|
|
|
|
মতভেদ ঢাকা দিতে পাল্টা আক্রমণই অস্ত্র কংগ্রেস ও কেন্দ্রের |
নিজস্ব সংবাদদাতা² নয়াদিল্লি |
রামদেব প্রসঙ্গে অন্দরের চূড়ান্ত মতভেদ ঢাকতে আজ মরিয়া চেষ্টা চালাল কংগ্রেস এবং কেন্দ্র। আর সেটা করতে গিয়ে রামদেব-আন্না হাজারেদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতি-আক্রমণে নেমে পড়ল দল ও সরকার। আলাদা ভাবে হলেও একই সুর শোনা গেল দলীয় মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদী এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বলের কথায়। রামদেব-আন্নার গায়ে বিজেপি-আরএসএসের মুখোশ বলে তকমা সাঁটিয়ে তাঁরা স্পষ্ট করে দিলেন, এই ধরনের ‘ব্ল্যাকমেলের’ রাজনীতি ও অরাজক শক্তি বরদাস্ত করা হবে না।
এ দিনই আবার পুলিশি অভিযানের ‘সমর্থনে’ মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও। বললেন, “পুলিশ দিয়ে অনশন তোলা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হলেও, এ ছাড়া উপায় ছিল না।” কখন তিনি এ কথা বললেন? তার আগে সকালে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সুপ্রিম কোর্ট শনিবার রাতের ঘটনাকে ‘নৃশংস পুলিশি কাণ্ড’ বলে উল্লেখ করে কেন্দ্র, দিল্লি সরকার এবং দিল্লি পুলিশের জবাব চেয়েছে। তার পর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “সরকারের হাতে কোনও জাদুদণ্ড নেই যে মুহূর্তে দুর্নীতি দমন করে দেবে। তবে দুর্নীতি দমনে সরকার বদ্ধপরিকর।” |
|
হরিদ্বারের সত্যাগ্রহ মঞ্চে সাংবাদিক বৈঠক রামদেবের। সোমবার। পি টি আই |
চব্বিশ ঘণ্টা আগেও যেখানে অন্দরের চূড়ান্ত মতান্তর বারে বারে ছিটকে এসেছে বাইরে, সেখানে কী ভাবে হঠাৎ এই ‘ঐক্যবদ্ধ’ চেহারা তুলে ধরল কংগ্রেস? কারণ, গত রাতে দল ও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সনিয়া গাঁধীর দীর্ঘ বৈঠক। সেখানে সনিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিভেদ ঢাকতে হবে। এবং সে কাজে প্রতি-আক্রমণই পথ। আজও দলীয় তরফে বুঝিয়ে দেওয়া হল, গতস্য শোচনা নাস্তি। রামদেবের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রণব মুখোপাধ্যায়দের বিমানবন্দরে যাওয়া উচিত ছিল কি না, বা মধ্যরাতে পুলিশ দিয়ে রামদেবকে অনশন থেকে তুলে দেওয়া ঠিক হয়েছে কি না, তা নিয়ে সরকার ও দলের মধ্যে বিতর্কের সময় এটা নয়। এখন আসল কাজ, বলিষ্ঠ পদক্ষেপ করে রামদেব তথা বিজেপি-আরএসএসের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে তাদের প্রকৃত চেহারা ফাঁস করে দেওয়া।
সেই লক্ষ্যেই আজ দলের প্রধান মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদী বলেন, “যে কেউ অনশনে বসবে, আর তাঁর কথায় দেশ চলবে? এটা গণতন্ত্র, না ব্ল্যাকমেলের রাজনীতি? আসলে এঁদের উস্কানি দিয়ে ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া বিজেপি-আরএসএস। রামদেব থেকে আন্না, সকলেই আরএসএসের মুখোশ।” জনার্দন দ্বিবেদীর সাংবাদিক বৈঠকের সময় যে জুতো-কাণ্ড ঘটেছে, তার পিছনেও সঙ্ঘ পরিবার আছে বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। অন্য দিকে, কপিল সিব্বল বলেন, হাতে গোনা পাঁচ জন লোক এসে সরকারকে নির্দেশ দেবেন, আর তাঁদের মতকেই মেনে নিতে হবে এটা কোথায় লেখা রয়েছে? সংসদের কি কোনও গুরুত্ব নেই!
রামদেবকে নিয়ে চারদিকে যে ভাবে হইচই শুরু হয়েছে, তাতে উজ্জীবিত হয়ে এ দিন লোকপাল বিলের যৌথ খসড়া কমিটির বৈঠক বয়কট করে আন্না হাজারে এবং তাঁর সমর্থকরা সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। এই নিয়েও তীব্র সমালোচনা শোনা গিয়েছে কপিলের গলায়। তিনি বলেছেন, “সরকার নাগরিক সমাজের মতকে গুরুত্ব দিয়েই যৌথ খসড়া কমিটি গঠন করেছিল। কিন্তু কমিটির বাইরে গিয়ে তাঁরা সরকারকে ‘চিটিংবাজ’ বলবেন, ষড়যন্ত্রকারী বলবেন, তা বরদাস্ত করব না।” কপিল জানান, সরকার ৩০ জুনের মধ্যে লোকপাল বিলের খসড়া তৈরিতে বদ্ধপরিকর। তাই আজও কমিটির বৈঠক হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর বক্তব্য উল্লেখ করে কপিল জানান, গডকড়ীও লোকপাল বিল প্রশ্নে সরকারকে চিঠি দিয়েছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, লোকপাল বিল চূড়ান্ত করার আগে যেন সংসদের মত নেওয়া হয়। কারণ, সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচিত
সাংসদদের মত না নিয়ে কোনও সরকারের পক্ষে আইন পাশ করা সম্ভব নয়। সেখানে তো আন্না হাজারেরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বকেই লঘু করতে চাইছেন।
রামদেবও চুপ করে বসে নেই। মায়াবতী তাঁকে নয়ডায় অনশনে বসার ব্যাপারে অনুমতি দেননি। তাই তিনি হরিদ্বারেই নতুন করে অনশন সত্যাগ্রহে বসেছেন। সেই সঙ্গে দিনভর দফায় দফায় বিষোদ্গার করেছেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কিন্তু দল যে রামদেবকে রেয়াত করবে না, সেটা পরিষ্কার বুঝিয়ে দেন জনার্দন। তাঁর কথায়, “রামদেবকে সন্ত-সন্ন্যাসী বলে ধন্য ধন্য করছে রাজনীতিকদের একাংশ। কিন্তু এটা কি সন্ন্যাসীর আচরণ? কোনও সত্যাগ্রহী কি মেয়েদের পোশাক পরে লুকিয়ে পালিয়ে যায়? সন্ন্যাসী ও ব্যবসায়ীর মধ্যে ফারাকটাও মানুষকে এ বার বুঝতে হবে।” প্রথমে আন্নার অনশন, তার পর রামদেব-পর্ব, দুই নিয়ে সরকার ও কংগ্রেসের মধ্যে যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল, তা ঝেড়ে ফেলতে এখন সচেষ্ট মনমোহন-সনিয়া। তারই পথ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে প্রতি-আক্রমণকে। কিন্তু এ ভাবে কি শেষ পর্যন্ত দল ও সরকারের বিভেদ ঢেকে বিরোধীদের কোণঠাসা করতে পারবে কংগ্রেস? এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরছে দিল্লির রাজনৈতিক আঙিনায়। |
|
|
|
|
|