|
|
|
|
তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক স্তরে আসছে ‘পরিবর্তন’ |
সঞ্জয় সিংহ ² কলকাতা |
সরকারের সঙ্গে দলের ‘সমন্বয়’ গড়ে তোলার কাজ শুরু হল তৃণমূলে। রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বটেই, তৃণমূল নেতৃত্ব বারবার দলের সর্বস্তরে আবেদন করছেন, বিরোধী দলের বিরুদ্ধে পাল্টা কোনও আক্রমণ বা সংঘাতে না-যেতে। একদা সিপিএম-অধ্যুষিত হুগলি, বর্ধমানের মতো বেশ কয়েকটি জেলাতেও ভোটে তৃণমূল আধিপত্য বিস্তার করেছে। কিন্তু ভোটের ফল বেরোনোর পরেই বিরোধী দলের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই দলের বিভিন্ন জেলা কমিটিকে বিশেষ দায়িত্ব দিচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটেই হুগলিতে আরামবাগ মহকুমার জন্য বিশেষ কমিটি গড়া হয়েছে। কারণ, আরামবাগ মহকুমার আরামবাগ, খানাকুল, গোঘাট ও পুরশুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে গোলমাল বাড়ছে। সাংগঠনিক দিক থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পুরশুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান, আরামবাগের কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা ও খানাকুলের ইকবাল আহমেদকে সদস্য করে ‘আরামবাগ নোশনাল জেলা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে বলে সোমবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জানিয়েছেন। চুঁচুড়ার বিধায়ক অসীম (তপন) মজুমদারকে ওই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
মুকুলবাবু অবশ্য বলেছেন, “গত ’৯৮ সাল থেকে আরামবাগ মহকুমায় কোনও গণতন্ত্র ছিল না। সিপিএম ওখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে দিত না। ওখানে আমাদের সাংগঠনিক শক্তি এখন বেড়েছে। সেই শক্তিকে সংহত এবং আরও মজবুত করাই কমিটির প্রধান কাজ।” উল্লেখ্য, এ বার ভোটে হুগলির ১৮টি কেন্দ্রের ১৬টিই তৃণমূল জিতেছে। কিন্তু ফল প্রকাশের পরে আরামবাগ মহকুমায় গোলমাল হচ্ছে। তবে নতুন কমিটির চেয়ারম্যান তপনবাবু এ দিন দাবি করেছেন, “গোঘাট ও আরামবাগ স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। পুরশুড়া ও খানাকুলের একটা অংশে কিছুটা অশান্তি রয়েছে। তবে আমি পুলিশের স্থানীয় আধিকারিকদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, সিপিএম বা তৃণমূলের যিনি যত বড় নেতাই হন, তিনি ও তাঁর অনুগামীরা কোনও অসভ্যতা করলে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করবেন। কারণ, এক জন অপরাধী কোনও দলের কর্মী বা নেতা হতে পারেন না। সর্বোপরি আমাদের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ আছে, কোনও রকম অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না।”
তৃণমূল অন্দরের খবর, সরকারে আসার পরে দলীয় সংগঠনেও ‘পরিবর্তন’ আনার ব্যাপারে নেতৃত্ব চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন। কার্যত সেই ভাবনাচিন্তা থেকেই কলকাতা পুরসভার ১৪১টি ওয়ার্ড নিয়ে দলের একটি বিশেষ কমিটি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলীয় এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এমন অনেক কিছু ঘটছে, যা সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সময়মতো পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার উল্টোটাও হচ্ছে। সরকার ও সংগঠনের মধ্যে একটা মসৃণ সমন্বয় গড়তেই কমিটিগুলির পুনর্বিন্যাস করার কথা ভাবা হয়েছে।” আরামবাগের জন্য বিশেষ কমিটির পাশাপাশি কলকাতার চারটি জেলা কমিটি একত্র করে একটি কমিটি করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আজ, মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার ১৪১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও কলকাতার ১১ জন বিধয়াককে নিয়ে মুকুলবাবু জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। শুধু দলীয় সংগঠনেই নয়, তৃণমূলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনেও পুনর্বিন্যাস করা হবে বলে দলীয় সূত্রের খবর। বিশেষত, তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য কমিটি ভেঙে কলকাতার জন্য আলাদা একটি কমিটি করার কথা ভাবা হচ্ছে। কারণ, তৃণমূল যুব কংগ্রেসের বর্তমান রাজ্য সভাপতি, তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর তো বটেই, সংলগ্ন বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার দলীয় সংগঠনের কাজে অনেকটা সময় দিতে হয়। কিন্তু কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাভিত্তিক যুব সংগঠনের কাজে আরও ‘গতি’ আনতে চান দলীয় নেতৃত্ব। সেই কারণে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাংগঠনিক স্তরেও ‘পরিবর্তন’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলের একাংশের বক্তব্য। |
|
|
|
|
|