পুলিশের খাতায় ‘ফেরার’ হয়েও সভামঞ্চে উঠে যিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতে লক্ষাধিক টাকার চেক তুলে দিয়েছিলেন, রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হতেই সেই কয়লা মাফিয়া কালে সিংহকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
বেশ কিছু ধরেই কালে-র পিছু ধাওয়া করছিল পুলিশ। বুধবার গভীর রাতে আসানসোলের নিঘায় নিজের ধাবাতেই ধরা পড়ে যান যশবন্ত সিংহ উপ্পল ওরফে কালে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর জানান, তাঁর বিরুদ্ধে জামুড়িয়া, আসানসোল উত্তর ও দক্ষিণ থানায় কয়লা পাচার সংক্রান্ত তিনটি অভিযোগ ছিল। বৃহস্পতিবার আসানসোল এসিজেএম আদালতে তোলা হলে কালেকে ১৪ দিন জেলা হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যে তিন অভিযোগে কালেকে ধরা হয়েছে, তার একটি দায়ের হয়েছিল গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর আসানসোল উত্তরের বনবিষ্ণুপুর মৌজায় অবৈধ খাদানে পুলিশি অভিযানের পরেই। কালে ধরা পড়েননি, আদালত থেকে জামিনও নেননি। অথচ এর এক মাস পরেই, ১০ অক্টোবর খণ্ডঘোষে মঞ্চে উঠে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতে চেক তুলে দেন তিনি। যদিও সভায় হাজির পুলিশকর্তা ও সিপিএম নেতারা দাবি করেছিলেন, তাঁরা কেউই কালেকে চিনতে পারেননি। |
গত ২ জুন আসানসোলে লোহা মাফিয়া রামলক্ষ্মণ যাদব খুন হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, আসানসোল-রানিগঞ্জ এলাকার সমস্ত মাফিয়াকে গ্রেফতার করা হবে। আসানসোল থেকে নির্বাচিত তৃণমূল নেতা তথা আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “যে কালে সিংহ আগের মুখ্যমন্ত্রীর হাতে চেক তুলে দিয়েছিলেন, নতুন সরকারের আমলে তাঁকেও জেলে ঢুকতে হচ্ছে। মানুষ তো এমন পরিবর্তনই চেয়েছিলেন।”
তবে পুলিশ সুপারের দাবি, কালে সিংহকে গ্রেফতার করার উদ্দেশ্যে আসানসোল মহকুমার বিভিন্ন থানার ওসিদের নিয়ে বিশেষ দল গড়া হয়েছিল। কিন্তু ভোটের সময়ে তিনি কলকাতার ভবানীপুরে গিয়ে গা-ঢাকা দেওয়ায় ধরা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি দিল্লি চলে যান। কিন্তু সেখানেও হানা দেয় জেলা পুলিশ। কালে পালিয়ে আশ্রয় নেন অমৃতসরের জাওয়াল থানার পৈনিতে নিজের বাড়িতে। পুলিশের বিশেষ দল সেখানেও তাঁকে ধাওয়া করে। কিন্তু আগাম খবর পেয়ে কালে ফের সেখান থেকে পালিয়ে দিল্লি হয়ে কলকাতায় চলে আসেন।
বুধবার গভীর রাতে দমদমের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিঘায় তাঁর ধাবার দিকে রওনা দেন কালে। কিন্তু পুলিশ যে তাঁকে অনুসরণ করছে, তা সম্ভবত তিনি আঁচ করতে পারেননি। ধাবায় পৌঁছোনোর সামান্য পরেই জামুড়িয়া থানার সেখানে পুলিশ হানা দেয়। ধরা পড়ে গিয়েছেন বুঝে কালে কিন্তু বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেননি। বরং ঈষৎ ক্লান্ত গলায় এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টরকে বলেন, ‘কানুনকে ফেরে মে আনা হি থা। লেকিন দের হো গ্যয়ি।’ (আইনের হাতে পড়তেই হত। কিন্তু দেরি হয়ে গেল।)। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছর বিশেক আগে পঞ্জাব থেকে আসানসোলে আসেন কালে সিংহ। প্রথম দিকে এলাকায় পরিচিতি ছিল লরিচালক হিসেবে। ক্রমে পরিবহণ ব্যবসায় নামেন, পরে পরিচিতদের হাত ধরে অবৈধ কয়লার কারবারে। সিপিএমের কিছু নেতার মদতে জামুড়িয়ায় অবৈধ কয়লা খাদান দিয়ে তাঁর হাতেখড়ি। পরে আসানসোল উত্তর ও দক্ষিণ থানা, হিরাপুর, কুলটি ও সালানপুরেও তাঁর কারবার ছড়িয়ে পড়ে। |