|
|
|
|
গোয়েন্দা তথ্যভাণ্ডারে সায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা² নয়াদিল্লি |
রামদেব-সহ বিভিন্ন বিষয়ে মনমোহন সরকারের মধ্যে মতান্তর যখন বারবার প্রকাশ্যে চলে আসছে, তখন অন্তত একটি বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হল। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি পি চিদম্বরমের স্বপ্নের প্রকল্প ‘ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স গ্রিড’-এ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। গত দেড় বছর ধরে এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতবিরোধ চলছিল।
২৬/১১-র মুম্বই-হামলার পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে মার্কিন কায়দায় এ দেশেও ‘ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স গ্রিড’ বা ‘ন্যাটগ্রিড’ তৈরির পরিকল্পনা নেন। ওই ব্যবস্থায়
দেশের সব নাগরিকের আয়কর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট,
রেল ও বিমান সংরক্ষণ, ক্রেডিট কার্ড লেনদেন থেকে শুরু করে ভিসা ও অভিবাসন পর্যন্ত ২১ ধরনের তথ্যের একটি ভাণ্ডার গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ), সিবিআই-এর মতো ১১টি নিরাপত্তা সংস্থা ওই তথ্যভাণ্ডার থেকে প্রয়োজনমতো
তথ্য নিতে পারবে।
সেখানেই দেখা দিয়েছিল সমস্যা। অর্থ মন্ত্রক ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আপত্তি তুলেছিল, ‘ন্যাটগ্রিড’ চালু হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ইচ্ছেমতো অন্য মন্ত্রকের তথ্য-পরিসংখ্যানে হাত গলাতে পারবে। কেন্দ্রীয় সরকারের তিন মন্ত্রকের মধ্যে এই বিরোধকে কংগ্রেস দলের মধ্যে চিদম্বরমের সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং একে অ্যান্টনির ব্যক্তিত্বের সংঘাত হিসেবেও দেখা হচ্ছিল।
জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ নীরা রাডিয়ার ফোনে আড়ি পেতে শোনা বার্তালাপ কোথা থেকে ফাঁস হল, তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রকের বিরোধ চরমে ওঠে। কারণ অর্থ মন্ত্রকের অধীন আয়কর দফতর রাডিয়ার ফোনে আড়ি পেতেছিল। সে সময় চিদম্বরম ছিলেন অথর্মন্ত্রী। পরে আবার তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্বে আসেন। রাডিয়ার বাতার্লাপ ফাঁস হওয়া নিয়ে দু’পক্ষই একে অপরের দিকে আঙুল তোলে। এর আগে মাওবাদী দমনে সেনা নামানো নিয়ে চিদম্বরমের প্রস্তাবেও বাদ সেধেছিলেন প্রণব-অ্যান্টনি। ‘ন্যাটগ্রিড’-এর পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সব থেকে বড় যুক্তি ছিল, ২৬/১১-র আগে লস্কর-জঙ্গি ডেভিড হেডলি যে ভাবে বারবার ভারতে এসে হামলার প্রস্তুতি চালিয়ে গিয়েছে, ‘ন্যাটগ্রিড’ থাকলে তা সম্ভব হত না। ২০০৯-এ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করে এক বছরের মধ্যেই বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা বারবার পিছিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ‘ন্যাটগ্রিড’ প্রকল্প তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত রঘু রমনের কার্যকালের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে চলতি মাসের শুরুতে তাঁর মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়।
অবশেষে আজ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির সামনে বিষয়টি সবিস্তার জানানো হয়। ওই তথ্য ভাণ্ডারের অপব্যবহার রুখতে কী ব্যবস্থা থাকবে, তা-ও ব্যাখ্যা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের যুক্তি, ‘ন্যাটগ্রিড’ নতুন কোনও গোয়েন্দা সংস্থা নয়, শুধুই
তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক পরিষেবা। বিভিন্ন তদন্তকারী ও
নিরাপত্তা সংস্থা প্রয়োজনমতো যে কোনও তথ্য সহজেই পেতে পারবে। চিদম্বরমের যুক্তি মেনে নিয়ে আজ তাতে সিলমোহর দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। |
|
|
|
|
|