|
|
|
|
বিক্ষোভ কুড়মুনে |
ডাক্তারবাবুকে ছাড়তে নারাজ গ্রাম |
নিজস্ব সংবাদদাতা ² বর্ধমান |
চিকিৎসকেরা সময়ে আসেন কি না, ঠিক মতো কাজ করেন কি না দেখতে একের পর এক সরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। গাফিলতি দেখে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন।
এক চিকিৎসককে নিজেদের এলাকায় ধরে রাখতে চেয়ে সরাসরি সেই মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই গণদরখাস্ত পাঠিয়েছেন বর্ধমানের কুড়মুন ও আশপাশের বেশ কিছু গ্রামের মানুষ। তিনি এমনই এক চিকিৎসক, যিনি কাজের সময়ে ঘড়ি দেখেন না, প্রয়োজনে নিজের গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে রোগীকে ওষুধ কিনে দেন।
কুড়মুন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওই চিকিৎসকের নাম বাসুদেব রায়চৌধুরী। ১৯৮৮ সালে কেতুগ্রাম ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজে যোগ দেওয়ার পরে কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও
হাসপাতাল ঘুরে ২০০৬ সালে তিনি কুড়মুনে আসেন। সেখানে শূন্যস্থান পূরণ করতে তাঁকে সাময়িক ভাবে পাঠানো হয়েছিল। গত ১ জুন রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন নির্দেশ দিয়েছে, সব চিকিৎসককে সাময়িক দায়িত্ব ছেড়ে নিজের জায়গায় ফিরে যেতে হবে। বাসুদেববাবুকেও তাই ফিরতে হবে কেতুগ্রামে। কিন্তু কুড়মুনের মানুষ তাঁকে ছাড়তে নারাজ।
জনদরদী চিকিৎসককে নিজেদের এলাকায় ধরে রাখতে চাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। ১৯৯৪ সালে বীরভূমে তারাপীঠের কাছে তারাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক অভিজিৎ রায়চৌধুরীর বদলি রুখতে স্থানীয় বাসিন্দারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন যে তাঁদের সামলাতে পুলিশকে গুলি চালাতে হয়েছিল। তাতে তিন জন ঘটনাস্থলেই মারা যান, জখম হন ২১ জন। |
 |
চিকিৎসক বাসুদেব রায়চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র। |
কুড়মুনে তেমন ভয়ঙ্কর কিছু না ঘটলেও সোমবার স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘেরাও করে এলাকাবাসী বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
কুড়মুনের বাসিন্দা শান্তি রায়ের কথায়, “বাসুদেববাবুর বাড়ি বর্ধমান শহরের বড় নীলপুরে। কিন্তু জটিল রোগী ভর্তি হলে উনি রাতে এখানেই থেকে যান। ওঁর মতো মানুষ হয় না।” স্থানীয় বন্ডুল গ্রামের মিহিরকান্তি হাজরার বলেন, “২০টি গ্রামের মানুষ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। সকলে ওঁকে ভালবাসেন। দরকারে পকেট থেকে টাকা দিয়ে উনি
রোগীকে ওষুধ কিনে দেন। ওঁকে আমরা ছাড়তে পারব না।” বামুনপাড়ার সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আমাদের কাছে উনি সাক্ষাৎ ভগবান। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বলে এসেছি, যেতে হলে আপনাকে আমাদের বুকের উপর দিয়ে যেতে হবে।”
বাসুদেববাবু চলে গেলে যে কুড়মুনের স্বাস্থ্যকেন্দ্র অচল হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। সেখানে তিনি ছাড়াও তিন চিকিৎসক আছেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার অরূপ শেঠের কথায়, “সহকর্মী হিসেবে ওঁকে নিয়ে আমি গর্বিত। যে আন্তরিকতা ও একাগ্রতার সঙ্গে উনি চিকিৎসা করেন, তা আমিও অনুকরণ করি। তবে সরকারি নির্দেশ তো
মানতেই হবে।” বাসুদেববাবুও বলেন, “ওঁরা আমায় ভালবাসেন, শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু আমি তো সরকারি কর্মচারী। তাই কেতুগ্রামে ফিরতেই হবে।” তাঁর মতে, কুড়মুনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক, সেবিকা, স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্তত ১৫টি শয্যা বাড়ানো প্রয়োজন। সব জরুরি ওষুধের নিয়মিত সরবরাহও দরকার। সার্বিক পরিকাঠামো ঠিক হলে কোনও এক জন চিকিৎসকের জন্য মানুষ হয়তো এত হা-হুতাশ করবেন না।
সে সব আদৌ হবে কি না, কেউ জানে না। এই অবস্থায় এলাকাবাসী চাইছেন, ডাক্তারবাবুকে যদি একান্ত যেতেই হয়, তা হলেও যেন তিনি দ্রুত ফিরে আসেন। নাড়াগোহালিয়ার শেখ সমীর বলেন, “প্রায় সাড়ে তিনশো মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো স্মারকলিপিতে সই করে এই দাবিই জানিয়েছেন।”
এ বার বিবেচনা মুখ্যমন্ত্রীর। |
|
|
 |
|
|