দোকান চালিয়েও উজ্জ্বল অভিজিৎ
শম শ্রেণিতে ওঠার সময়ে বাবা মারা গিয়েছিলেন। ফলে মাধ্যমিকের ফল আশানুরূপ হয়নি। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলে সেরা ফল করতে পেরে খুশি হয়েছিলেন খয়রাশোলের লোকপুর গ্রামের অভিজিৎ দত্ত। সেই খুশি ছিল কয়েক মুহূর্তের জন্য। এর পর থেকে অভিজিৎ এবং তাঁর পরিবারের একটাই চিন্তা, কী ভাবে চালাবেন কলেজে পড়ার খরচ? কারণ কর্তার মৃত্যুর পরে ক্রমাগত অর্থ সঙ্কট বেড়েই চলেছে একদা স্বচ্ছল পরিবারটির। পরিবার বলতে অভিজিতের দাদা প্রসেনজিৎ দত্ত এবং মা কাবেরীদেবী।
বরাবর পড়াশোনায় ভাল অভিজিৎ। এ বার লোকপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলা বিভাগে ৪৪১ নম্বর পেয়েছেন। ইচ্ছে ইংরেজি নিয়ে বাইরের কোনও কলেজে পড়া। কিন্তু সেটা করতে গেলে ভাতের হাঁড়ি চাপানো যাবে না বলে আশঙ্কা পরিবারটির। কেন? বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার আগে রীতিমতো একটি ভাল বাড়ি তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন অভিজিতের বাবা বিপত্তারণ দত্ত। সঙ্গে ছিল একটি লেপ, বালিস তৈরির দোকান।


নিজস্ব চিত্র।
একটি ভাড়া খাটানোর ট্রেকারও ছিল। ছিল একটি বিড়ি তৈরির কারখানা। কাবেরীদেবী বলেন, “স্বামীর মৃত্যুর পরে বাড়ি এবং বাড়ি সংলগ্ন লেপ, বালিসের দোকান আছে। বাকি সব শেষ। দোকানটা দেখে অভিজিৎ। খুব ভাল ভাবে না চললেও দুবেলা দুমুঠো খাবার জুটে যায়। কিন্তু অভিজিৎ বাইরে পড়তে চলে গেলে কার্যত দোকানটা বন্ধ করে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে পড়ার খরচটা চলবে কী করে বা কী করে সংসার চলবে!” তিনি জানান, গ্রামেরই এক জনের কাছে অভিজিৎ শুধু ইংরেজিতে টিউশন নিয়েছিলেন। বলতে বলে বিনা পয়সায়। স্বভাবতই প্রশ্নে ওঠে তা হলে প্রসেনজিৎ কী করেন? অভিজিৎ জানান, তাঁর দাদা ইতিহাস নিয়ে খয়রাশোল কলেজে
পড়েন। একটি বেসরকারি আমানতকারি সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। কাজ করে যে টুকু পান, তা দিয়ে নিজের পড়ার খরচ চালান। অভিজিতের কথায়, “আমি যদি ইংরেজি নিয়ে সিউড়ি বা অন্য কোথাও পড়ি, তা হলে বাড়ি থেকে রোজ যাওয়া-আসা করে পড়া সম্ভব হবে না। আর খয়রাশোলে পড়লে কোথাও টিউশন পড়তে সিউড়িতে যেতে হবে। এ সব খরচ কোথা থেকে আসবে বুঝতে পারছি না।” পরিবারের এমন অবস্থা তা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। তাঁর মা কাবেরীদেবীর কথায়, “আমাদের বাড়িটা ‘কাল’ হয়েছে। লোকে বিশ্বাস করতে চান না আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। কোনও সরকারি সাহায্য পাই না। এর পরে ছেলেরা পড়তে চেয়ে না পারলে মায়ের মনের অবস্থা কেমন হয়, তা কী করে বলব!” তিনি বলেন, “নিজে দোকানে বসলে হয়তো খাওয়ার খরচ চলে আসবে। কিন্তু পড়াশোনার খরচ!” লোকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক শিবদাস গড়াই বলেন, “ছেলেটা ভাল। এর পরেও যদি সে উচ্চশিক্ষা না পায়, সেটা খুব দুঃখের। বিষয়টি নিয়ে স্কুলে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করব। যদি কিছু করা যায়।”
যোগাযোগ: ৯৬৪৭৯৬৮৭৫৩।
Previous Story Purulia Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.