|
|
|
|
দুর্নীতি দমনের প্রচারে কেন নিষ্ক্রিয় নেতারা, ক্ষুব্ধ সনিয়া |
শঙ্খদীপ দাস² নয়াদিল্লি |
দলে শুধু মন্ত্রীর মিছিল! কিন্তু নেতা কোথায়?
দল ও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ‘অপারেশন রামদেব’ নিয়ে ময়নাতদন্তে বসে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সনিয়া গাঁধী। কংগ্রেস সভানেত্রীর মোদ্দা বক্তব্য, দুর্নীতি দমন থেকে শুরু করে কালো টাকা উদ্ধার ও সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণের প্রশ্নে সরকারের ভূমিকা যথেষ্টই ইতিবাচক। কিন্তু সরকারের সেই ইতিবাচক কাজের প্রচারে দলের সাধারণ সম্পাদক ও রাজ্যওয়াড়ি নেতারা কী করছেন? তাঁরা ‘দায়িত্বপালন’ করলে আন্না হাজারে বা বাবা রামদেব কেউই পালে হাওয়া পেতেন না।
কমনওয়েলথ গেমস থেকে শুরু করে উপর্যুপরি দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস যখন বিপর্যস্ত, তখন গত ডিসেম্বরে বুড়ারিতে দলের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের মঞ্চ থেকে সনিয়া গাঁধী জানিয়েছিলেন, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাউকেই রেয়াত করা হবে না। সরকার এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ করছে। সেই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দেশ জুড়ে প্রতি ব্লকে জন জাগরণ অভিযানে নামতে হবে দলের নেতা-কর্মীদের। কিন্তু এখন সনিয়ার প্রশ্ন সেই জন জাগরণ অভিযান হল কোথায়? তার রিপোর্ট কী? কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, দলের ভূমিকা নিয়ে সরকারের তরফেও এখন সনিয়া গাঁধীর কাছে ক্ষোভ জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বলের মতো নেতারাও দলের ভূমিকা নিয়ে সনিয়ার কাছে প্রশ্ন তুলেছেন।
কেন্দ্রের এক শীর্ষ নেতার কথায়, মাঠে নেমে রাজনীতি করতে এখন কেবল দিগ্বিজয় সিংহকেই দেখা যাচ্ছে। দৃশ্যত আর কেউ নেই। অথচ ঘটনা হল, বাবা রামদেব কালো টাকা উদ্ধারের প্রশ্নে অনশনের হুমকি দেওয়ার অন্তত দু’মাস আগে সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ করছে। জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, কালো টাকা উদ্ধারে সরকার কী কী পদক্ষেপ করছে। আইন কঠোর করার পাশাপাশি যারা কর ফাঁকি দেয়, তাদের একাংশের কাছ থেকে গত অর্থবর্ষে ৩৩ হাজার কোটি টাকা জরিমানা বা করও আদায় করা গিয়েছে। তাঁর কথায়, সনিয়া গাঁধীও এখন মনে করছেন, কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা এই তথ্য প্রচার করলে, আন্না হাজারে বা রামদেব কেউই বিশেষ পাত্তা পেতেন না। কেননা যে লোকপাল আইন পাশের দাবিতে আন্না হাজারে অনশনে নেমেছিলেন, সেই বিলের খসড়া করার প্রস্তুতি সরকার আগেই শুরু করেছিল। দুর্নীতি দমনের জন্য কঠোর ব্যবস্থা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ জন্য মন্ত্রিগোষ্ঠীও গঠন করে দিয়েছিলেন। তা ছাড়া, এ রাজা থেকে শুরু করে কানিমোঝি, কলমডী এবং কর্পোরেট সংস্থার কর্তাদের এখন যে ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতেও প্রমাণ হয় যে সরকার দুর্নীতি দমনে বদ্ধপরিকর। কিন্তু সেই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কতটা সফল হয়েছে দল?
সরকারের ইতিবাচক কাজের প্রচার যে বিশেষ হচ্ছে না তা বুঝে ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়ার জন্য একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পি চিদম্বরমের নেতৃত্বে ওই কমিটিতে রয়েছেন
গুলাম নবি আজাদ, পবন বনশল, সলমন খুরশিদ, ভি
নারায়ণস্বামী, অম্বিকা সোনি ও কপিল সিব্বলের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা। তাঁরা নিয়মিত সাংবাদিক বৈঠক করে সরকারের ভূমিকা ও অবস্থান তুলে ধরছেন।
কিন্তু সনিয়ার বক্তব্য, এ সব কথা প্রচার করতে দলের সর্বস্তরে খামতি রয়েছে। এই কারণেই গতকাল দশ নম্বর জনপথে কংগ্রেস ও সরকারের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সনিয়া ফের নির্দেশ দিয়েছেন, দেশজুড়ে প্রচারে নামতে হবে কংগ্রেসকে। আন্না হাজারে ও রামদেবদের বিজেপি এবং আরএসএস যে ‘মদত যোগাচ্ছে’ তা ফাঁস করতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারের ইতিবাচক কাজগুলোও মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। |
|
|
|
|
|