পড়াশোনা চালানোর ফাঁকে শাড়িতে জরি বসানোর কাজ করেছে হুগলির মশাট পঞ্চায়েতের বনমালিপুর গ্রামের মেয়ে কুসুম বাকুলি। কাজের জমানো টাকা দিয়েই সে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। পশ্চিম তাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৪০ নম্বর পেয়ে সকলের মুখ উজ্জ্বল করেছে অভাবী পরিবারের মেয়েটি। বিভিন্ন বিষয়ে তার প্রাপ্ত নম্বর বাংলা (দু’টি পত্র মিলিয়ে) ১৬৫, ইংরেজিতে ৭০, অঙ্কে ৮৩, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৩, জীবন বিজ্ঞানে ৯৩, ইতিহাসে ৬২ এবং ভূগোলে ৭৪।
বাবা মোহন বাকুলি খেতমজুর। মা তপতীদেবী জরির কাজ করেন। কিন্তু তাঁদের যৎসামান্য আয়ে সংসার চালানোই দায়। তবে, সংসারের অঙ্ক ঠিকঠাক না মিললেও প্রিয় বিষয় অঙ্ক নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে চায় কুসুম। তার কথায়, “আমি শিক্ষিকা হতে চাই। আমাদের মতো ঘরের ছেলেমেয়েদের পক্ষে পড়াশোনা চালানো যে কত কঠিন, তা তো নিজেকে দিয়েই জানি। শিক্ষিকা হয়ে তাদের সাহায্য করতে চাই।” শিয়াখালা বেণীমাধব উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় সে ভর্তি হয়েছে। মাধ্যমিকের সময় তিন জন গৃহশিক্ষক বিনা বেতনে পড়িয়েছেন কুসুমকে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন। কিন্তু এ বার কী হবে? প্লাস্টারহীন দেওয়াল, টালির চাল আর মাটির মেঝের ভাঙাচোরা ঘরে বসে কুসুম বলে, ‘‘স্যারেরা কয়েকটি বই কিনে দিয়েছে। বাকিগুলো কেনা হয়নি।” চিন্তায় ডুবে যায় মেয়েটার মুখ।
কুসুমকে সাহায্য করতে হলে যোগাযোগ: ৯৯৩৩৮৮২৯৬৪ (গৌতম ধাড়া)
|
মাধ্যমিকে ৭২১ নম্বর পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে হরিপালের কিংকরবাটি কৃষি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী শর্মিষ্ঠা সেন। তার ইচ্ছে, ডাক্তার হয়ে গ্রামে চিকিৎসা করবে। কিন্তু তার উচ্চশিক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারের আর্থিক অবস্থা। মাধ্যমিকে শর্মিষ্ঠা বাংলা দু’টি পত্র মিলিয়ে ১৬০, ইংরেজিতে ৯০, অঙ্কে ৯৫, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৭, জীবন বিজ্ঞানে ৯৭, ইতিহাসে ৯২ এবং ভূগোলে ৯০ পেয়েছে।
তবে, এত ভাল ফল করেও মন ভাল নেই মেয়েটির। কেননা, উচ্চমাধ্যমিক থেকে শুরু করে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পাশ করে ডাক্তারি পড়া সবটাই ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। তা জোগাড়ের সাধ্য নেই শর্মিষ্ঠার বাবা গৌতম সেনের। গৌতমবাবু কলকাতার একটি দোকানে কাজ করেন। যা বেতন পান, তাতে সংসার সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার উপর মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর প্রশ্নে তাঁর কপালে ভাঁজ পড়েছে। নালিকুলের বড়গাছিয়া গ্রামে একচিলতে ঘরে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে গৌতমবাবুর সংসার। ঘরটি অবশ্য অন্য এক জনের। তিনি বিনা ভাড়ায় সেখানে থাকতে দিয়েছেন। শর্মিষ্ঠার কথায়, “বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। গ্রামের গরিব মানুষদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতে চাই। কিন্তু আমাদের সংসারের যা অবস্থা, তাতে মনে হচ্ছে স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে।” শর্মিষ্ঠা জানায়, মাধ্যমিকের আগে দু’জন গৃহশিক্ষক বিনা পয়সায় পড়িয়েছেন। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও সাহায্য করেছেন।
শর্মিষ্ঠাকে সাহায্যের জন্য যোগাযোগ: ৯৭৩২৫-২৩৭৫৬ (গৌতম সেন)
|
দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ে জিতেছে আনুসা খাতুন। বাগনান গার্লস হাইস্কুল থেকে এ বছর সেরা পাঁচটি বিষয়ে ৪১৯ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে আনুসা। তার বাবা আনসার আলি পেশায় রঙ মিস্ত্রি। পাইকপাড়া সন্তোষপুর গ্রামের এক চিলতে বাড়িতেই আনুসার পড়াশোনা। কিন্তু পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার পরে এই বাড়ির সব অন্ধকার যেন এক লহমায় উবে গিয়েছে। ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করে গবেষণা করতে চান আনুসা।
আনুসারা তিন বোন। সে মেজো। আনসার বললেন, “থাকার জন্য বাড়ি তৈরি করতে পারিনি। সংসার চালাতে কষ্ট হয়। কিন্তু মেয়েদের পড়ার ব্যাপারে আমি আপোষহীন।” যত কষ্টই হোক মেধাবী মেয়ের জন্য গৃহশিক্ষক রাখতে কার্পণ্য করেননি আনসার। তার ফলও ফলেছে হাতে-নাতে। তাতেই খুশি তিনি। তাঁর কথায়, “আমার সংসারের দারিদ্র্য ঢেকে দিয়েছে মেয়ের পরীক্ষার ফল।” আনুসা বলল, “স্কুলের দিদিরাও আমাকে যে ভাবে সাহায্য করেছেন তা ভোলার নয়।” |