|
|
|
|
|
|
|
নেচারোপ্যাথি বলছে মন খুলে বাঁচতে |
ধোঁয়া-ধুলো-টেনশনে জেরবার শহুরে জীবনটা আগাগোড়া দূষিত। খাওয়া-ঘুম-বিশ্রাম অনিয়মিত, অনিয়ন্ত্রিত।
শরীর বিকল হতে বাধ্য। ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’ নামের মারণরোগগুলোর সঞ্জীবনী লুকিয়ে প্রকৃতির বদ্যি-বাক্সে।
জল-বাতাস-আকাশদের ডাক্তারি’কেই বলে নেচারোপ্যাথি। চিরশ্রী মজুমদার
|
নেচারোপ্যাথি কী? |
পঞ্চভূতের শরীর আমাদের ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ আর ব্যোম। একটি উপাদানের মাত্রা এদিক-ওদিক হলেই শরীরে নানা অসুখ বাসা বাঁধে। অথচ শহুরে কর্মব্যস্ত জীবনে প্রকৃতির বেঁধে দেওয়া নিয়মগুলো মানা সম্ভব হয় না। খাওয়া-ঘুমের অনিয়ম, শরীরচর্চার অভাব, তার উপর হাজার দুশ্চিন্তা। শরীর মনের কলকব্জাগুলো বিগড়ে যায়। জাঁকিয়ে বসে নানান অসুখ। নিজের ইচ্ছাশক্তি জাগিয়ে তুলে শরীরের ওই অস্বস্তিকর অংশটুকুকে বার করে দিতে হবে। প্রাকৃতিক উপায়ে ফিরিয়ে আনতে হবে উপাদানগুলির ভারসাম্যের স্বাভাবিক অবস্থা। এই ব্যবস্থায় রুগি সাধারণত কোনও নেচার কিয়োর সেন্টারে দিন কয়েকের জন্য ভর্তি হন। শান্ত, দূষণমুক্ত পরিবেশে যোগাসন, প্রাণায়াম, মাসাজ ও নানা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে রোগ নিরাময় করা হয়। টেনশন-মুক্ত সুস্থ জীবন ফেরত পাওয়া যায়, এনার্জি-লেভেল বাড়ে। |
|
হাঁপানি, সাইনাস, হাইপারটেনশন, আর্থ্রাইটিস, অ্যালার্জি, নার্ভাস ডিসঅর্ডার, ওবেসিটি, মাইগ্রেন প্রভৃতি নানা অসুখে নেচারোপ্যাথি কাজ দেয়। নেচার কিয়োর অ্যান্ড যোগা সেন্টার-এর পক্ষ থেকে রঘুনন্দন দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, ‘এই ব্যবস্থায় চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর সঙ্গে পঞ্চভূতের একেবারে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। ক্ষিতি থেকে এসেছে মাড থেরাপি, অপ থেকে জল চিকিৎসা, মরুৎ থেকে অক্সিজেন-এর সমতা রক্ষা সংক্রান্ত চিকিৎসা, তেজ থেকে ক্রোমোথেরাপি, ইলেকট্রোফিজিয়োথেরাপি প্রভৃতি আর ব্যোম থেকে উপবাসের মাধ্যমে চিকিৎসা। নেচারোপ্যাথি-র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা নেই।’
|
নেচারোপ্যাথি-র কয়েকটি চিকিৎসা |
মাড থেরাপি |
|
মাটির পুঁটলি বানিয়ে মাথা থেকে পায়ের নীচ পর্যন্ত দেওয়া হয়। শরীরের টক্সিন বের করে দিতে
মাটি নাকি অব্যর্থ দাওয়াই। তবে এক মাটি দ্বিতীয়
বার ব্যবহার করা চলে না। |
হিট কম্প্রেস |
গলা ব্যথা, চেস্ট পেন, জয়েন্ট-এর সমস্যায় খুব কার্যকর। একটা লিনেন কাপড় ঠান্ডা জলে চুবিয়ে তাকে শুকনো কাপড়ে মুড়ে নিতে হয়। তার পর পুরোটা কম্বল দিয়ে ঢেকে নিতে হয়। এতে বায়ু চলাচল হয় না, শরীরের তাপমাত্রাও ধরে রাখে। আক্রান্ত জায়গায় অন্তত ঘন্টা খানেক হিট কম্প্রেস করা যায়। |
|
কোল্ড কম্প্রেস |
নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যা রয়েছে? মুখ ও মেরুদণ্ডের ওপর কোল্ড কম্প্রেস করলে অনেকটা আরাম পেতে পারেন। এই পদ্ধতিতে সুতির কাপড়কে বরফ জলে ভিজিয়ে কম্প্রেস করা হয়। এর ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণে থাকে। হার্ট, কিডনি, ফুসফুস ইত্যাদির সুস্থতাও বজায় থাকে। |
ফোমেন্টেশন থেরাপি বা সেঁক |
আর্থ্রাইটিস-এর ব্যথা কমাতে এই চিকিৎসা খুবই উপকারী। ব্যথার জায়গায় হট ওয়াটার ব্যাগ চাপিয়ে তার ওপর ঠান্ডা জলে ভেজানো সুতি কাপড় রাখা হয়। নিউমোনিয়া, ফুসফুসের অসুখ বা হাঁপানি সারাতে ঘাড়ে ও কাঁধে এই থেরাপির বার কয়েক প্রয়োগেই ফল মেলে। |
স্পঞ্জ বাথ |
|
অনেক দিন ধরে কোনও অসুখ শরীরে বাসা বেঁধে রয়েছে? বার বার জ্বর হচ্ছে? ঈষদুষ্ণ জলে আলতো করে গা মুছে নিন। কাঁপুনি দেওয়া বেশি জ্বর না থাকলে ঠান্ডা জলও ব্যবহার করা যায়। এই থেরাপিতে ক্লান্তি ও অবসাদ কাটিয়ে চনমনে হয়ে উঠবেন। |
কোল্ড শাওয়ার |
অনিদ্রার সমস্যায় উপকারী। রোজ সকালে ঠান্ডা জলের তোড়ে স্নান করলে স্নায়ুতন্ত্রের ওপর চাপ কমে, মনঃসংযোগ বাড়ে। ঠান্ডা লাগার ধাত থাকলে কয়েক মিনিট কোল্ড শাওয়ার নিতে পারেন। |
স্টিম বাথ |
ঘরের মধ্যে স্টিম ভরে দিয়ে স্নান করলে রোমকূপের মুখ খুলে যায়। টক্সিন ঘাম হয়ে বেরিয়ে আসে। স্টিম জ্যাকেট পরিয়েও এ চিকিৎসা করা যায়। |
|
যে কোনও নেচারোপ্যাথি সেন্টারে এই থেরাপিগুলো ছাড়াও আরও কয়েকটি পদ্ধতিতে রোগ নিরাময় করা হয়। যেমন আইস বা অয়েল মাসাজ, জলের তোড়ের সাহায্যে জেট স্প্রে মাসাজ, ফুট অ্যান্ড আর্ম বাথ, হিপ বাথ, সনা, আহার ওষধি ইত্যাদি। হজমশক্তি বাড়ে, ত্বকে দাগ-ছোপ, বলিরেখা কমে। ত্বক থাকে টানটান, উজ্জ্বল। তবে শারীরিক ভাবে দুর্বল হলে, গায়ে জ্বর থাকলে বা গর্ভবতী অবস্থায় মাসাজগুলো নেওয়া উচিত না।
|
বাড়িতে নেচারোপ্যাথি |
বিভিন্ন নেচার কেয়ার অ্যান্ড যোগা সেন্টারে এই চিকিৎসা করাতে যাওয়া ছুটি কাটাতে যাওয়ারই শামিল। তবে এটি একটি
সেলফ-হিলিং প্রসেস। তাই এক বার দেখে নিলে বাড়িতেও নেচারোপ্যাথির বিভিন্ন ট্রিটমেন্ট করা যায়।
কী ভাবে করবেন:
বাথ ব্রাশ, গা মোছার নরম তোয়ালে, স্নানের জন্য অ্যারোমা তেল, বাথ সল্ট, সুগন্ধি মোমবাতি, ক্লেনজার, টোনার, ময়শ্চারাইজার, লাইম ওয়াটার, সুরেলা কোনও গান বা যন্ত্রসঙ্গীতের ক্যাসেট বা সিডি, যে চিকিৎসা করাতে চান তার সরঞ্জাম ও নির্দেশিকা।
এ বার রাজ্যের চিন্তা-দুর্ভাবনাগুলোকে কিছুক্ষণের জন্য দূরে সরিয়ে রাখুন। মোবাইল সাইলেন্ট করে দিন। ‘ডু নট ডিসটাবর্’ ট্যাগ-এর আড়ালে নিখাদ নিজের জন্য সময় বের করে নিন। নির্দেশিকা অনুযায়ী বিভিন্ন থেরাপি অ্যাপ্লাই করে টোটাল রিল্যাক্স করুন।
নেচারোথেরাপির লক্ষ্য সুস্থ জীবনযাপন। যে মানুষজন বা যে ব্যাপারগুলো আপনাকে স্ট্রেস বেশি দেয়, তাদের এড়িয়ে চলুন। দরকারে না বলতে শিখুন। ভালো বই পড়ুন, গান শুনুন, ফিল-গুড সিনেমা দেখুন। সপ্তাহান্তে বন্ধুদের সঙ্গে নির্ভেজাল আড্ডা দিন। সকাল সকাল অফিস পৌঁছে যান, অ্যাডভান্স-এ সব কাজ শেষ করে ফেলুন। সন্ধে বেলা হালকা মনে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়ুন। আর নাই বা হলেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট। নিজের মাপকাঠিটা যদি একটু বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো থাকা যায়, ক্ষতি কি? রাগ আর অভিমান এক দম পুষে রাখবেন না। বন্ধু ও পরিবারের কাছে মন খুলে সব বলে দিন। যোগাসন, প্রাণায়াম করুন, দেখবেন এ ধরনের আবেগের ওপর সহজেই লাগাম পরিয়ে রাখতে পারছেন। |
|
কোথায় করাবেন নেচারোপ্যাথি |
কার্ডিনাল পাড়িয়ারা নেচার কিয়োর অ্যান্ড যোগা আশ্রম
কুসুমাগিরি পোস্ট অফিস, কাক্কানাড়,
কোচি, কেরল, ফোন ০৪৮৪-২৪২২২৭৬
খরচ: অ্যাডমিশন ফি -১০০ টাকা, কনসাল্টেশন ফি-১০০টাকা, মাসাজ-১৫০ টাকা।
থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসা মিলিয়ে মাথাপিছু প্রতি দিন ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
|
পুনে নেচার কিয়োর আশ্রম
নিসর্গোপচার আশ্রম, পুনে,
শোলাপুর রোড, উরুলি কাঞ্চন,
পুনে-৪১২২০২
ফোন ০২০-২৬৯২৬২৯৮
|
নেচার কিয়োর অ্যান্ড যোগা সেন্টার,
কনচৌকি বাস স্ট্যান্ড, ডায়মন্ড হারবার রোড, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা-৭৪৩৫০৩
ফোন ২৪৫৩৩৮৮০
|
|
|
|
|
|
|