|
|
|
|
সঞ্জয়ের ‘দৌড়ে’ বাধা অনটনই |
নিজস্ব সংবাদদাতা ²বনগাঁ |
দৌড়ের ট্র্যাকে তিনি এগিয়ে যান সকলকে পিছনে ফেলে। জীবনের দৌড়ে তীব্র অনটনকে পিছনে ফেলাই লক্ষ্য সঞ্জয় মণ্ডলের। বনগাঁ মহকুমার বাগদার নলডুগারি গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয়ের স্বপ্ন একটাই আন্তর্জাতিক স্তরে দৌড়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। পদক এনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করা।
সম্প্রতি জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে আয়োজিত রাজ্য অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হয়েছেন তিনি। ১০০ মিটার দৌড়তে তিনি সময় নিয়েছেন ১১.২ সেকেন্ড। প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা ছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ফেডারেশন। রাজ্য মিটে যোগ দেওয়ার আগে সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে আয়োজিত জেলা মিটে ১০০ মিটার দৌড়ে দ্বিতীয় হন তিনি। পায়ে চোট থাকার কারণেই আশানুরূপ ফল হয়নি বলে জানান তিনি।
|
হেলেঞ্চার ডক্টর বি আর অম্বেডকর শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ে বি এ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সঞ্জয়। বাবা শহর বিশ্বাসের সম্পত্তি বলতে সামান্য একফালি জমি। মা মিনতিদেবী গৃহবধূ। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। দাদা স্বজন মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ে আর্থিক অনটনে আর পড়তে পারেনি। বাবার সঙ্গে চাষের কাজে সঙ্গী হতে হয় তাঁকে।
নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রতিবেশী তাপস সরকার সঞ্জয়কে নিয়ে যান কোচ গৌর রায়ের কাছে। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে উন্নতি হতে থাকে তাঁর। চলে নিরলস অনুশীলন। সকাল সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে সাতটার মধ্যে গৌরবাবুর কাছে প্রশিক্ষণ নিতে চলে যেতেন তিনি। ঘণ্টাদুয়েক প্রশিক্ষণের পর বাড়ি ফেরা। কোনওদিন খিদে মেটাতে হত পান্তাভাত দিয়ে। আবার কোনও দিন ভাতের সঙ্গে থাকত খানিক আলুসেদ্ধ। বিকেল সাড়ে চারটে থেকে আবার ঘণ্টা দু’য়েকের প্র্যাকটিস। ফিরে এসে খাবার বলতে মুড়ি।
তাঁর বাড়ির সর্বাঙ্গেই দারিদ্র্যের প্রতিচ্ছবি। মাথার উপরে ভাঙা টালি। পাটকাঠির দেওয়াল। ভাঙা ঘরের দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে বিভিন্ন মেডেল। এই ঘরই সাক্ষী সঞ্জয়ের লড়াইয়ের। এই ঘরেই তিনি স্বপ্ন দেখেন দেশের জন্য পদক আনার।
জীবনের এই ‘দৌড়ে’ অবশ্য ট্র্যাকের ধার থেকে তাঁকে উৎসাহ যোগাচ্ছেন পরিবারের সকলেই। আর সঞ্জয় সমস্ত কৃতিত্ব দিচ্ছেন গৌরবাবুকেই। তাঁর কথায়, “স্যার প্রশিক্ষণের বিনিময়ে কোনও টাকা নেন না। বরং ট্র্যাকস্যুট-সহ নানা সরঞ্জাম কিনে দেন। সাধ্যমতো টাকা দিয়ে সাহায্য করেন খাওয়ার জন্য।” গৌরবাবুও তাঁর ছাত্র সম্বন্ধে বললেন, “ছেলেটি অসম্ভব প্রতিভাবান। সব থেকে বড় কথা দারিদ্র্যের মধ্যে মনঃসংযোগ ঠিক রাখাটা। সাধ্যমতো সাহায্যের চেষ্টা করি। তবে আমার ক্ষমতা কতটুকু? প্র্যাকটিসের পর যে খাদ্য প্রয়োজন তা-ও ঠিকঠাক পায় না ও।” সব ‘হার্ডল’ টপকে দৌড়চ্ছেন বিশ্বখ্যাত দৌড়বীর উসেইন বোল্টের ভক্ত সঞ্জয়। টিভির পর্দায় বোল্টকে দৌড়তে দেখে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর প্রিয় ইভেন্ট ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার দৌড়। তাঁর একটাই অনুরোধ, “নতুন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র তো অনেককে সাহায্য করছেন। আমাকে একটু সাহায্য করলে সত্যিই উপকৃত হব।” |
নিজস্ব চিত্র |
|
|
 |
|
|