পরিবেশ প্লাস
কোয়েডর-এর জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে ইকোলজিকাল আক্টিভিস্ট আনয়া লাইট দেখতে পেলেন একটি স্লথ, আটকে রয়েছে খাঁচায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, স্লথটি তিন দিন ধরে অপেক্ষা করছে কখন তাকে কেটে খাওয়া হবে। ৫ ডলার দিয়ে স্লথটিকে কিনে লাইট সেটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দেন। সেই থেকে জন্ম নেয় স্লথ ক্লাব। এঁরা বলেন, জীবনটাকে অন্য ভাবে বাঁচতে, যেখানে থাকবে অনেক কম দৌড়, কম চাপ, কম কাজ, অনেক কম লোভ ও স্লথের মতোই শান্ত চুপ জীবনযাপন। এই একই লাইন ধরে ইতালি’র কার্লো পেত্রিনি চালু করেছেন ‘স্লো ফুড’ মুভমেন্ট। ফাস্ট ফুড-এর বিকল্প। কার্লো মনে করেন, আমরা যে অঞ্চলে থাকি, তার বিশেষত্ব অনুযায়ী উৎপন্ন খাবার খাওয়া উচিত। এ ছাড়া কীটনাশক বা কৃত্রিম প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবারও না খাওয়া উচিত। এথিকাল শপিং, মানে শুধু সেই সব জিনিসই কেনা, যা পরিবেশের বিশেষ ক্ষতি না করে তৈরি করা হয়, এই আন্দোলনের বড় একটা অংশ।
রবিন মারে’র ‘জিরো ওয়েস্ট’ থিয়োরি মানলে পৃথিবীর কোনও জঞ্জালের ভ্যাট কখনই উপচে পড়ত না। কারণ রবিন কোনও কিছুই জঞ্জাল ভেবে ফেলেন না। সব কিছুই রিসাইকল করে নেওয়া হয় বা এমন করে ডিজাইন করা হয় যাতে কাজ শেষে সেটিকে অন্য কাজে লাগানো যায়।
১৯৭০ সালে নিউ ইয়র্কে জন্ম নেয় গ্রিন গেরিলা’রা। হাতে শাবল, মাটি, কিছু বীজ ও জলের বোতল নিয়ে এরা যেখানে ফাঁকা জমি পেত অতর্কিতে পুঁতে ফেলত গাছের চারা বা অন্য কোনও বীজ। কংক্রিটের মধ্যে ফাটল দেখলেও ওরা সে ফাঁক ভরাট করে দিত। ওদের ছোঁয়ায় শুরু হল একটা গোটা আন্দোলন, ‘গেরিলা গার্ডেনিং’। এরা কারা? কেবল সবুজরা নাম জানত...
ব্রাজিলের কায়াপো জনজাতির সদস্য পাওলো পাইয়াকান। থাকেন আমাজনের গভীরে, সূর্যের আলোও প্রায় অমিল। কিন্তু মনুষ্য জাতি পৌঁছে গেল! গাছের গায়ে কোপ, নড়বড়ে করল গোটা ইকোসিস্টেম। কায়াপো’রা রুখে দাঁড়াল, সাময়িক। কিন্তু লোভ বড় বিশম বস্তু। কেবল পাওলো বাদ। পাওলো আমাজন ছেড়ে শহরে এলেন, নিজেকে অন্য শহুরেদের মতো গড়ে নিয়ে সরকারের কাছে নাগাড়ে আবেদন জানাতে থাকেন। বলেন, আমাজন না বাঁচলে শুধু আমি নই, আপনারাও ভেসে যাবেন। সময় থাকতে থাকতে খেয়াল করুন। পাওলো ভয় না দেখিয়ে ভয়টাকে দেখিয়ে দিয়েছেন। কাজ তো কিছু হয়েছে।
লস এঞ্জেলেস-এর সান্তা ক্লারিটা অঞ্চলে ২০০৩ সাল অবধি ‘ওল্ড গ্লোরি’ নামে একটা বিশাল ওক গাছ ছিল। বয়স প্রায় ৪০০ বছর। হঠাৎ এক দিন শোনা গেল ‘ওল্ড গ্লোরি’কে কেটে ফেলা হবে। নতুন রাস্তা বানানো হবে। কিন্তু প্রায় দু’মাস ধরে গাছ কাটা গেল না। কারণের নাম জন কুইগলি। এই ভদ্রলোক ৭১ দিন ধরে ‘ওল্ড গ্লোরি’-র উপর উঠে বসেছিলেন। কিছুতেই কাটতে দেবেন না। বললেন, রাস্তা বানাও কিন্তু গাছ না ছুঁয়ে। শেরিফের লোকেরা প্রবল চেষ্টা করেও জনকে গাছ থেকে নামাতে পারেননি।
আর জন ৪০ ফুট উপর থেকে তাঁর প্রতিবাদ চালিয়ে গেলেন প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক ঝড় সামলে। শেষে ‘ওল্ড গ্লোরি’কে না কেটে তাকে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তুলে অন্য একটি জায়গায় বসানো হয়। আর ৭০-এর শুরুর দিকে গাড়ওয়াল অঞ্চলের মহিলারা যে ভাবে গাছকে জড়িয়ে ধরে গাছ কাটা রুখে দিয়েছিলেন, সে তো সবারই জানা। নামই তো হয়ে গেল ‘চিপকো’ আন্দোলন। কেউ তাঁকে ‘রেন-ম্যান’ বলেন, কেউ ‘রিভার মেকার’, আসলে তাঁর নাম রাজেন্দ্র সিংহ। প্রায় একার হাতেই রাজস্থানের অনেক অংশে রাজেন্দ্র জল ফিরিয়ে এনেছেন। এমনিতেই এই অঞ্চলে খুব কম বৃষ্টি হয়, ফলে মাটির নীচে জলের স্তর দিনকে দিন কমে যাচ্ছিল। বেশ কিছু নদীও ছোট্ট নালা হয়ে বেঁচেছিল।

জল না থাকার সুযোগ নিয়ে খরাও ধীর পায়ে ঢুকে পড়ে অঞ্চলে। গ্রামকে গ্রাম উঠে যেতে বসেছিল। এমন সময় রাজেন্দ্র, তাঁর তরুণ ভারত সংঘ নিয়ে গ্রামের মানুষদের বলেন, নতুন কিছুই করতে হবে না, শুধু ফিরে চলো নিজেদের বাপ-ঠাকুর্দা’র আমলে। এর পরই সবাই মিলে পাথর ও মাটি দিয়ে শুরু করে ‘জোহাড়’ তৈরি করা। এক রকম বাঁধ, যেখানে বৃষ্টির জল ধরে রাখা হয়। আজ রাজস্থানে নদী’রা আবার প্রবল প্রতাপে বইছে, প্রচুর প্রচুর বালি’র মধ্যে অনেকটা সবুজ আর জলের খোঁজে দশ মাইল আসা-যাওয়াও প্রায় বন্ধ।

First Page Utsav Next Item



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.