মমতা দেখুন
প্রায় অনাবৃত অবস্থায় ওটিতে
নিয়ে যাওয়া হয় রোগীদের
মানসিক হাসপাতালে রোগীদের অনাবৃত করে রাখার খবর এখন আর অজানা নয়। কিন্তু খাস কলকাতায় সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীদের যে ভাবে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়, তা পাভলভের ওই দৃশ্যের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। অবস্থাটি কী, তা বিশদে জানানোর আগে এ বিষয়ে এক চিকিৎসকের মন্তব্যই হয়তো অনেক কথা বলে দেয়। তিনি বলেন, “মূল অস্ত্রোপচার শুরু হওয়ার আগে অনেক সময়েই ওটি-র বড় আলোটি নিভিয়ে রাখতে বলি নার্সদের। যতক্ষণ রোগীর সংজ্ঞা আছে, ততক্ষণ নিজের ওই বেআব্রু অবস্থাটা তাঁকে যেন হজম করতে না হয়। অল্পবয়সী রোগীদের কাছে ব্যাপারটা একটা ট্রমার মতো।”
কেন এ কথা বলেছেন তিনি? তা বোঝানোর জন্য যে কোনও এক দিনের দৃশ্য বর্ণনাই হয়তো যথেষ্ট। ওয়ার্ড থেকে অপারেশন থিয়েটারের দিকে এগোচ্ছেন রোগী। পরনে শুধু একটি হাঁটু ঝুল গাউন। তার পিছন দিক পুরো খোলা। অনাবৃত পিঠ, কোমর দেখা যাচ্ছে। মহিলা রোগী হলে নীচে একটা সায়া পরা। আর পুরুষ রোগী হলে সায়ার পরিবর্তে লুঙ্গি। ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যাওয়ার পরে হুকুম হয়, “নীচের পোশাক খুলে ফেলুন।” কিন্তু ঊর্ধ্বাঙ্গের পোশাকের পিছন দিক তো পুরো খোলা। এ বারে নীচেরটিও খুলে ফেললে লোকসমক্ষে যাবেন কী ভাবে? চারপাশে রোগী, রোগীদের পরিজন, হাসপাতাল কর্মী-সহ অজস্র লোকজন। ওয়ার্ড বয়রা জানিয়ে দেন, “ওতে কিছু হবে না। পেশেন্টদের নিয়ে কেউ কিছু ভাবে না।” দু’টো হাত শরীরের পিছনের দিকে নিয়ে গিয়ে প্রাণপণে গাউনের পিছন দিকটি ধরে রেখে হাঁটার চেষ্টা করেন রোগীরা। তাতে অবশ্য কোনও লাভ হয় না। আক্ষরিক অর্থেই পিছনের অংশ অনাবৃত রেখে, সমস্ত লজ্জা বিসর্জন দিয়ে ওটিতে ঢুকতে হয় তাঁদের।
অস্ত্রোপচারের পরে বিড়ম্বনার আরও এক চিত্র। সংজ্ঞাহীন রোগী স্ট্রেচারে শুয়ে রয়েছেন। উপরে গাউনটি আলতো ভাবে জড়ানো। হাঁটুর নীচ থেকে বাকি অংশ খোলা। ওই অংশে চাদর চাপা দেওয়ার কথা। কিন্তু চাদর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় না। তাই সায়া বা লুঙ্গিটাই চাপা দেওয়া থাকে। ওই অবস্থায় ওটি থেকে বেরিয়ে বেশ খানিকটা পথ অতিক্রম করে ওয়ার্ডে পৌঁছন রোগী।
কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গড়ে প্রতিদিন ২০টি অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু চাদরের সংখ্যা কমতে কমতে এখন তলানিতে। আর গাউনগুলি বহু ব্যবহারে ছিঁড়ে গিয়েছে। প্রায় কোনটিরই পিছনে ফিতে নেই। সরঞ্জাম খারাপ হলে সেগুলি সারাতে আবেদন করা হয়, কিন্তু রোগীর পোশাক ছিঁড়লে তা বদলানোর যেন দায় নেই কারওরই। বিভাগের এক নার্স বলেন, “আমরা দু’এক জন ছাড়া কেউ এ নিয়ে ভাবেন না। সকলেই ধরে নেন, অসুস্থ মানুষের নিজস্ব কোনও বক্তব্য থাকতে পারে না। আর সরকারি হাসপাতালে তো নয়ই। সেখানে যেন চিকিৎসা করেই তাকে ধন্য করে দেওয়া হচ্ছে।”
দিন কয়েক আগে চিকিৎসকদের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন বছর ত্রিশের এক রোগিণী। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর অস্ত্রোপচার শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার পরে তাঁর কান্না আর থামতেই চায় না। অস্ত্রোপচারের ঠিক আগেই এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরাও ঘাবড়ে গিয়েছেন। কী ব্যাপার? পরনের ওটি গাউনের পিছন দিকটা দু’হাতে চেপে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে করতে ওই তরুণী কেঁদে বলেন, “পেশেন্ট বলে কি আমার কোনও সম্মান নেই? কোনও লজ্জাবোধ নেই? এ ভাবে বেআব্রু হয়ে থাকতে হবে? এটাই কি আপনাদের রেওয়াজ?”
হৃদ্রোগ চিকিৎসায় এটি রাজ্যের অন্যতম সেরা কেন্দ্র। ঝকঝকে অপারেশন থিয়েটার। দক্ষ চিকিৎসক। পরিকাঠামো তৈরির জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। অথচ আব্রু রক্ষার এমন গুরুতর প্রশ্ন উঠছে যে জিনিসটির অভাবে, তার এক-একটির দাম ১০০ টাকারও কম। কেন এ ভাবে চলছে দিনের পর দিন? এসএসকেএমের সুপার প্রভাস চক্রবর্তীর বক্তব্য, “অবিলম্বে খোঁজ নিচ্ছি। সত্যিই যদি এমন হয়, তা হলে লিনেন কিপার ও যে সব নার্স রোগীকে অশালীন অবস্থায় ওটিতে পাঠাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এসএসকেএমের অবস্থা এত খারাপ নয় যে সেখানে রোগীদের শালীনতা রক্ষা করা যাবে না।” সুপার এ-ও বলেন, “নার্সরা দায়িত্ব নেন না বলেই আমি রোগীদের ইউনিফর্ম দিতে পারছি না। আমাদের টাকা আছে। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার লোকের অভাবে তার সদ্ব্যবহার হয় না।”
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.