|
|
|
|
উত্তরের চিঠি
|
নেতারা পাশে ছিল, কাছে ছিল না |
শপথ এমনিই—নিজেকে বদলাবার জন্য পয়লা জানুয়ারির প্রয়োজন নেই। ক্ষত যত বেশি, ক্ষতি তত! ক্যালেন্ডার বদলেছে, তবু পুরনো ক্ষতগুলি এখনও জায়ান্ট স্ক্রিনের মতো আগলে রেখেছে চার পাশ! রাজ্য-রাজনীতির নার্সারিতে এখন ‘আয় তবে সহচরী’র দিন শেষ। বন্ধ, ঘেরাও আর আগুন দিয়ে অনিমেষরা এখন যুগবদলের কারিগর। আদর্শ ছিল, কিন্তু অনুবাদের ব্যর্থতায় ছাত্ররা দিন-দিন শিখছে পথের রাজনীতি। নেতারা পাশে ছিল, কাছে ছিল না। আঠারো বছর জানে না কাঁদা মন্ত্র দিয়েছিলে, ব্যাখ্যা বলোনি তাই এ ছেলেকে শাস্তি দেওয়া সহজ, বোঝা বড় কঠিন। চাঁচল কলেজে বেঞ্চ জ্বলছে, মালদায় ছাত্রদের হয়ে পথে নেমেছে সাংসদ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং ইস্যুতে তালা ঝোলাল পরিষদ এ কোন পথ? যেন আন্দুল-আশুতোষের রিমেক! না, কোনও শোক-মিছিলের প্রয়োজন এখনও উত্তরে হয়নি, কালো ব্যাজ বুকে নিয়ে বটানি অনার্সরা মোম-মিছিলেও নামেনি। তবু তার মাঝেও বাগডোগরার কালীপদ ঘোষ তরাই কলেজে এক ছাত্রের চোখ রাজনীতির চাঁদমারি হয়েছে। বাইট, স্ক্রলিং পাল্টা স্টেটমেন্টে সত্যিটাই হারিয়ে গেল; খুঁজে বেড়ায় খবর। মায়ের কাছে একটি স্বপ্নের মৃত্যুতে কোল হারায় কেউ জবাব চাইছি! পতাকা নিয়ে ছুটছে উনিশ-কুড়ির দল। সিনিয়র দাদা-দিদিরা কী ভাবছেন? |
|
নবাগতদের গভীর রাতে ‘কাছে টানার’ লেস্নপ্ল্যান, চ্যাঁচালে চাবুক, আমরা বলি র্যাগিং! ওরা কী চাইছে? আইন এল, বিদ্বজ্জনেরা ধারাবাহিক বিবৃতি দিলেন, তবু দিন বদলায়নি। শিক্ষাবিদ, ছাত্র, নাট্যকার, সাহিত্যিক, অধ্যাপকরা র্যাগিং হটাতে অনেক কঠিন শব্দবন্ধ শেখালেন। কিন্তু ছাত্ররা কি সত্যিই শিখল? তা হলে সংবাদ মাধ্যমের উত্তরণ কোথায়? হ্যাঁ, খবর আর না-খবরের ফারাক সবাই জানে না, তবু দিন-দিন আমরা সবাই ছাত্র-রাজনীতির কক্ষচ্যুতিতে মুখর! এক মুঠো বীজ পেলে লাল-নীল ফুলের ফোয়ারা ছোটাত যারা, তারাই আজ অন্য রকম সংকটে। প্রবল ঝড়েও আলো জ্বালতে দ্বিধা, সংশয় বড়দের হাতগুলোতেও জড়তা! তবু বলছি, মানছি কলেজই রাজনীতির ভবিষ্যৎ, যুগবদলের আঁতুড়ঘর! তবে কি প্রগতিশীল ছাত্ররা ভুল জানত যে বিপ্লব স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আসে, এর কোনও পূর্বনির্ধারিত প্রস্তুতি নেই, নির্দিষ্ট সীমা নেই। তবে কেন পার্টির ক্লাসে ওরা শেখাল বিপ্লবের আগাম অ্যাজেন্ডা! বিরোধটা এখানেই। রাজনীতিতে চিরস্থির বলে কিছু নেই। কিন্তু তরুণ প্রজন্মকে প্রোমোট করবার দলেও আজ বিভাজনের হুড়োহুড়ি। চাঁদা তোলা, মেম্বারশিপ কালেকশন কিংবা রক্তদানের পরও নতুন ছেলেটাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে আরও অ্যাক্টিভ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পার্টি! পরিণাম রাগ, ঘৃণা, দলবদল কিংবা কলেজে পাল্টা রিভেঞ্জ! গৌড়বঙ্গের পরীক্ষায় অনার্সের নম্বর ২, ১, ৩, ৫, রেজিস্ট্রেশন বাতিল ছাত্ররা পড়ছে না, অমনোযোগী সবটাই সত্যি ভাবতে কষ্ট হয়!
এ ভাবে ছাত্র বাঁচে না, বাঁচে না রাজনীতিও। গণতন্ত্রের মোড়কে যে আস্ফালনে আজ সংক্রমিত ছাত্রদলের গান! সমবেত হওয়ার আগেই এ কার সুর ওঠে বিদ্রোহী কাজি বেঁচে থাকলে কষ্ট পেতেন। সমাজের জেঠুরা আত্মশুদ্ধিতে ওদের আশ্রমে আনেন, একটু বাড়াবাড়িতে জুভেনাইল হোম পরিবর্তন চাইছি। শুধু ছাত্রদের নয়, কাউন্সেলিং দরকার গুরুমশাইদেরও! সময় বদলেছে, বদলায়নি শিক্ষার পরিবেশ। প্রশ্ন করলেই ‘কলেজে একটা পরিণত ছাত্র আসে, সেখানে নতুন করে এটিকেট শেখানোর প্রয়োজন নেই’ বলেন অনেকে। আর ঘেরাও, প্রতিবাদের সময় আবার তাঁরাই ছাত্রদের শিষ্টতায় প্রশ্নচিহ্ন আঁকেন আশ্চর্য! আজ আমার দেশে অন্ধকার বলে কিছু নেই, নেপথ্যে বিনয়-বাদল-প্রফুল্ল-দীনেশ কিংবা ক্ষুদিরামের মতো আরও অনেকে। আর সে প্রস্তুতির পাঠ স্কুলেই প্রথম নিয়েছিল তারা। পরাধীন থেকেও ওরা পারে, কিন্তু এ যুগের ছাত্ররা তা পারে না কেন? মাস্টারদার সূর্য তখন ছিল, এখন আলো দিতে পারে না কেন? প্রশ্ন, মন্তব্য না কি অভিযোগ জবাব দিন! তরুণদের হয়ে বড়দের লড়াই শুরু করছি যে আত্মাহুতির মৃত্যু নেই। আগুনকে যাঁরা ভয় পান, তাঁদের উদ্দেশে!
|
সন্দীপন নন্দী। বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর
|
এই বিভাগে চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
‘উত্তরের চিঠি’,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|
|
|
|
|
|