প্রশিক্ষণের অনিয়মে দুর্ঘটনা পবনহংসে, বলছে ডিজিসিএ
পুরনো হেলিকপ্টারের দোষ নয়, পাইলটদের প্রশিক্ষণটাই নিয়মিত হয় না সরকারি সংস্থা পবনহংসের। তাই একটু প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হলেই হেলিকপ্টার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না পাইলটেরা। অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী খান্ডু দোরজির মৃত্যুর তদন্তে নেমে এমন তথ্যই পেয়েছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। পাশাপাশি পাইলটদের লাইসেন্স যথাযথ কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের তাওয়াং, ইটানগর, গুয়াহাটি, উত্তর ভারতে কেদারনাথ, অমরনাথ, বৈষ্ণোদেবী-সহ বিভিন্ন প্রদেশে যাত্রীদের নিয়ে উড়ে বেড়ায় পবনহংসের ৪৪টি হেলিকপ্টার। সাধারণত চার ধরনের হেলিকপ্টার ব্যবহার করে পবনহংস। বড় হেলিকপ্টার বলতে এমআই ১৭২। তারই একটি ১৯ এপ্রিল তাওয়াং-এ নামার সময়ে দুর্ঘটনায় মারা যান ১৭ যাত্রী। এখন আর একটি এমআই ১৭২ রয়েছে গুয়াহাটিতে। মাঝারি ডওফিন হেলিকপ্টারে ১১ যাত্রী ধরে। রয়েছে ছোট ইকুইরিয়াল এবং বেল। দোরজি-র দুর্ঘটনা ঘটে ইকুইরিয়ালে।
ওই দুর্ঘটনার পরেই দু’টি তদন্তকারী দল তৈরি করে ডিজিসিএ। নিয়মিত হেলিকপ্টার নিয়ে ওড়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদ্ধতি মানা বাধ্যতামূলক। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য। প্রতি বার ওড়ার আগে, পাইলটকে গন্তব্যস্থলের এবং উড়ানপথের আবহাওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিতে হয়। এটা বাধ্যতামূলক। তদন্তে জানা গিয়েছে, ইদানীং অনেক ক্ষেত্রেই সেই পদ্ধতি এড়িয়ে যাচ্ছেন বেশ কিছু পাইলট। কারণ, তাঁদের সেই প্রশিক্ষণই নেই।
ডিজিসিএ সূত্রের খবর, দোরজি যে কপ্টারে ছিলেন, তার বয়স মাত্র আট মাস। ৩০ এপ্রিল চার আসনের সেই কপ্টার ভেঙে পড়ে তাওয়াংয়ের কাছে। প্রাথমিক তদন্তে ওই কপ্টারে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, ১৭ জনের মৃত্যুর ঘটনাতেও পাইলটের প্রশিক্ষণের অভাবটাই মূল কারণ বলে ডিজিসিএ-র প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে।
বর্ষার সময় পাহাড়ে-পর্বতে, সমুদ্রের উপরে ওড়ার জন্য প্রতি বছরই প্রশিক্ষণ নিতে হয় পাইলটদের। ডিজিসিএ-র তদন্তে জানা গিয়েছে, এই প্রশিক্ষণ এড়িয়ে যাচ্ছেন বহু পাইলট। ভিআইপিদের নিয়ে নিয়মিত উড়ে বেড়ানো এক অভিজ্ঞ হেলিকপ্টার-পাইলটের কথায়, “মানুষের জীবন থাকে আমাদের হাতে। আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত পাইলটদের। প্রশিক্ষণের নিয়ম ও পদ্ধতি ঠিকঠাক মানা হচ্ছে কি না, তার উপরে সারা বছরই নজরদারি করা উচিত ডিজিসিএ-রও।”
প্রতি বছরই হেলিকপ্টার পাইলটদের যে প্রশিক্ষণ এবং পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার নিয়ম, তদন্তে নেমে ডিজিসিএ দেখেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। তদন্তকারী অফিসারদের মতে, এই গাফিলতি থেকেই দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। মঙ্গলবার দিল্লি থেকে ফোনে ডিজিসিএ-এর ডিরেক্টর ভরত ভূষণ বলেন, “পবনহংসের প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট আমি হাতে পেয়েছি। বহু নিয়ম মানা হচ্ছে না। তাই নিয়ে আলোচনা হবে।”
সম্প্রতি পাইলটদের একাংশের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট পরীক্ষায় পাশ না করেই দালালদের সাহায্যে লাইসেন্স জোগাড় করে নিচ্ছেন বহু পাইলট। এমন অনেক পাইলটকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। হেলিকপ্টারের পাইলটরাও কেউ কেউ সেই ভাবে লাইসেন্স পেয়েছেন কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছে ডিজিসিএ।
মুখ্যমন্ত্রী খান্ডু দোরজির মৃত্যুর পরে উত্তর-র্পূবে পবনহংস পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে ডিজিসিএ। ভরত ভূষণ এ দিন জানিয়েছেন, গাফিলতি না শোধরানো পর্যন্ত উত্তর-পূর্বের পরিষেবা চালু করার অনুমতি দেওয়া হবে না। যাত্রীদের জীবনের প্রশ্ন যেখানে, সেখানে আপস করতে নারাজ ডিজিসিএ।
Previous Story Desh Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.