মকবুল ফিদা হুসেনের মৃত্যুতে শোকাহত বলিউড। টুইটারে শোকবার্তা জানিয়েছেন অনেকেই। অমিতাভ বচ্চনের মনে পড়ছে হুসেন কী ভাবে তাঁর জন্য এঁকেছিলেন বিশেষ ছবি। অমিতাভের টুইট: “হাসপাতালে যে কবিতা লিখেছিলাম, সেটাই উনি ক্যানভাসে অনুবাদ করেন। দুর্লভ মুহূর্ত। ওঁর কাছ থেকে পাওয়া সেরা উপহার। ‘কুলি’ করার সময় দুর্ঘটনার পরে হাসপাতালে ছবিটা দিয়েছিলেন, হনুমান জড়িবুটি নিয়ে উড়ে যাচ্ছে।’ এম এফ-এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু শাবানা আজমি বলেছেন, “অসামান্য শিল্পী। একশো বছরে এক বারই এমন শিল্পীর জন্ম হয়। শেষ বার ওঁর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা হয়েছিল। ওঁকে ভারতে ফিরিয়ে আনব বলেছিলাম। শুনে খুশি হন।” |
‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’ দেখে প্রথম মুগ্ধ হন মাধুরী দীক্ষিতে। ২০০০ সালে মাধুরীকে নিয়ে ছবি করলেন ‘গজ গামিনী’। সম্প্রতি মাধুরীকে নিয়ে কমেডি ছবি বানানোর ইচ্ছেও প্রকাশ করেছিলেন হুসেন। হুসেনের মৃত্যুসংবাদ শুনে মাধুরী বলেছেন, ‘‘আমার জীবনের অন্যতম দুঃখের দিন।” হুসেনকে দেশছাড়া হতে হল যখন, তখন কি শিল্পীদের সরব হওয়া উচিত ছিল? মাধুরীর উত্তর, ‘‘সংগঠিত ভাবে কিছু একটা করা দরকার ছিল। হয়নি।” কিন্তু মাধুরী নিশ্চিত, হুসেন ‘মিস’ করতেন দেশকে। ‘‘সরাসরি না বললেও কথাবার্তায় বুঝতে পারতাম। সব সময় ভারতের কথা বলতেন।” মাধুরী বলেন, “আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে যে, ভারতে জন্মেও ভারতে মরতে পারলেন না হুসেন।” |
যতীন দাস, অঞ্জলি এলা মেনন থেকে শুরু করে উঠতি কমবয়সী শিল্পী কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না খবরটা। ১৯৫০-এর দশক থেকে মকবুলকে চিনতেন যতীন দাস। খালি পায়ের বোহেমিয়ান সেই শিল্পী তাঁর কাছের বন্ধু। যতীনের কথায়, “ভারতের মানুষের কাছে দুঃখের দিন। দেশে ফেরার স্বপ্নপূরণ হয়নি হুসেনের।” অঞ্জলির প্রতিক্রিয়া: “৫৫ বছর ধরে ওঁকে চিনতাম। কত ভাবে যে উনি আমার জীবন ছুঁয়ে গিয়েছেন। ওঁর ‘নির্বাসনে’ থাকাকালীন আমরা বন্ধুরা নিয়ম করে বছরে এক বার দেখা করতে যেতাম ওঁর সঙ্গে।” |
খুদাবুদ্দিন শরিফদ্দিনের চোখের জল বাঁধ মানছে না। হুসেনের তুতো ভাই খুদাবুদ্দিন। বয়স এখন ৮৬। মহারাষ্ট্রের পান্ধারপুর গ্রামের বাসিন্দা। শিল্পীর জন্মস্থানও এই গ্রাম। ১৯৯৫ সালে শেষ বার এই গ্রামে এসে ছিলেন শিল্পী। খুব অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারান। তাই খুদাবুদ্দিনের কাছে জানতে চাইতেন তাঁরা কেমন দেখতে ছিলেন, তাঁদের কবর কোথায় ইত্যাদি। ’৯৫ সালে তাঁকে দেখতে আসেন গ্রামের দশ হাজার লোক। মুগ্ধ চোখে তাঁরা দেখেন, মাত্র ১০ মিনিটে একটা ষাঁড়ের গায়ে কয়েকটা আঁচড় বুলিয়ে এক জন এঁকে ফেললেন সুন্দরী মহিলার ছবি। |
শিল্পী চলে গিয়েছেন। রয়ে গিয়েছে তাঁর প্রিয় লাল ফেরারি। দুবাইয়ে বেশির ভাগ সময় যেটায় চেপে ঘুরতে দেখা যেত হুসেনকে। দুবাই শহরের রাঘব বললেন, “সিনেমা হল থেকে দেখতাম বেরিয়ে আসছেন সৌম্যদর্শন পুরুষ। অনেক হিন্দি ছবি দেখতেন উনি।” ২০০৭ সালে নভেম্বরে এই শহরেই তো ঘটেছিল সেই বিখ্যাত ঘটনা। মাধুরী দীক্ষিতের ‘কামব্যাক’ ছবি ‘আ যা নাচ লে’ দেখার জন্য গোটা হলের ১৯৪টি আসন বুক করেন একা হুসেন। টিকিটে সই করে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের ছবি দেখার আমন্ত্রণ জানান। |
এই বছর মে মাসে তিনি পা রাখলেন মহাকরণে। আর এই মে মাসেই দুর্গারূপে হুসেন তাঁর ছবি আঁকেন। ছবিতে ছিল শান্তির পায়রা এবং রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে ইন্দিরা গাঁধীকেও দুর্গারূপে এঁকেছেন হুসেন। শিল্পীর প্রয়াণে মমতার প্রতিক্রিয়া: “অন্তরের শ্রদ্ধা জানাই। ওঁর শিল্প কারও পছন্দ হতে পারে, না-ও পারে, কিন্তু তিনি রং-তুলিতে সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।” |
হুসেনের মতো তাঁকেও দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে বহু দিন। তাই শিল্পী হুসেনের যন্ত্রণা অনুভব করে দেশছাড়া লেখিকা তসলিমা নাসরিনের টুইট: ‘জীবনের শেষ ক’টা দিন নিজের দেশে কাটাতে পারেননি হুসেন। কাঁদো প্রিয় দেশ, কাঁদো।” |
|
|