|
|
|
|
ফাঁকা চেয়ারের কর্মসংস্কৃতি বিদ্যুতেও, মুখ্যমন্ত্রী হতবাক |
নিজস্ব সংবাদদাতা ² কলকাতা |
স্বাস্থ্যের পরে এ বার বিদ্যুৎ।
মুখ্যমন্ত্রী হয়েই কয়েক দিন অন্তর বিভিন্ন হাসপাতালে ‘হঠাৎ’ সফরের পরে সোমবার পথ বদলালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাকরণ যাওয়ার পথে এ দিন তিনি হাজির হন নিউ সেক্রেটারিয়েট বা নব মহাকরণে। লিফটে উঠে যান আটতলায়। লিফট থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যান বিদ্যুৎ দফতরে। স্বাস্থ্যের মতো বিদ্যুৎ দফতরও নিজের হাতে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন দফতরে বিদ্যুৎসচিব, বিশেষ সচিব কেউই ছিলেন না। বেলা পৌনে ১২টাতেও দফতরের অধিকাংশ চেয়ার ফাঁকা। নিজের চোখে দফতরের হালহকিকত দেখে হতবাক মমতা ১০ মিনিটের মধ্যেই ফের লিফটে নেমে যান নীচে। দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিদ্যুৎ দফতরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম সফর কিন্তু কর্মীদের পক্ষে খুব স্বস্তিকর হল না।
দেরিতে আসার জন্য কোনও কর্মী এ দিন তাঁর কাছে ধমক না-খেলেও বেলা ১২টা নাগাদ উপস্থিতির হার যে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি, কথাবার্তাতেই সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সফরের শুরুতেই তিনি উঁকি মেরেছিলেন বিদ্যুৎসচিব মলয় দে-র ঘরে। তাঁকে বলা হয়, সচিব আসেননি। আসেননি দফতরের বিশেষ সচিবও। মুখ্যমন্ত্রী দফতর দেখতে এসেছেন শুনে হন্তদন্ত হয়ে হাজির হন দফতরের যুগ্মসচিব পিয়ালি সেনগুপ্ত। তিনি নিজের পরিচয় দেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। মমতা জানতে চান, ‘‘সচিব কোথায়?’’ পিয়ালিদেবী জানান, উনি সল্টলেকে গিয়েছেন। বৈঠক আছে। বিশেষ সচিব কোথায়? জানা গেল, বিশেষ সচিব কালীপদ ভড় এ দিন অনুপস্থিত। |
|
নব মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র |
সাধারণ কর্মীরা যেখানে বসেন, এ বার সেই হলঘরে প্রবেশ মুখ্যমন্ত্রীর। তার আগেই কর্মী-সংখ্যা কত, সেই খোঁজ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই ঘরে গিয়ে তিনি উপস্থিতির যে-হাল দেখলেন, কার্যত সেটাই রাজ্যের কর্মসংস্কৃতির বাস্তব চিত্র। দেখা গেল, বেশির ভাগ চেয়ারই ফাঁকা। যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ খবরের কাগজ পড়ছেন। কেউ খোশগল্প করছেন। তবে ফাইলও দেখছিলেন কেউ কেউ। মুখ্যমন্ত্রীকে নিজেদের দফতরে দেখে হকচকিয়ে গেলেন প্রায় সকলেই। উঠে দাঁড়ালেন একযোগে। সাফাই দেওয়ার চেষ্টাও হল একটা। মুখ্যমন্ত্রীকে বলা হল, এ দিন কোনও কারণে উপস্থিতির হার কম। এটা রোজকার চিত্র নয়। কয়েক দিন আগেই সরকারি কর্মীদের উদ্দেশে বিবৃতি দিয়ে সরকারি কাজে তাঁদের সমবেত সহযোগিতা চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেই আবেদনের তেমন কোনও প্রভাব যে অন্তত তাঁর বিদ্যুৎ দফতরে পড়েনি, এ দিন সেটা বুঝতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তিনি এ দিন বকাঝকা করেননি। যে-সব কর্মী এসেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলেন, “আপনারা সবাই মন দিয়ে কাজ করুন।” হলঘর দেখে মমতা করিডরের উল্টো দিকে দফতরের ‘রিসিভিং সেকশন’-এ উঁকি মারেন। তার পরে পাশেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে ঢুকে খোঁজখবর নেন। ওই দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বিদ্যুৎমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন মমতা। তার পরে ভিআইপি লিফটে চেপে নেমে যান নীচে।আর মমতা চলে যাওয়ার পরে গোটা নিউ সেক্রেটারিয়েটে গুঞ্জন, মুখ্যমন্ত্রী কি এ ভাবে মাঝেমধ্যেই এখানে হানা দেবেন! কোনও দিন কোনও মুখ্যমন্ত্রী নিউ সেক্রেটারিয়েট ভবনে এসেছেন কি না, তা নিয়েও বিতর্ক চলল দিনভর। আর বিদ্যুৎ দফতরের যাঁরা এ দিন অফিসে আসেননি, তাঁদের কাছে খবর পৌঁছে গেল দ্রুত। যাঁরা দেরিতে অফিসে এসেছেন, তাঁরা খোঁজ নিতে শুরু করেন, মুখ্যমন্ত্রী হাজিরা খাতা চেয়ে পাঠিয়েছেন কি না! |
|
|
|
|
|