লক্ষ্মণ-তমালিকা ছাড়া কি কেউ ছিল না, প্রশ্ন রাজ্য কমিটিতে
²
বারবার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি সিপিএম। বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে এ বার তাঁকে নিয়ে রাজ্য কমিটিতে প্রশ্ন উঠল। বস্তুত, সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এই প্রথম রাজ্য কমিটির মতো দলীয় মঞ্চে ‘সরকারি’ ভাবে তমলুকের প্রাক্তন সাংসদকে নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললেন। লক্ষ্মণবাবুকে নিয়ে তার ফলে দলের ‘বিড়ম্বনা’ আরও বাড়ল বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদ্যসমাপ্ত বৈঠকে প্রবীণ এক সদস্য প্রশ্ন তোলেন, নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের পরেও তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে কেন লক্ষ্মণবাবুকে প্রার্থী করা হয়েছিল? নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের সঙ্গে লক্ষ্মণবাবুর নাম জড়িয়ে গিয়ে তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছিল। তার পরেও তাঁকে লোকসভায় দাঁড় করিয়ে দল কেন ভাবমূর্তির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চায়নি, প্রশ্ন তোলেন ওই প্রবীণ নেতা। লোকসভা ভোটে লক্ষ্মণবাবু তো হেরেছিলেনই, পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেও সার্বিক ভাবে সিপিএমের ফল খারাপ হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও এ বারের বিধানসভা ভোটে লক্ষ্মণবাবুর স্ত্রী তমালিকা পণ্ডা শেঠকে কেন মহিষাদল থেকে টিকিট দেওয়া হয়েছে এবং তিনিও হেরেছেন। লক্ষ্মণবাবুর ‘কালিমালিপ্ত’ ভাবমূর্তির প্রভাব তাঁর স্ত্রীর ক্ষেত্রেও পড়েছিল এবং স্বভাবতই সামগ্রিক ভাবে গোটা দলের উপরে। রাজ্য কমিটির ওই প্রবীণ সদস্যের প্রশ্ন, আর কি কেউ ছিলেন না প্রার্থী হওয়ার জন্য?
লক্ষ্মণবাবুকে নিয়ে সিপিএমের অন্দরে বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়। নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের পরে লোকসভা ভোটে লক্ষ্মণবাবুকে কেন প্রার্থী করা হবে, তা নিয়ে সিপিএম এবং বামফ্রন্টের অন্দরে প্রশ্ন ছিল। রাজ্য কমিটির মঞ্চে লক্ষ্মণবাবুর উপস্থিতিতেই কেউ অবশ্য এর আগে এমন প্রশ্ন তোলেনি। লোকসভা ভোটে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মণবাবুকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এই যুক্তিতে যে, তাঁকে ভোটের ময়দানে না-রাখলে আগেই হার স্বীকার করে নেওয়ার ‘ভুল বার্তা’ যেতে পারে। বিধানসভা ভোটেও হলদিয়া আসন থেকে লক্ষ্মণবাবুকে প্রার্থী করতে প্রাথমিক ভাবে উৎসাহী ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্ব। তাঁদের যুক্তি ছিল, লক্ষ্মণবাবু প্রার্থী হলে জেলার ভেঙে-পড়া সংগঠনকে চাঙ্গা করে ভাল লড়াই দেওয়া যাবে। শেষ পর্যন্ত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আপত্তিতে লক্ষ্মণবাবু-সহ এমন কোনও প্রভাবশালী নেতাকেই প্রার্থী করা হয়নি, এলাকায় যাঁদের ‘ভাবমূর্তি’ নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু লক্ষ্মণবাবুর স্ত্রীর প্রার্থী হওয়া আটকায়নি।
রাজ্য কমিটিতে তাঁকে নিয়ে কথা ওঠায় অন্য একটি প্রশ্নও সিপিএমের অন্দরে চর্চা হচ্ছে। এত দিনেও হলদিয়ায় লক্ষ্মণবাবুর বিকল্প কোনও নেতৃত্ব কেন গড়ে তুলতে পারল না সিপিএম? হলদিয়ায় এককালীন ‘দাপুটে’ নেতা লক্ষ্মণবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই গোটা সংগঠন বিরূপ হয়ে যাবে, এই আশঙ্কা কেন বারবার তাড়া করছে দলকে? তাঁর বেসরকারি সংগঠন চালানো নিয়ে দলের মধ্যে বহু বার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করেননি দলীয় নেতৃত্ব। শুদ্ধকরণের প্রশ্ন তাঁর বেলায় খাটেনি। সিপিএমের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে, লক্ষ্মণবাবুর তুলনায় ‘কম প্রভাবশালী’ বলেই কি পূর্ব মেদিনীপুরের আর এক নেতা অশোক পট্টনায়ককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া গেল আর লক্ষ্মণবাবুর গায়ে কোনও আঁচ পড়ল না?
নন্দীগ্রাম-পর্বের সময় থেকেই তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুর সঙ্গে ‘দূরত্ব’ বেড়েছিল লক্ষ্মণবাবুর। নন্দীগ্রামের সোনাচুড়ায় সিপিএম নেতা শঙ্কর সামন্ত এবং একই দিনে আরও দু’জন খুন হওয়ার পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তমলুকের তদানীন্তন সাংসদকে বলেছিলেন ‘হলদিয়া উৎসব’ সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে। কিন্তু লক্ষ্মণবাবু সেই পরামর্শ শোনেননি। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালে ঠিকা শ্রমিকদের ধর্মঘট বুদ্ধবাবু তুলে নিতে বললেও সিটুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক ডেকে নিজের অনুকূলে সিদ্ধান্ত পাশ করিয়ে নিয়েছিলেন লক্ষ্মণবাবু। তাতে বুদ্ধবাবু আরও ‘রুষ্ট’ হন। ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে সিপিএমের অন্দরে অনেকেই এখন নানা বিষয়ে খোলাখুলি ভাবে সমালোচনায় মুখর হচ্ছেন। তারই দৃষ্টান্ত হিসাবে রাজ্য কমিটিতে লক্ষ্মণ-প্রশ্ন উঠে এসেছে। এর পরে সিপিএম নেতৃত্ব এই প্রশ্নকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন কি না, তা-ই এখন দেখার।
Previous Story Rajya Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.