|
|
|
|
ঠাকরেরা এখন বলছেন, হুসেন দেশের সম্পদ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
লন্ডনে মকবুল ফিদা হুসেনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে অস্বস্তি এড়াতে পারছে না কংগ্রেস তথা সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু মৃত্যুর পরে তাঁর সমালোচকরা এখন আর বিতর্ক জিইয়ে রাখতে রাজি নন।
শিবসেনা ও সঙ্ঘ পরিবারের মারমুখী বিক্ষোভ ও একাধিক মামলার প্রেক্ষাপটে গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশে কার্যত স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন হুসেন। গত বছর কাতারের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে দুবাইয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাসের কথা ঘোষণা করেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে, পাঁচ বছরেও কেন তাঁকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে দেশে ফেরাতে পারল না ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ইউপিএ সরকার? জবাবে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অম্বিকা সোনি অবশ্য আজ বলেন, “এটা ঠিকই যে কিছু বিষয় নিয়ে সরকারের ওপর তিনি হতাশ ছিলেন। তবে তাঁকে দেশে ফেরানোর জন্য সরকার চেষ্টা করেনি তা নয়।”
হিন্দি সিনেমার পোস্টার-আঁকিয়ে থেকে দেশের শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের এক জন হয়ে ওঠার এই যাত্রায় হুসেনের গোটা পথটিই ছিল বিতর্কে ভরা। ৭০ ও ৮০-র দশকে তাঁর আঁকা কিছু হিন্দু দেবীর নগ্নতা নিয়ে বিতর্ক উঠলেও তা তেমন দানা বাঁধেনি। তাঁর ছবির ‘ভারতমাতা’ কেন বিবসনা, নব্বইয়ের দশকে প্রথম তা নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করে শিবসেনা ও সঙ্ঘ পরিবার।
১৯৯৮-এ হুসেনের বাড়িতে হামলা চালায় হিন্দুত্ববাদীরা। বেশ কিছু ছবি নষ্ট করা হয়। তাঁর ছবি মানুষকে আহত করেছে, এমন অভিযোগ করে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়। কিন্তু প্রথমে দিল্লি হাইকোর্ট, পরে সুপ্রিম কোর্ট এই সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা খারিজ করে দেয়। বিচারপতিরা বলেন, হুসেনের ছবিগুলি কোনও ভাবেই অশ্লীল নয়। প্রাচীন মন্দিরগুলির গায়ে এমন অনেক মূর্তি রয়েছে। এর পরেও হিন্দুত্ববাদীদের ‘জঙ্গি’ আন্দোলনে ছেদ পড়েনি। প্রাণনাশের হুমকিও পেতে থাকেন প্রবীণ এই শিল্পী। পুলিশকে জানিয়েও তা বন্ধ
হয় না।
২০০৬-এ হামলার হুমকি পেয়ে হুসেনের ছবির প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয় লন্ডনের দ্য এশিয়া হাউস গ্যালারি। হামলার ভয়ে পর পর তিন বছর দিল্লির প্রগতি ময়দানে ‘ইন্ডিয়ান আর্ট সামিট’-এ হুসেনের ছবির প্রদর্শন বন্ধ রাখা হয়। এর প্রতিবাদে ২০০৮-এ সফদর হাসমি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট (সহমত) শুধু হুসেনের ছবি নিয়ে একটি প্রদর্শনী শুরু করে। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবারের কর্মীরা হামলা চালিয়ে তা তছনছ করে দেয়। শুধু চিত্রকর্ম নয়, বিতর্ক দেখা দেয় হুসেনের পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘মীনাক্ষী’ নিয়েও। কয়েকটি মুসলিম সংগঠনের আপত্তিতে হল মালিকরা ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ
করে দেন।
তবে মৃত্যুর পরে সঙ্ঘাত আর জিইয়ে রাখতে চান না হুসেনের বিরুদ্ধে নিরন্তর জিগির তুলে যাওয়া শিবসেনা-প্রধান বালসাহেব ঠাকরে। আজ তিনি বলেন, “হুসেন মহান শিল্পী। হিন্দুদের দেবদেবীর কয়েকটি চিত্র ছাড়া তাঁর অন্য শিল্পকর্মের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না।” আর এক সমালোচক এমএনএস নেতা রাজ ঠাকরে বলেন, “দেশের সম্পদ ছিলেন হুসেন। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সব বিতর্কের ইতি ঘটল। পরিবার চাইলে দেশের মাটিতেই তাঁর শেষকৃত্য করুন, আমরা বাধা দেব না।” |
|
|
|
|
|