|
|
|
|
|
|
পরিবেশ মাইনাস |
ভোপাল ১৯৮৪, ইউনিয়ন কার্বাইড-এর প্ল্যান্ট থেকে রাতের অন্ধকারে লিক হল বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস। প্রচুর মানুষ অসুস্থ ও তার পর অকালে প্রাণ হারানো, এই হয়ে ওঠে ভোপালের রোজনামচা। কিছু বোঝার আগেই মৃতের সংখ্যা ছুঁয়ে যায় ৩০০০ সরকারি রিপোর্ট। গ্যাসের ফলে ওই এলাকার প্রায় সব গাছের পাতা পড়ে যায়। আশপাশের অনেক জন্তু-জানোয়ারও মরে যায়। দেখা যায় যে এদের শরীর অস্বাভাবিক রকম ফুলে গিয়েছে। প্রায় তিন হাজারের উপর গর্ভবতী মহিলা ওই বিষ গ্যাসের ফলে প্রজনন সংক্রান্ত নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। ডিসেম্বরের সেই ভয়ানক রাত পার হয়ে গিয়েছে অনেক আগে, ইউনিয়ন কার্বাইড-এর ওই প্ল্যান্ট বন্ধও হয়েছে কিন্তু ওই গ্যাস মারাত্মক ক্ষতি করেই চলেছে ভোপালের বুকে, যার পরিণাম, ভোপালের অগুনতি বাচ্চা যারা নানা রকম শারীরিক প্রতিবন্ধ নিয়ে জন্মাচ্ছে। এখনও। গ্যাস লিকের কারণ বের করতে নানা কমিশন বসেছে, কিন্তু ওরা যখন বাঁকা পায়ে ঘরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত যাওয়ার চেষ্টা করেছে, ক্ষতিপূরণ চেয়েছে, তখন ওদের কাছে কি আমরা বসেছি? |
|
ইউক্রেন-এর চেরনোবিল নিউক্লিয়ার প্লান্ট-এ (তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন-এর অন্তর্ভুক্ত) ১৯৮৬-র ২৬ এপ্রিল প্রকাণ্ড এক অ্যাকসিডেন্ট হল। আগুন লেগে চুল্লিতে ভয়ংকর একটি বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সাংঘাতিক রকম তেজস্ক্রিয় পদার্থ। হাওয়া সেটিকে টেনে নিয়ে যায় ইয়োরোপ-এর প্রায় তেরোটি দেশে। এর ফলে ৬০০০০ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। প্লান্ট-এর কিছু দূরেই ছিল একটা বিরাট পাইন গাছের জঙ্গল। হঠাৎ দেখা যায় যে সমস্ত গাছই লালচে-ব্রাউন হয়ে মরে যাচ্ছে। ওই ভাবে একটা গোটা জঙ্গলকে শেষ হয়ে যেতে কেউ এর আগে দেখেনি। জন্তু-জানোয়াররাও বেশ কিছু বছর প্রজনন ক্ষমতা সম্পূর্ণ ভাবে হারিয়ে ফেলে। প্রচুর ঘোড়া থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ফেটে মারা যায়। এ বছর মার্চে এ রকম বিপর্যয় ঘটে জাপানের ফুকুশিমায়।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট বেরিয়র রিফ বা কোরাল প্রাচীর পৃথিবীর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন লোকের খাদ্যের জোগান দেয়। আর থাকবে না বেশি দিন। অত্যাধিক কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের ফলে এই প্রাচীর ক্ষয়ে যাচ্ছে। এর ফলে অসংখ্য মাছ ও জলের নীচে অন্যান্য জীব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। প্রত্যেক বছর বেশ অনেকেই এভারেস্ট অভিযানে বের হন। দেখা গিয়েছে যে অভিযাত্রীরা নিজেদের সঙ্গে যা যা নিয়ে গিয়েছিলেন, তার প্রায় পুরোটাই পাহাড়ে ফেলে এসেছেন। ফলে এই মুহূর্তে এভারেস্টে ২০০০ কিলো জঞ্জাল জমে রয়েছে। এর মধ্যে পাবেন খালি গ্যাসের ক্যানেস্তারা, অক্সিজেন সিলিন্ডার, টেন্ট, বাসন, ইলেকট্রনিক গেজেট, কিছু মৃতদেহ। |
|
প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে আমেরিকায় প্রায় ৬০০০০ প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। বছরে যত ব্যাগ তৈরি হয়, সেগুলো বানাতে ১২ মিলিয়ান ব্যারেল তেল খরচ হয়। বিশ্বজুড়ে রিসাইক্লিংয়ের কথা যতই বলা হোক, হিসেব বলছে ১ শতাংশেরও কম ব্যাগ রিসাইকল করা হয়। বাকিগুলো? ধাপার মাঠে? রাস্তার ধারে, নর্দমার বুকে? আইরিশ’রা তো মজা করে প্লাস্টিকের ব্যাগকেই নিজেদের জাতীয় পতাকা বলে।
বিশ্ব-উষ্ণায়নের ফলে হিমবাহ গলছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হারে। সেই জল মিশছে সমুদ্রে, ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়ছে। মলদিভস-এর মতো বহু দ্বীপরাষ্ট্র চিরকালের মতো সমুদ্রের তলায় চলে যাবে, এমন আশঙ্কা বেশ তীব্র।
সাম্প্রতিকতম পরিসংখ্যান বলছে, ২০১০-১১ সালে যে পরিমাণ দূষণ পরিবেশে মিশেছে, তা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের ফলে গোটা দুনিয়াতেই বিনিয়োগ কমেছিল, ফলে শিল্পক্ষেত্রেও যেমন দূষণ কম ছিল, তেমনই গাড়িঘোড়ার কার্বন নিঃসরণও কম ছিল। এখন বাজার ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, কার্বন নিঃসরণের মাত্রাও ২০০৮ সালের তুলনায় ৫ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নিঃসরণের সিংহভাগ দায় চিন আর ভারতের। |
|
উত্তর গোলার্ধের ওপরের দিকের গড় তাপমাত্রা বাড়ছে বিশ্ব-উষ্ণায়নের কারণে। ফলে ম্যালেরিয়ার মতো বেশ কিছু রোগ, যেগুলি ক্রান্তীয় আবহাওয়ার রোগ হিসেবেই পরিচিত, সেগুলি ফের ছড়িয়ে পড়ছে ইউরোপ-আমেরিকাতেও।
বিশ্ব-উষ্ণায়নের ফলে বন্যা, খরা, ঝড়ের সম্ভাবনা অনেক বাড়ছে। আর তার প্রধান শিকার মেয়েরা। কারণ, সংসার চালানোর দায়িত্ব বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির মেয়েদের ওপর থাকে, আর খরা-বন্যায় সংসারে বিপর্যয় ঘটলে তার চাপও পড়ে মেয়েদের ওপরেই। পরিসংখ্যান বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মেয়েদের মধ্যে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজর্ডারের সংখ্যা বাড়ছে। |
|
|
|
|
|