|
|
|
|
বীরহোড়ের উজ্জ্বল মুখ সীতারাম শিকারি |
সমীর দত্ত ² বোরো |
পুরুলিয়া জেলার বীরহোড় সম্প্রদায়। যাদের শিক্ষার হার শতাংশে আসে না। সেই সম্প্রদায়ের এক সদস্য সীতারাম শিকারি এ বার পেরোলেন উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি। তবে চমক অন্য জায়গায়। গোটা জেলায় এই সম্প্রদায়ের সদস্য সংখ্যা ২৭৮। তাঁদের মধ্যে কেউ আজ পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিকের চৌকাঠ পার করতে পারেননি। সেই অর্থে সীতারাম ওই সম্প্রদায়ে চমক।
|
নিজস্ব চিত্র। |
সীতারাম ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে বোরো থানার শুশুনিয়া গ্রামে একলব্য মডেল স্কুলের পড়েছেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি গ্রামের স্কুলে পড়েছেন। স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে প্রথম বাঘমুণ্ডির ভূপতিপল্লির ওই জনগোষ্ঠী থেকে দুই বালককে নিয়ে আসা হয়েছিল। ২০০৯-এ সীতারাম ও কাঞ্চন শিকারি দু’জনেই মাধ্যমিক পাশ করেছেন। কাঞ্চন এর পরে পড়তে যান পুঞ্চার নপাড়া হাইস্কুলে। নপাড়া স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঞ্চন পরীক্ষায় বসলেও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। কিন্তু সীতারাম তা করে দেখিয়েছে। কলা বিভাগে ১৮১ নম্বর নিয়ে পাশ করেছে সীতারাম। |
|
সীতারামের কথায়, “স্কুলের শিক্ষকদের জন্যই উত্তীর্ণ হতে পেরেছি।” এর পরে কোথায় পড়বেন? এই প্রশ্নে নিরুত্তর সীতারাম। সীতারামরা তিন ভাই-বোন। সীতারাম সবার ছোট। তাঁর বাবা ফতু শিকারি বলেন, “সরকারের কাছ থেকে ঘর, দু’বিঘা জমি পেয়েছিলাম। ওই জমি থেকে যা ধান হয়, সারা বছর চলে না। দিনমজুরি করতে হয়। অবসরে জঙ্গলে শিকারের উদ্দ্যেশে বার হই।আমাদের সমাজে শিক্ষার প্রচলন নেই। একলব্যের শিক্ষকেরা আমার ছেলের সাফল্যের পিছনে রয়েছেন।” একলব্য স্কুলের টিচার ইনচার্জ অজিতকুমার মাহাতো, শিক্ষক বিদ্যাধর মাণ্ডিরা বলেন, “ও কলেজে ভর্তি হলে আমরা যতটা সম্ভব সাহায্য করব। সীতারামকে বলেছি কলেজের ফর্ম তুলে রাখতে।” পুঞ্চার লৌলাড়া রামানন্দ সেন্টিনারি কলেজের অধ্যক্ষ চণ্ডীদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে আর কোথাও বীরহোড় গোষ্ঠী রয়েছে বলে আমার জানা নেই। এই সদ্য ওরা প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নিচ্ছে।” অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক দেবতোষ মণ্ডল বলেন, “জেলায় বীরহোড় সম্প্রদায়ের সদস্য মাত্র ২৭৮। সীতারামের খবর পেয়ে খুশি। এই প্রথম ওই সম্প্রদায়ের কেউ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করল। কলেজে পড়া ও হস্টেল খরচ লাগবে না। পড়া চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আর সাহায্য করা সম্ভব কি না দেখছি।” |
|
যোগাযোগ: ৮৫০৯৬০৪৮৫২। |
|
|
|
|
|