|
|
|
|
পঞ্চায়েত সমিতির ‘উদাসীনতা’ |
চার বছর আগে অর্থ বরাদ্দ, সুইমিং পুল হল না আজও |
স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ² বিষ্ণুপুর |
বিষ্ণুপুর শহরে সুইমিং পুলের জন্য ৫১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। চার বছর আগে টাকা পেয়ে গেলেও বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির গাফিলতি ও উদাসীনতায় তা খরচ করা যায়নি। এই ঘটনা জেনে বিরক্ত বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক। তিনি জানিয়েছেন, দ্রুত কাজ শুরু না হলে টাকা ফেরত চলে যাবে।
বিষ্ণুপুরের মানুষের বহুদিনের চাহিদার কথা ভেবে সুইমিং পুল তৈরির সিদ্ধান্ত হয় বছর পাঁচেক আগে। একটি প্রকল্প রিপোর্টও তৈরি করা হয়। ‘প্ল্যান এস্টিমেট’-ও জমা পড়ে। তারই ভিত্তিতে ২০০৭ সালের ১২ মার্চ ৫১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব পায় পঞ্চায়েত সমিতি। ২০০৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পঞ্চায়েত সমিতির নামে প্রথম দফায় ৪৫ লক্ষ ৬৭ হাজার ৪০০ টাকার চেক আসে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থান নির্বাচনের ‘অজুহাত’ তুলে এত বছর ওই টাকা ফেলে রাখা হয়েছে। তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সহ-সভাপতি তথা বিষ্ণুপুরের উপ-পুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, “সুইমিং পুলের দাবি আমরা বহু বছর ধরে করে আসছি। অথচ ওই খাতে যে টাকা এসে গিয়েছে, তা আমাদের বলা হয়নি। সিপিএম পরিচালিত বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির চরম উদাসীনতার জন্যই এই অবস্থা। এখন আমাদের মনে হচ্ছে, সিপিএম এ বার ফের ভোটে জিতলে এই টাকা অন্যত্র খরচ করে নয়ছয় করত পঞ্চায়েত সমিতি। শীঘ্রই কাজ শুরু না হলে আমরা পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব।” বিষ্ণুপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ কোলের কথায়, “শহরে জায়গার অভাব নেই। আসলে সদিচ্ছার অভাব। না হলে চার বছর টাকা এসে পড়ে থাকার পরেও সুইমিং পুল হল না!” বিষয়টি জেনে ক্ষুব্ধ এলাকার ক্রীড়ামোদী মানুষ।
নিজেদের গাফিলতি বা উদাসীনতার অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সভাপতি অসিত মাঝি। তাঁর দাবি, “টাকা বরাদ্দ হওয়ার পরে আমরা জায়গা খোঁজার কাজ শুরু করি। শহরের ভিতরে না পেয়ে বিষ্ণপুর শহর লাগোয়া লালগড়ে জায়গা চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু দূরত্বের কারণে অনেকে আপত্তি তোলায় আমরা সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করি। নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় ভোটের আগে আর এ বিষয়ে ভাবা হয়নি।” জায়গা খুঁজতে কেন এত দিন লেগে গেল, তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। তৃণমূলের তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে অসিতবাবুর মন্তব্য, “এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করা যায় না। ওঁরা জানেন না বলেই এ-সব ভিত্তিহীন কথা বলছেন।”
রাজনৈতিক চাপানউতোর যাই থাক, প্রকল্পের অগ্রগতির দেখাশোনা করার দায়িত্বে থাকা বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “এই সংক্রান্ত ফাইলটি সম্প্রতি নজরে আসার পর অবাক হয়েছি। চার বছর আগে অনুমোদিত কাজ আজও বিন্দুমাত্র এগোয়নি। এ বার কাজ শুরু না হলে ওই টাকা ফিরে যাবে।” তিনি জানান, পঞ্চায়েত সমিতিকে দ্রুত কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থান নির্বাচন শহরের মধ্যেই হওয়া উচিত জানিয়ে মহকুমাশাসক বলেন, “মানুষের যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে, এমন একটি জায়গা বাছতে বলা হয়েছে।”
এই অবস্থায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও এখন বলছেন, “দ্রুত কাজ শুরু হবে। সুইমিং পুলের জন্য বিষ্ণুপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন একটি জায়গা দেখা হয়েছে।” আগে শহরের মধ্যে জায়গা না পাওয়া গেলে এখন পেলেন কী করে? এর সদুত্তরও অবশ্য দেননি সভাপতি। |
|
|
 |
|
|