বাঙালি বিজ্ঞানীর কীর্তি
মশককুল রুখতে গন্ধভেদী বাণ
শাদের বোকা বানাতে জব্বর ফন্দি এঁটেছেন মার্কিন মুলুকের এক বাঙালি বিজ্ঞানী।
মশা নিয়ে সর্বাধুনিক এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, গন্ধ পেয়েই মানুষকে ছেঁকে ধরে মশারা। মশাকে ‘বোকা’ বানিয়ে সেই গন্ধ যদি গুলিয়ে দেওয়া যায়, তবেই কেল্লা ফতে। কাছে এসেও তখন মানুষের অস্তিত্ব টের পাবে না মশককুল। অদূর ভবিষ্যতে এ ভাবেই নির্মূল হয়ে যাবে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি ইত্যাদি মারণ রোগ।
‘নেচার’ পত্রিকার সাম্প্রতিক সংস্করণের প্রচ্ছদ-নিবন্ধে এমনই দাবি করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (রিভারসাইড)-এর সহকারী অধ্যাপক আনন্দশঙ্কর রায় এবং তাঁর সহকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য মশার মুখের সামনে শুঁড়ের মতো দেখতে ‘ম্যাক্সিলারি পাল্পস্’ নামে প্রত্যঙ্গ রয়েছে। তা দিয়েই মানুষের শরীর থেকে বের হওয়া গন্ধ টের পায় মশারা।


আনন্দশঙ্কর রায়
মানুষের নিঃশ্বাসের সঙ্গে বের হওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড ক্রমাগত বাতাসে মিশতে থাকে। স্ত্রী মশা প্রায় ২০-৩০ মিটার দূর থেকেই ওই ‘গন্ধ’ চিনতে পারে। এতে তার খিদে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বুভুক্ষু মশা তখন গন্ধের উৎসের দিকে উড়তে শুরু করে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে বের হওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ যে মানুষের যত বেশি, তার দিকে মশারা তত বেশি আকর্ষিত হয়। সেই আকর্ষণ আরও বাড়ায় ঘামের গন্ধ। আনন্দবাবুর দাবি, কার্বন-ডাই-অক্সাইড চিনে নেওয়ার অঙ্গটি অকেজো করতে পারলেই মানুষের ‘গন্ধ’ চিনতে পারবে না মশারা।
কলেজে পড়াকালীন বন্ধুদের সঙ্গে এক বার ওড়িশার সিমলিপালে বেড়াতে গিয়েছিলেন আনন্দবাবু। সেখানে মশার কামড়ে ম্যালেরিয়ার শিকার হয়েছিলেন নিজেই। মশাদের কী ভাবে রুখে দেওয়া যায়, তাই নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু ওই সময় থেকেই। আনন্দশঙ্কর বলেন, “ছোট যন্ত্র, মোমবাতি, ঘরের রঙ অথবা কয়েল-এর ধাঁচে সাধারণ মানুষের ব্যবহারোপযোগী মশারোধক তৈরির চেষ্টা করছি। তার থেকে নির্গত রাসায়নিক কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অস্তিত্বকে লুকিয়ে রাখবে। ফলে, আশপাশে কোনও মানুষ থাকলেও তা টের পাবে না মশারা। বাজার চলতি মশার কয়েলগুলি মূলত কীটনাশক ব্যবহার করে তৈরি হয়। ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে মশাদের মধ্যে তা থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে।”
মশাবাহিত রোগ রুখতে কী পথ খুঁজেছেন বছর আটত্রিশের এই বাঙালি বিজ্ঞানী? আনন্দবাবু জানান, মানবশরীরে রোগ ছড়াতে জুড়ি নেই তিন ধরনের মশার। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় তাদের নাম ‘অ্যানোফিলিস গ্যাম্বি’ (ম্যালেরিয়ার বাহক), এডিস ইজিপ্টি (ডেঙ্গি, পীতজ্বর) এবং ‘কিউলেক্স কুইনকিউপ্যাসসিয়াটাস’ (ফাইলেরিয়া, ওয়েস্ট নিল ভাইরাস)। আমেরিকার গবেষণাগার এবং আফ্রিকার কেনিয়ার একটি গ্রিনহাউসে ওই তিন ধরনের মশার উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে। মশার মুখের সামনে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড চিনে নেওয়ার প্রত্যঙ্গটিকে সাময়িক ভাবে অকেজো করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন গবেষকরা। কয়েকটি রাসায়নিক গ্যাস সে কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আনন্দবাবু বলেছেন, “ওই রাসায়নিকগুলির মিশ্রণের প্রভাবে বেশ কিছু ক্ষণ মশার কার্বন-ডাই-অক্সাইড চিনে নেওয়ার প্রত্যঙ্গের কর্মদক্ষতা কমে যায়। সে ক্ষেত্রে মানুষের কাছে পৌঁছতে সমস্যা হয় মশার। অনেক ক্ষেত্রে ওই প্রত্যঙ্গ সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক মিশ্রণের প্রভাবে অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে। অতি সক্রিয় হতে থাকলে সেগুলি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।” কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে মশার ফাঁদ এর আগেও তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেগুলি অত্যন্ত দামি (২০-২৫ হাজার টাকা) এবং আকারে বড়। আনন্দবাবুর দাবি, সাম্প্রতিক গবেষণায় ব্যবহৃত গ্যাসগুলি দিয়ে যন্ত্র তৈরি হলে তা আকারে অনেক ছোট হবে। কমবে তৈরির খরচও।
আনন্দশঙ্করের জন্ম কলকাতার লেকটাউনে। ছোটবেলা কেটেছে রাঁচিতে। স্নাতক পড়তে কলকাতায় ফিরে আসেন। রসায়ন নিয়ে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সিতে। বায়োটেকনোলজিতে স্নাতকোত্তর দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার পরই পাড়ি মার্কিন মুলুকে। বর্তমানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কলেজ অফ ন্যাচারাল অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস’-এর এন্টমোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
ক্যালিফোর্নিয়া থেকেই ওই বিজ্ঞানী আনন্দবাজারকে বললেন, “হরিণের গন্ধ পেয়ে সিংহ যেমন পিছু ধাওয়া করে, মশাদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকটা তাই। সিংহের থেকে অবশ্য মশার সুবিধা একটু বেশি। কারণ তারা উড়তে পারে।” মানবশরীরের কাছাকাছি পৌঁছলে ত্বক থেকে নির্গত ঘামের গন্ধও জোরালো ভাবে টের পায় মশারা। শরীরের তাপও বুঝতে পারে। তখনই ‘হিট গাইডেড মিসাইল’-এর মতো তারা ‘টার্গেট’কে ধাওয়া করতে থাকে। সন্ধ্যার দিকে খোলা জায়গায় বসলে মাথার উপর মশার ঝাঁক ঘিরে ধরে সে ভাবেই। মাথা নাড়ালে মশার ঝাঁকও সেদিকে সরে যায়। কিন্তু পাশের লোককে আক্রমণ করে না। ফোন ছাড়ার আগে আনন্দবাবু বললেন, “মশাদের বোকা বানানোই আমাদের লক্ষ্য ছিল। এত দিনে সফল হয়েছি।”
First Page Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.