|
|
|
|
জামাইয়ের পাতে ইলিশ দিতে অনেক কাঁটা |
আর্যভট্ট খান ও সীমান্ত মৈত্র ²কলকাতা |
জামাইষষ্ঠীতে কি জামাইয়ের পাতে দেওয়া যাবে সাধের ইলিশ? নাকি সাধ ও সাধ্যের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে আকাশছোঁয়া দাম?
গত কয়েক বছরের মতো এ বারও কলকাতায় ইলিশের বাজার আগুন। চড়া দামের পাশাপাশি বাজারে বাংলাদেশি ইলিশ নেই বললেই চলে। জামাইষষ্ঠীর বাজার করতে বেরিয়ে তাই ফের মাথায় হাত মধ্যবিত্ত বাঙালির। ইলিশ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশি ইলিশ আমদানি করতে না পারায় এক দিকে যেমন জামাইষষ্ঠীর মতো বিশেষ অনুষ্ঠানের দিনগুলোতে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে তাঁদের, অন্য দিকে তেমনই সাধের পদ্মার ইলিশে কার্যত হাতই দিতে পারছেন না মধ্যবিত্ত ক্রেতারা। পদ্মার ইলিশের দাম কমাতে বাংলাদেশের সরকারকে হস্তক্ষেপ করার জন্য বারবার চিঠিচাপাটি দিয়েও কার্যত কোনও ফল হয়নি। এ বারের জামাইষষ্ঠীতেও বাজারের হাল দেখে ইলিশের দাম কমাতে অগত্যা আগামী সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। |
|
এক থেকে দেড় কিলো ওজনের এক-একটা ইলিশের দাম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার মতো। এক কিলোর কম ওজনের ইলিশের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। তা-ও বাজারে যে ইলিশ এসেছে, তার বেশির ভাগই দিঘা বা ডায়মন্ড হারবারের বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। গড়িয়াহাট থেকে মানিকতলা, বাংলাদেশের ইলিশ কার্যত বাজারেই নেই। হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারের ফিশ ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (হিলশা) সভাপতি অতুল দাস বলেন, “গত বার দাম বেশি থাকলেও আমরা ২১ টন ইলিশ বাংলাদেশ থেকে এনেছিলাম। কিন্তু এ বার জামাইষষ্ঠীর সময়ে ইলিশ মাছ বাংলাদেশ থেকে তুলিনি বললেই চলে। আমদানি করব কী ভাবে? দাম খুব চড়া।” অতুলবাবু আরও বলেন, “এই চড়া দাম চলছে ২০০৭ সাল থেকে। ইলিশ রফতানি করার জন্য ইলিশের দাম ওজন অনুযায়ী কী হবে, তা তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার ঠিক করে দিয়েছিল। সেই দাম ছিল বেশ চড়া। সেই নির্ধারিত দাম এখনও চলে আসছে। পরে দাম কমানোর জন্য আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একাধিক বার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হব। জামাইষষ্ঠীর মতো পার্বণে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ সে ভাবে আনতে না পারায় আমাদের ব্যবসারও ক্ষতি হচ্ছে।”
বাংলাদেশের হিমঘরে রাখা ইলিশ অবশ্য সারা বছর বিভিন্ন সময়ে এ দেশে আসে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও একই রফতানি মূল্য গুনতে হয়। তা হলে টাটকা ইলিশ আনায় সমস্যা কোথায়?
ব্যবসায়ীদের যুক্তি, বাংলাদেশের হিমঘরের ইলিশ এনে এখানেও হিমঘরে রাখা যায়। সময়মতো চাহিদা বুঝে বাজারে সেই মাছ বিক্রি করা হয়। ফলে দাম মেলে ভাল। কিন্তু টাটকা ইলিশ রফতানি করলে হিমঘরে রাখা যায় না। সরাসরি বিক্রির জন্য বাজারে ছাড়তে হয়। সে সময়ে ইলিশের দাম ভাল না উঠলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হন। কিন্তু জামাইষষ্ঠীতে তো বাজারে ইলিশের চাহিদা প্রচুর। তা হলে কেন আনা হল না ইলিশ? হিলসা কর্তাদের বক্তব্য, জামাইষষ্ঠী এক দিনের উৎসব। বেশি দামে সে দিন হয়তো মানুষ ইলিশ কেনেন। কিন্তু তার পরে দাম পাওয়া মুশকিল হয়।
বাজারের ছবিটা ঠিক কী রকম?
মানিকতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দাস বলেন, “জামাইষষ্ঠীর বাজারে বাংলাদেশের ইলিশ নেই বললেই চলে। দিঘার ইলিশও এ বার বেশি আসেনি। যা এসেছে, বেশির ভাগই আকারে ছোট। ফলে দাম তো চড়া হবেই!” ফিশ ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক ব্যবসায়ী বললেন, “বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা দেড় কিলোর বেশি ওজনের ইলিশ আমরাই কিনি কিলোপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এ বার জামাইষষ্ঠীতে এই দামটা আরও বেশি। বাংলাদেশের ইলিশে হাত দেওয়ার সাহসই হয়নি অনেকের। তাই মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হব। বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা ইলিশের ওজন অনুযায়ী দাম কী হতে পারে, তার একটা তালিকাও আমরা ওঁকে দেব।”
তবে শুধু ইলিশ নয়, জামাইষষ্ঠীর বাজারে এ বার প্রায় সব মাছই বিকোচ্ছে চড়া দামে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ছোট ট্যাংরাও ৪০০ টাকা কেজি। পাবদা বা ভেটকির দামও অনেক বেশি। আগুন ফলের বাজারও। চাহিদা অনুযায়ী জোগান ঠিক থাকায় আমের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে হলেও লিচু বা কালোজামের দাম কিন্তু বেশ চড়া। ফলব্যবসায়ীরা জানালেন, বারুইপুরের লিচুর জোগান এ বার কম। ফলে মজফ্ফরপুরের লিচু বাজারে এলেও দাম বেশি। |
|
|
|
|
|