ’ করতে শুরু করেছে অধুনা বিরোধী সিপিএম। তাদের সরাসরি অভিযোগ, ওই সমস্ত অস্ত্র-উদ্ধার অভিযান ‘সাজানো’। পাশাপাশি তারা তাদের কর্মী-সমর্থকদের উপর তৃণমূলের ‘হামলা’র অভিযোগও করেছে। বৃহস্পতিবার মহাকরণে অস্ত্র-উদ্ধার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সূত্রেই তিনি স্পষ্ট বলেন, “প্রশাসন কিন্তু দলতন্ত্র নয়! গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে হবে। কোনও রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। তৃণমূল কংগ্রেসেরও নয়! আইন আইনের পথেই চলবে।” মুখ্যমন্ত্রী মমতার বক্তব্য, “অন্যায় করা এবং সহ্য করা দুটোই সমান অপরাধ।”
এরই পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছেও মমতা আবেদন করেছেন, “আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নেবেন না। প্রশাসনকে জানান। প্রশাসন প্রশাসনের মতো চলবে।”
পরের অংশটি এর আগেও একাধিক বার বলেছেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তিনি আবেদন জানিয়েছেন ‘সাধারণ মানুষের’ কাছে। এদিন কিন্তু তিনি সরাসরি তাঁর নিজের দল তৃণমূলের নাম করেছেন। প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েই মমতা বুঝিয়েছিলেন, তিনি বিভিন্ন স্তরে ‘আমরা-ওরা’র বিভাজন রাখতে চান না। বিধানসভার স্পিকার নির্বাচনের দিন তাঁর ভাষণে এবং নিয়ম করে প্রায় রোজই বিভিন্ন বক্তব্যে মমতা সেই প্রয়াস চালাচ্ছেন। পুলিশ-প্রশাসনকেও কড়া বার্তা দিয়েছিলেন রাজনৈতিক রং না-দেখে কাজ করতে। কোথাও অস্ত্রের খোঁজ পেলে আইন নিজের হাতে না-তুলে নিয়ে তা পুলিশ-প্রশাসনকে জানাতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে বিরোধীদের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর ‘সদিচ্ছা’র বিষয়টি তাঁর দলের নিচুতলা পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে না। এ দিনই বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র সেই মর্মে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বামকর্মীদের ‘অত্যাচারিত’ হওয়ার অভিযোগ নিয়ে ওই চিঠিটি দিয়েছেন সূর্যবাবু। মোট ৮২৩ জনের নামের তালিকা দিয়ে ওই চিঠিতে বিরোধী দলনেতা লিখেছেন, ওই বামকর্মীরা কেউ ঘরছাড়া, কেউ মার খেয়েছেন এমনকী, ধর্ষিতাও হয়েছেন। সূর্যবাবু ওই অত্যাচারিতদের নামের তালিকার সঙ্গে তাঁরা কে কোন এলাকায় থাকেন, তা-ও উল্লেখ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী যে বিষয়ে বলেছেন, “চিঠি পেয়েছি। কিন্তু নামের যে তালিকা পাওয়া গিয়েছে, সেখানে শুধু এলাকার নাম উল্লেখ রয়েছে। নির্দিষ্ট কোনও ঠিকানা লেখা নেই। ওই ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট ঠিকানা দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষত পশ্চিম মেদিনীপুর এবং হুগলিতে যে ভাবে অস্ত্র মিলছে, তাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হওয়ায় ও কোনও কোনও ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী উদ্বিগ্ন। গড়বেতায় উদ্ধার হওয়া অস্ত্র নিয়ে তাঁর মন্তব্য, “যত অস্ত্র মিলছে, যুদ্ধেও তা পাওয়া যায় না!” বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্র মিলছে সিপিএমের নেতাদের বাড়ি, পার্টি অফিস কিংবা সিপিএম নেতা-কর্মী বাড়ি ও পার্টি অফিসের লাগোয়া এলাকা থেকে। অস্ত্র উদ্ধারে সামিল হচ্ছেন সাধারণ মানুষও। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সেই বিষয়ে তাঁর উদ্বেগ জানাতেই মুখ্যমন্ত্রী আরও একবার এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁর সরকার ঠিক কী ভাবে কাজ করতে চাইছে।
মমতার এ দিনের বক্তব্য সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের অভিমত, নিজের দলের নিচুতলা ও পুলিশের কাছে ফের পরিষ্কার বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগেও দলীয় কর্মী-নেতাদের কাছে তিনি একই আবেদন করেছিলেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেই নির্দেশ যে মানা হচ্ছে না, সে ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রী অবহিত। পাশাপাশি তিনি চান না, তাঁর প্রশাসনের গায়ে ‘পক্ষপাতিত্বের’ ছাপ পড়ুক। এবা বাম-জমানার পুনরাবৃত্তি হোক। তাই তিনি আরও একবার দলীয় কর্মী এবং প্রশাসনকে সতর্ক করে দিলেন।
Previous Story Rajya Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.