|
|
|
|
জমি নীতি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে দূরত্ব কমলো মমতার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্যের জমি-নীতির আদলেই জাতীয় জমি-নীতি চান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৮৯৪ সালের জমি আইন সংশোধন করে যে জাতীয় জমি নীতি কেন্দ্র তৈরি করেছে, সে ব্যাপারে মমতার মতামত জানতে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। মূলত মমতার আপত্তিতেই এখনও এই শতাব্দী প্রাচীন আইনের সংশোধন করে ওঠা যায়নি। শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের কোনও রকম ভূমিকা থাকুক চান না মমতা। গত ১৬ মে কেন্দ্র যে নতুন খসড়া তৈরি করেছে, তাতে সেই দাবি অনেকাংশেই মেনে নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে রাজ্যগুলি নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।
মহাকরণ সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতাকে পাঠানো প্রণববাবুর চিঠি এ দিনই এসে পৌঁছেছে। দু’এক দিনের মধ্যেই তার জবাব পাঠিয়ে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের জন্য যে পৃথক জমি নীতি তৈরি হচ্ছে, তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই জাতীয় জমি নীতির ক্ষেত্রে নিজের মতামত পাঠাবেন মমতা।
ক্ষমতায় আসার তিন সপ্তাহের মধ্যেই রাজ্যের জমি নীতি তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ জন্য দুই সদস্যের কমিটিও গঠন করেছেন তিনি।
বিভিন্ন স্তরে আলোচনার পরে আগামী ১৫ জুন জমি-নীতির সুপারিশ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা কমিটির। তবে তার রূপরেখা কী হতে চলেছে, সেই ইঙ্গিত তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহার এবং ভোট প্রচারেই রয়েছে।
জাতীয় জমি নীতির ক্ষেত্রেও মমতা প্রণববাবুকে বলবেন, প্রথমত, কারও কাছ থেকে জোর করে জমি নেওয়া চলবে না। দ্বিতীয়ত, শিল্পের জন্য কৃষি জমি নেওয়া যাবে না। তৃতীয়ত, রাজ্য যদি নিজের প্রয়োজনে জমি নেয়, তা হলে চলতি বাজার দরে জমির দাম দিতে হবে। সেই সঙ্গে জমিহারাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ‘অ্যানুইটি’ দিতে হবে। এ ছাড়াও জমির মালিক পরিবারের এক জনের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।
কেন্দ্রর তৈরি খসড়ার সঙ্গে অবশ্য মমতার প্রস্তাবের বিশেষ ফারাক নেই। জাতীয় নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামো ক্ষেত্র ছাড়া মালিকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জমি নেওয়ার পক্ষপাতী নয় কেন্দ্র। বহু ফসলি জমিও যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার কথাই বলা হচ্ছে। যদি একান্তই কৃষিজমি নিতে হয়, তা হলে কেন্দ্রের প্রস্তাব হল, সমপরিমাণ পতিত জমি কৃষিযোগ্য করে তুলতে হবে। আগে শুধু দুর্বল শ্রেণির জন্য ‘অ্যানুইটি’র কথা বলা হলেও নতুন খসড়ায় সকলের জন্যই এই সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে বাজার দরে জমি কেনার কথাও।
জমি আইনের সংশোধন আটকে থাকায় গোটা দেশেই জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছিল। উত্তরপ্রদেশে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কৃষকদের ‘হিংসাত্মক’ আন্দোলনের পরে নতুন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের দীর্ঘসূত্রিতাকেই দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ শরিক মমতাকে উপেক্ষা করে একতরফা ভাবে আইন করাও সম্ভব হচ্ছিল না মনমোহন সিংহের সরকারের পক্ষে। এখন কেন্দ্রের সুপারিশের সঙ্গে মমতার অবস্থান অনেকটাই মিলে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে জট কাটার সম্ভাবনা জোরালো হল বলে মনে করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|