ছেলের জন্য সাইকেল কিনে স্থানীয় মন্দিরে পুজো দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বাবা। কিন্তু বাড়ি গিয়ে ছেলের হাতে আর তুলে দেওয়া হল না সাইকেলটি। বাড়ির কিছুটা দূরেই ঘটল দুর্ঘটনা। বেপরোয়া বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে বেঘোরে মৃত্যু হল তাঁর। ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা বাসটিতে আগুনও ধরিয়ে দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় বিশাল পুলিশবাহিনী নামাতে হয়। সোমবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার দেশপ্রাণ শাসমল রোডে।
পুলিশ জানায়, মৃত চন্দন কুমার (৪০) আই আর বেলিলিয়াস রোডের হরিজন বস্তির বাসিন্দা। তিনি হাওড়া রেলওয়ে অর্থোপেডিক হাসপাতালের কর্মী। তাঁর স্ত্রী, এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ তিনি ছেলে রঞ্জনের জন্য নতুন সাইকেলটি কিনে পঞ্চাননতলার একটি মন্দিরে পুজো দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সাইকেলটি চালাচ্ছিলেন চন্দনবাবুই। পঞ্চাননতলা থেকে বেলিলিয়াস রোডে যাওয়ার সময় দেশপ্রাণ শাসমল রোডে একটি ম্যানহোলের ঢাকনার উপর পিছলে যায় সাইকেলের চাকা। রাস্তার বাঁ দিকে সাইকেল নিয়ে ছিটকে পড়েন তিনি। সেই সময়ে পিছন থেকে তীব্র গতিতে ছুটে আসছিল হাওড়া-নারিট রুটের একটি বেসরকারি বাস। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চোখের নিমেষে ওই ব্যক্তির শরীরের উপর বাসটির চাকা উঠে যায়। বাসটিও চন্দনবাবুকে পিষে দিয়ে আরও গতি বাড়িয়ে পালাতে থাকে। কিন্তু কিছু দূর গিয়েই স্থানীয় বাসিন্দাদের রোষের মুখে পড়ে বাস থামালেও চালক পালিয়ে যান।
জ্বলছে ‘ঘাতক’ বাস। সোমবার, হাওড়ায়। নিজস্ব চিত্র
এ দিকে, দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই হরিজন বস্তির কয়েকশো বাসিন্দা ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে চলে ভাঙচুর। এর পরেই কিছু উত্তেজিত জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনার পরে ওই রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ব্যাঁটরা থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ও জেলার পদস্থ পুলিশ কর্তারা। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। ততক্ষণে অবশ্য বাসটি পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার একপাশে পড়ে রয়েছে দুমড়ে যাওয়া নতুন সাইকেলটি। রাস্তায় চাপচাপ রক্ত। প্রত্যক্ষদর্শী এক স্থানীয় বাসিন্দা সমর রায় বলেন, “বাসটি তীব্র গতিতে হাওড়ার দিক থেকে ছুটে আসছিল। ওই ব্যক্তি পড়ে যেতেই বাসটি ওঁকে পিষে দিল। বাসটি গতি নিয়ন্ত্রণ করলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।” স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, সদা ব্যস্ত এই রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও ট্রাফিক পুলিশ থাকে না। বাসে বাসে রেষারেষি লেগেই থাকে। যানবাহনের বেপরোয়া যাতায়াতের মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলতে হয়।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.