ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় চার জনের যাবজ্জীবন
ক ব্যবসায়ীকে গাড়ির ভিতরে বোমা মেরে, গুলি করে খুন করার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল চার জনের। হত্যাকাণ্ডটি হয়েছিল সাড়ে চার বছর আগে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি থানার রাধামাধবপুরে, বড়জোড়া-দুর্লভপুর রাস্তায়। বৃহস্পতিবার এই রায় দেন বাঁকুড়া আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (১) মহম্মদ আমজাদ হোসেন। চার জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছ’মাস কারাবাসের রায় দেন বিচারক। পুলিশ জানায়, সাজাপ্রাপ্ত হল--মেজিয়ার বানজোড়ার রাজু দুবে, ওই থানার সারামার মিলন তিওয়ারি এবং দুর্গাপুরের অশোক রায় ও রাজা বসু রায়।
সরকার পক্ষের আইনজীবী অমিয় চক্রবর্তী বলেন, “উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ধৃত প্রদ্যুৎ মণ্ডল ও ফজরুল রহমান বেকসুর খালাস পান। ৩১ জন সাক্ষী ও মোবাইল ফোনে আসামীদের কথপোকথনের ‘কল লিস্ট’-সহ বহু তথ্য আদালতে পেশ হয়। ওই চার জনের যাবজ্জীবন সাজা হলেও এই মামলায় অভিযুক্ত রাজু দুবের ভাই দুঃখহরণ দুবে, জামুড়িয়ার হিজলগোড়ার নবীন বাউরি ও উত্তরপ্রদেশের নেউরিয়া থানার করমোয়ার পাপ্পু যাদব ফেরার রয়েছে।” আসামী পক্ষের আইনজীবি মদন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মৃত ব্যবসায়ী অরবিন্দ বাজপেয়ীর বিরুদ্ধেও অনেক মামলা ছিল। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে যাব।” বাঁকুড়া পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “মামলাটি অনেক পুরনো। ফেরারদের সন্ধান চলছে।”
সাজাপ্রাপ্ত রাজা বসু রায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
২০০৭-এর ১৩ জানুয়ারি সকালে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছিল। বড়জোড়ার মালিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা বছর ৪৮-এর ব্যবসায়ী অরবিন্দ বাজপেয়ী গাড়িতে করে বাড়ি থেকে আমডাঙায় নিজের পেট্রোল পাম্পে যাচ্ছিলেন। রাধামাধবপুরের মনসাতলায় ‘স্পিড ব্রেকারে’ চালক ফেলু তিওয়ারি গাড়ির গতি কমান। সেই সময় দুই দুষ্কৃতীরা সামনে থেকে বোমা ছোড়ে। আরও তিন দুষ্কৃতী একটি মোটরবাইকে এসে পিছনের কাচ ভেঙে গাড়িতে বোমা ছোড়ে। তাতে দুজনেই গুরুতর জখম হন। চালকের পিছনের আসনে অরবিন্দবাবু বসেছিলেন। দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে এরপর রিভালভার থেকে কয়েক রাউণ্ড গুলি চালায়। বাঁ হাত, বুক ও পেটে গুলির লাগায় গাড়ির ভিতরেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। পরে দুষ্কৃতীরা দু’টি বাইকে চেপে চম্পট দেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের ওই গাড়িতেই অমরকানন ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা অরবিন্দবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। চালককে বাঁকুড়া মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। তাঁর জবানবন্দীর ভিত্তিতেই মামলা শুরু হয়।
ঘটনার দিনেই মৃতের আত্মীয়রা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, অরবিন্দবাবু ‘তোলা’ দিতে রাজি না হওয়ায় রাজু দুবে ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা ফোনে খুনের হুমকি দিয়েছিল। এমন কি খুনের ঘটনার পরেও অরবিন্দবাবুর ঘনিষ্ঠদের রাজু গোপন ডেরা থেকে খুনের হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই বছর ৫ ফেব্রুয়ারি দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার এলাকা থেকে অশোক রায় ও রাজা বসু রায়কে গ্রেফতার করে। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ছদ্মবেশে পার্কস্ট্রিটের একটি হোটেল থেকে রাজু ও বুদবুদের বাসিন্দা ফজরুল রহমানকে গ্রেফতার করে। একে একে গ্রেফতার হয় দুর্গাপুরের প্রদ্যুৎ মণ্ডল ও মিলন তিওয়ারি। ওই বছরই ২৪ মে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
পুলিশের একাংশ মনে করে, এই খুনের পিছনে এলাকার কয়লা মাফিয়াদের এলাকা দখলের লড়াই ছিল। এ দিন আদালত চত্বর থেকে যাওয়ার সময় আসামী অশোক রায় চিৎকার করে অভিযোগ করেন, “দুই কয়লা মাফিয়ার লড়াইয়ে আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমরা নিরপরাধ।” মৃতের ভাই মলয় বাজপেয়ীর দবি, “সাজা রেহাই পাওয়ার জন্য আসামীরা মিথ্যা কথা বলছেন। এলাকায় দাদা সমাজসেবী হিসেবে পরিচিতি ছিল। ওদের মৃত্যুদণ্ড দিলে খুশি হতাম।” এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “এই খুনের পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না সে বিষয়ে নতুন করে কোনও তথ্য এলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে।”
First Page Purulia Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.