|
|
|
|
ধৃত ১, অভিযুক্ত নার্সিংহোমও |
যমজ শিশুকন্যা মিলল মাঠে, মৃত্যু এক জনের |
নিজস্ব সংবাদদাতা ²তালড্যাংরা |
দুপুর ১২টা নাগাদ নার্সিংহোমে জন্মেছিল যমজ শিশুকন্যা। আড়াই ঘণ্টা পরে নার্সিংহোম থেকে পাঁচশো মিটার দূরে একটি ইটভাটার কাছে ফাঁকা মাঠে যখন তাদের কুড়িয়ে পেলেন এক মহিলা, তত ক্ষণে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অন্যটিকে ওই মহিলাই হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার তালড্যাংরায়।
ঠিক কী ভাবে শিশুকন্যা দু’টি তালড্যাংরার ওই নার্সিংহোম থেকে বাইরে গেল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে যথেষ্ট। কন্যা সন্তান বলেই শিশু দু’টিকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল কিনা, সেই দিকটিও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙুল উঠেছে। খোদ তালড্যাংরার বিডিও সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশের কাছে ওই নার্সিংহোমের মালিক তথা চিকিৎসক (যিনি ওই প্রসূতির চিকিৎসা করেছিলেন) শিবপ্রসাদ দত্ত এবং ওই প্রসূতির জামাইবাবু আনন্দ লোহারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। শিবপ্রসাদবাবু অবশ্য প্রসূতির পরিবারকেই এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন। বিডিও-র অভিযোগ পেয়েই খিরাইশোল গ্রামের বাসিন্দা আনন্দবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার ধৃতকে খাতড়া আদালতে হাজির করানো হলে তাঁর ১৪ দিন জেলহাজত হয়।
এসডিপিও (খাতড়া) অলোক রাজোরিয়া বলেন, “ওই নাসির্ংহোম থেকে সদ্যোজাত যমজ শিশুকন্যাকে কী ভাবে বাইরে ফেলে দেওয়া হল, তা রহস্যজনক। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নার্সিংহোম মালিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
পুলিশ ও নার্সিহোম সূত্রের খবর, তালড্যাংরার মাতলা গ্রামের বাসিন্দা, দিনমজুর কৃষ্ণ লোহারের স্ত্রী মল্লিকাদেবী সোমবার ওই যমজ শিশুকন্যার জন্ম দেন। মঙ্গলবার ফোনে কৃষ্ণবাবু বলেন, “সোমবার সকালে স্ত্রীকে নার্সিংহোমে ভর্তি করি। আমি ঘটনার সময় ছিলাম না। শুনেছি যমজ বাচ্চা হয়েছিল। মৃত বলে ফেলেও দেওয়া হয়েছিল।” তালড্যাংরার বিডিও সুমন দাশগুপ্ত বলেন, “ওই দিন দুপুরে নার্সিংহোম থেকে পাঁচশো মিটার দূরে ইটভাটার কাছে মাঠে ওই দুই শিশুকে পড়ে থাকতে দেখেন কল্পনা রায় নামে স্থানীয় বাসিন্দা। জীবিত শিশুটিকে তালড্যাংরা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান কল্পনাদেবী। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক গৌতম মণ্ডল শিশুটির চিকিৎসা করেন। অবস্থা গুরুতর বুঝে শিশুটিকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থাও করেন।” বিডিও জানান, বিষয়টি শুনে তিনি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। একটি শিশু তখনও সেখানে পড়েছিল। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক পরীক্ষা করে শিশুটিকে মৃত বলে জানিয়ে দেন।
সুমনবাবুর অভিযোগ, “এর পরেই চিকিৎসক শিবপ্রসাদ দত্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর কথাবার্তায় অসংলগ্নতা ধরা পড়ে। সন্দেহ হওয়ায় থানায় অভিযোগ দায়ের করি।” ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, “ওই প্রসূতির জামাইবাবু আনন্দ লোহার আমাদের জানিয়েছেন, তাঁকে শিবপ্রসাদবাবুই শিশু দু’টিকে ‘মৃত’ জানিয়ে বাইরে ফেলে দিতে বলেছিলেন।” শিবপ্রসাদবাবুর অবশ্য দাবি, “প্রসবের পরে শিশুদের মায়ের পাশেই রেখেছিলাম। দু’টি শিশুর মধ্যে এক জন স্বাভাবিক নয় বলেও তাঁদের জানাই। অন্য জনের শারীরিক অবস্থাও ভাল ছিল না। তাই তাদের দ্রুত অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। ওঁরা শোনেননি। এর পরে আমি নার্সিংহোম ছেড়ে বাড়ি চলে যাই।”
তাঁর আরও দাবি, শিশু দু’টিকে ‘মৃত’ বলে তাদের ফেলে দেওয়ার কোনও নির্দেশ তিনি আনন্দবাবুকে দেননি। কী ভাবে শিশু দু’টি বাইরে পৌঁছল, তা তিনি জানেন না। তাঁর বক্তব্য, “এর জন্য প্রসূতির পরিবারের লোকেরা দায়ী।” বাঁকুড়া জেলা ডেপুটি সিএমওএইচ (১) বরুণ সাঁতরা বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
 |
|
|