চিন থেকে ফিরেছে জেনারেটর
ডিপিএলে সপ্তম ইউনিট চালু হতে প্রায় দেড় মাস

রও অন্তত মাস দেড়েক। জুলাইয়ের আগে দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএল) সপ্তম ইউনিটে উৎপাদন শুরুর কোনও আশা নেই। যার অর্থ, তত দিন শিল্প কারখানা ও গৃহস্থালীর বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। এ দিকে, ওই ইউনিটটির জন্য ডিপিএলের লোকসানের বহর বেড়েই চলেছে। সেটি বন্ধ থাকায় দৈনিক প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। তা ছাড়া চিনে নিয়ে গিয়ে মেরামতির খরচ ধরলে এখন পর্যন্ত মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় একশো কোটি টাকা। ফলে সপ্তম ইউনিট নিয়ে ডিপিএল দুশ্চিন্তায়।
রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা ডিপিএলের সপ্তম ইউনিট নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্কের শেষ নেই। আইএনটিটিইউসি-র অভিযোগ, পূর্বতন বাম সরকারের ‘চিন প্রীতি’র খেসারত দিতে হচ্ছে রুগ্ন সংস্থাটিকে। ইউনিট তৈরির দায়িত্বে ছিল চিনা সংস্থা ‘ডং ফ্যাং ইলেকট্রিক্যাল কর্পোরেশন’। চিন থেকে ইঞ্জিনিয়ার ও কারিগরি বিভাগের লোকজন এনে ইউনিটটি গড়ে তোলে চিনা তারা। খরচ হয় প্রায় ১৩৫০ কোটি টাকা। ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ ইউনিটের উদ্বোধন করেন রাজ্যের তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়। বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু হয় ৩০ এপ্রিল।
কিন্তু তার পরেই বিপত্তি। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর আগে ‘পারফর্ম্যান্স গ্যারান্টি টেস্ট’ (পিজি টেস্ট) করতে হয়। এই পরীক্ষায় ইউনিটের প্রকৃত ক্ষমতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত ভাবে বোঝা যায়। কিন্তু সপ্তম ইউনিটের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। সেই সময়ে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর মৃগাঙ্ক মজুমদার ওই পরীক্ষা করাতে উদ্যোগী হন। কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীনই হঠাৎ ইউনিটের টার্বাইনে আগুন ধরে যায়। তখন থেকে দৈনিক তিনশো মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ইউনিটটি বন্ধ।
ইউনিট মেরামতির জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল চিনা সংস্থাটির সঙ্গেই। তারা জানায়, চিনের কারখানায় নিয়ে না-গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ‘টার্বো জেনারেটর’ মোরামত করা সম্ভব নয়। এর পরে ডিপিএল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশীয় সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু মেরামতির পরে নির্দিষ্ট গুণমানের নিশ্চয়তা তারা দিতে পারেনি। অন্য দিকে, জাহাজ ভাড়া দিয়ে টার্বো জেনারেটর চিনে পাঠানো এবং ফিরিয়ে আনার বিপুল খরচ কোথা থেকে আসবে, সংস্থার আর্থিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ডিপিএল কর্তৃপক্ষ তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত জুলাইয়ের মাঝামাঝি তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন এগিয়ে আসেন। জেনারেটরটিকে চিনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
ইতিমধ্যে সপ্তম ইউনিট বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে তিনশো মেগাওয়াট। তার উপরে বয়সের কারণে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে ১ ও ২ নম্বর ইউনিটও। ফলে, বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ মাত্র ২০০ থেকে ২২৫ মেগাওয়াট। শিল্প কারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে ‘রেশনিং’ করে। ঘাটতি হচ্ছে গৃহস্থালীর বিদ্যুৎ সরবরাহেও। শহরে তো বটেই, সংস্থার নিজস্ব টাউনশিপেও লোডশেডিং আগের থেকে বেড়েছে।
সম্প্রতি জেনারেটরটি মেরামত হয়ে চিন থেকে ফিরেছে। এখন যন্ত্রাংশ জোড়া লাগানোর কাজ চলছে। তা চলবে প্রায় দেড় মাস ধরে। চিন থেকে যন্ত্রাংশ মেরামত করে আনতে খরচ হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। তা ছাড়া সপ্তম ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ থাকায় দৈনিক প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা লোকসান হচ্ছে বলেও ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে। মৃগাঙ্কবাবু বলেন, “সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় একশো কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।” ইতিমধ্যে অষ্টম ইউনিট গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। কেননা শিল্প সম্প্রসারণ, নতুন কারখানা ও আবাসন গড়ে ওঠায় দুর্গাপুরে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আর বিদেশি সংস্থা নয়, এ বার দেশীয় সংস্থা ‘ভেল’-কে নতুন ইউনিট নির্মাণের বরাত দেওয়া হয়েছে। কবে কাজ শেষ হয়ে উৎপাদন চালু হবে, তা অবশ্য এখনও অনিশ্চিত।

Previous Story Bardhaman Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.