মমতা দেখুন
বিধির জাঁতাকল, মৃত্যুর প্রহর গুনছেন যক্ষ্মারোগী
²
রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জোর তৎপরতা দেখাচ্ছেন, তখন সরকারি নিয়মের যাঁতাকলে পড়ে মৃত্যুর দিন গুনছেন আরামবাগের বেউর গ্রামের বাসিন্দা, যক্ষ্মারোগী মান্নান খান। বছর ছাব্বিশের হতদরিদ্র ওই যুবকের অবস্থা এতটাই খারাপ, নির্দিষ্ট ওষুধগুলি আর কাজ করছে না (মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট)। ঘরের কোণে দিনের বেশির ভাগ সময়ে পড়ে থাকে কঙ্কারসার শরীরটা। খোলা দরজা দিয়ে কুকুর এসে শুঁকে চলে যায়। প্রায়ই বুকের যন্ত্রণায় ককিয়ে ওঠেন। পঙ্গু বাবা আর বৃদ্ধা মা ছেলেকে নিয়ে কী করবেন, ভেবে কূল পান না।
মান্নানের মতো রোগীর (মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট) চিকিৎসা হওয়ার কথা যাদবপুর টিবি হাসপাতাল কিংবা জলপাইগুড়ি টিবি হাসপাতালে। কিন্তু শুধুমাত্র হুগলি জেলার বাসিন্দা বলে তিনি ওই দুই হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না। অথচ, এই দুই হাসপাতালের মধ্যে কোনওটিতে ভর্তি হলে তবেই তাঁর যথাযথ চিকিৎসা হত। ওই দুই হাসপাতালের সুপারিশ মতো তাঁর কফের বিশেষ পরীক্ষা (কালচার অ্যান্ড সেনসিটিভিটি) হত বেলেঘাটার স্টেট টিবি ল্যাবরেটরিতে। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী চলত চিকিৎসা।
মান্নান খান। মায়ের সঙ্গে। মোহন দাস
কিন্তু শুধু মান্নানই নন, রাজ্যের আরও কয়েকটি জেলার এমন রোগীদেরও যে একই অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে, তা স্পষ্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের অধীন যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির রাজ্য আধিকারিক শ্যামাপ্রসাদ বসাকের কথায়। তিনি বলেন, “যাদবপুর টিবি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে কেবল মাত্র কলকাতা, হাওড়া এবং দুই ২৪ পরগনা জেলার রোগীদের। জলপাইগুড়ি টিবি হাসপাতালে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির রোগীরা সুযোগ পান। পরিকাঠামোর সমস্যা থাকায় বাকি জেলাগুলির ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ রোগীদের নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই।”
মান্নানের অবস্থার কথা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অগোচরে নয়। গত ২৩ মে আরামবাগ হাসপাতালের তরফে যাবতীয় তথ্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের যক্ষ্মা কেন্দ্রে জানানো হয়। কিন্তু ওই কেন্দ্রের তরফে মান্নানকে শ্রীরামপুর টিবি হাসপাতলে ভর্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। যে চিকিৎসা তাঁদের কাছে দু’বছর ধরে করেও প্রতিকার হয়নি, সেই চিকিৎসাই ফের শ্রীরামপুর থেকে করানোর নির্দেশে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের যক্ষ্মা ইউনিটের মেডিক্যাল অফিসার গোবিন্দচন্দ্র মল্লিক অবাক। তিনি বলেন, “আমার অভিজ্ঞতা এবং সংশোধিত জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা অনুযায়ী আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল বা সমগোত্রীয় কোনও হাসপাতালে রেখে ওই রোগীর চিকিৎসা করার কোনও রাস্তা নেই। একমাত্র কফের কালচার এবং সেনসিটিভিটি পরীক্ষার রিপোটর্র্ অনুযায়ী চিকিৎসা করাই রোগীর বাঁচার একমাত্র উপায়।” শ্যামাপ্রসাদবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “শ্রীরামপুর টিবি হাসপাতালে ভর্তির পরে স্বাস্থ্যকর্মীদের তদারকিতে ওষুধ খাওয়ানো হলে ওই রোগী সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। ওই রোগী নিয়মিত ওষুধ খাননি বলে আমাদের মনে হয়েছে।”
আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের যক্ষ্মা ইউনিট সূত্রে জানানো হয়েছে, মান্নানকে দু’বছর ধরে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু দু’দফায় নির্দিষ্ট পদ্ধতির (ক্যাটিগরি-১ ও ক্যাটিগরি-২) চিকিৎসার পরেও তাঁর কফে জীবাণু মেলায় তাঁকে ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টান্ট’ রোগী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
এখন নাম-কা-ওয়াস্তে আরামবাগ হাসপাতালেরই দেওয়া ওষুধ খেতে হচ্ছে মান্নানকে। পথ্য বলতে বৃদ্ধা মা নুরজাহান বিবির ভিক্ষা করে আনা চাল-ডাল-আলু-শাক দিয়ে তৈরি খাবার। কখনও-সখনও প্রতিবেশীরা ৫০-১০০ টাকা সাহায্য করেন। অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরটিতে দরজা-জানলা নেই। নেই বিদ্যুৎও। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই দিনযাপন করতে হয় মান্নানকে।
পরিবারের অভাব দূর করতে বছর চারেক আগে সেলাইয়ের কাজ শিখতে মুম্বই যান মান্নান। সেখানেই দু’বছর আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর কথায়, “সেলাইয়ের কাজ করে সবে বাবা-মাকে টাকা পাঠাতে শুরু করেছিলাম। তখনই অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আরামবাগ হাসপাতালেও আর যেতে ইচ্ছা করে না।” মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর আর্তি, “হুগলির মানুষ বলে কি আমার যাদবপুরে চিকিৎসার অধিকার নেই? আমি যে বাঁচতে চাই।”
মান্নানের অবস্থার কথা অবশ্য কানে গিয়েছে আরামবাগের তৃণমূূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার। তিনি বলেন, “ওই যুবকের আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.