মমতা দেখুন
গরাদ আঁটা সেলে থাকছেন
পাভলভের মানসিক রোগীরা
²
সোমবার দুপুর সওয়া বারোটা। পাভলভের মহিলা ওয়ার্ডের বারান্দায় বসে চিৎকার করছিলেন রোগিণী মালা মুখোপাধ্যায়। কয়েক মুহূর্তেই আশপাশের কয়েক জনের সঙ্গে শুরু হল হাতাহাতি। ওয়ার্ডে তখন কোনও চিকিৎসক নেই। ঘুরছেন শুধু নার্সরা। চার-পাঁচ জন নার্স চেপে ধরে ধাক্কা দিয়ে তাঁকে সোজা ঢুকিয়ে দিলেন উঁচু ইটের দেওয়াল তোলা একটা অন্ধ কুঠুরিতে। এর পরে তালাচাবি দিয়ে দিলেন। বললেন, “সেলে আটকে না রাখলে অন্যদের মেরে ফেলবে। ওদের এ ভাবেই সামলাতে হবে।” এই কুঠুরির সরকারি নাম ‘আইসোলেশন সেল।’ লুম্বিনী মানসিক হাসপাতাল বা ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’র মতো অনেক সরকারি জায়গায় এই সেল প্রথা ‘অমানবিক’ বলে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও তা চালু রয়েছে কলকাতার পাভলভ ও বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে।
পাভলভ হাসপাতালের মধ্যেই সার সার জেলখানা! ‘অবাধ্য’ রোগীদের সিধে করতে চিড়িয়াখানার জন্তুর মতো আটকে রাখা হয় সেখানে। গরাদ দেওয়া অন্ধকার ঘুটঘুটে জানলাবিহীন কুঠুরির মোটা গরাদ ধরে দাঁড়ানো উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টির, ক্ষয়াটে চেহারার কয়েক জন রোগিণী। ‘মারকুটে’ হওয়ার অপরাধে ওই আলোবাতাসহীন দমবন্ধ করা কুঠুরিতে রোগীদের ঢুকিয়ে দেওয়াই পাভলভ মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার অঙ্গ!
‘পাগলাগারদ’ শব্দের ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটিয়ে অনেক রোগীকেই ‘নিয়ন্ত্রণ’ করার নামে পাভলভ হাসপাতালে সেই অন্ধকার খুপরি গারদে পুরে রাখা হয়। ঘরের মেঝেতেই রোগীরা মলমূত্র ত্যাগ করে ফেলেন। মানবাধিকার বা মৌলিক অধিকারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ব্রিটিশ আমলে তৈরি জেলঘর অবলুপ্ত হয়নি এই একবিংশ শতকেও। যেখানে আটকে থাকা অবস্থায় অসুস্থ টগর, অনিতারা বলেন, “মমতা আসবেন? আমাদের বাইরে নিয়ে যাবেন? চাবি খোলো, বাড়ি যাব।”
‘বন্দিনী’ নন, রোগিণী। দেশকল্যাণ চৌধুরী
ন’বছর আগেই সুপ্রিম কোর্ট এক অন্তর্বর্তী রায়ে মানসিক রোগীদের বেঁধে বা আটকে রাখা নিষিদ্ধ করে। কোনও মানসিক রোগী বেশি হিংস্র হয়ে উঠলে তাঁকে উন্নত ধরনের ওষুধ ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে শান্ত করাটাই আধুনিক চিকিৎসার দস্তুর। কিন্তু তাতে পাভলভ-কর্তৃপক্ষ আগ্রহী নন, অবগত নন আদালতের রায় সম্পর্কেও। পাভলভে মহিলাদের বিভাগে তিনটি এবং পুরুষ বিভাগে পাঁচটি আইসোলেশন সেল রয়েছে।
কিন্তু পাভলভে এই সেল এখনও চালু রয়ে গেল কেন? সুপার রাঘবেশ মজুমদার বলেন, “জানি এটা ঠিক নয়, মানবাধিকারে অসুবিধা হয়। কিন্তু এ ছাড়া উপায়ও নেই। প্রায় ২০০টি চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পদ খালি। রোগী মারামারি শুরু করলে সামলাবে কে? নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে। সেখানে অন্য কিছু ব্যবস্থা করা যাবে।” কী ব্যবস্থা তার ব্যাখ্যা অবশ্য তিনি দেননি।
ভারত সরকারের ‘মেন্টাল হেল্থ পলিসি গ্রুপ’-এর সদস্যা রত্নাবলী রায় এই আইসোলেশন সেলের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “অবিলম্বে এই সেলগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়া উচিত। পাভলভের চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীদের পিছনে বিন্দুমাত্র সময় ব্যয় করতে চান না বলে কয়েদখানায় ঢুকিয়ে কর্তব্য সারছেন।”
স্বাস্থ্য দফতরের সহ অধিকর্তা (মানসিক রোগ) সচ্চিদানন্দ সরকারও এই কালকুঠুরি ব্যবস্থাকে সমর্থন করতে পারেননি। বলেছেন, “আমি নৈতিক ভাবে একে সমর্থন করতে পারি না। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এ রকম হতে পারে না। এটি একেবারেই অনুচিত। কিছু দিনের মধ্যেই এটি বন্ধ করা হবে। যদি কোনও কারণে কোনও রোগীকে ঘরে বন্ধ করতেও হয় সেটা যেন ওই রকম কালকুঠুরি না হয়, আলো-হাওয়াযুক্ত বড় ঘর হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.