স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেখুন বিশেষজ্ঞ নেই, চর্মরোগের চিকিৎসাই
পেয়ে থাকেন আর্সেনিক আক্রান্তেরা
তাঁদের কাছে অভিশাপের আর এক নাম আর্সেনিক। দীর্ঘ দিন ধরে এই বিষ মেশানো জল খেয়ে ভয়াবহ আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত ওঁরা। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বহু। অথচ তাঁদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে নেই সামান্য পরিকাঠামোটুকু। এমনকী, নেই যথেষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও।
আর্সেনিক দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানচিত্রে বর্ধমান জেলায় একটি উল্লেখযোগ্য নাম পূর্বস্থলী ১ ব্লক। প্রায় তিন দশক ধরে বিষ জল খাচ্ছেন এলাকার কয়েকশো মানুষ। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। আবার কেউ কেউ সারা শরীরে দগদগে ঘা নিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুণছেন। টনক নড়েনি প্রশাসনের। পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকে এখনও গড়েই ওঠেনি আর্সেনিক আক্রান্তদের চিকিৎসার সঠিক পরিকাঠামো। ব্যতিক্রম নয় কালনা মহকুমা হাসপাতালও।
পূর্বস্থলী ১ ব্লকের মাদ্রা গ্রামের একটি পরিবার থেকে প্রথম আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার খবর মেলে আশির দশকে। পরে ওই পরিবারের আরও সাত সদস্য ওই একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বর্তমানে ওই পরিবারের দুই সদস্য জীবিত। রতনমালা রায় এবং তাঁর ছোট ছেলে। তাঁরা দু’জনেও আর্সেনিকের শিকার। বিশেষজ্ঞেরা ইতিমধ্যেই রায় পরিবারের নলকূপের জলের নমুনা পরীক্ষা করে জানিয়ে দিয়েছেন, ওই জলে মারাত্মক হারে মিশে রয়েছে আর্সেনিক।
আর্সেনিকের ‘কল্যাণে’ দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের বড়কোবলা, ছোটকোবলা, গঙ্গানন্দপুর, বিদ্যানগর, শ্রীরামপুর, সমুদ্রগড়, জাহান্নগর এ সব এখন পরিচিত নাম। আর্সেনিকের প্রভাবে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে এখানে। পূর্বস্থলী ২ ব্লকেও কল্যাণপুর, লক্ষ্মীপুর, মেড়তলা-সহ বহু এলাকায় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন অনেকেই। বর্ধমান জেলা আর্সেনিক প্রতিরোধ কমিটির হিসাবে দু’টি ব্লক মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৫০। আক্রান্তের সংখ্যা এখন শ’তিনেকেরও বেশি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই রোগের জন্য এলাকায় কোনও চিকিৎসাকেন্দ্র নেই। ফলে আর্সেনিকে আক্রান্তদের ছুটতে হয় কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে। অধিকাংশ সময়েই তা সম্ভব হয় না গরিব পরিবারের সদস্যদের পক্ষে। ফলে অনেকেই সঠিক সময়ে চিকিৎসা করাতে পারেন না। রতনমালাদেবীর কথায়, “সরকারের উদাসীনতার জন্যই আর্সেনিকে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমে বেড়েছে। ব্লকে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলে অনেকেই উপকৃত হতাম।” মোরশেদ শেখও আক্রান্ত একই রোগে। তাঁর অভিযোগ, এলাকার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকেরা অনেক সময় রোগনির্ণয়ই করতে পারেননি। চিকিৎসা হয়েছে চর্মরোগের। ফলে ভুল চিকিৎসায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর কথায়, “এলাকায় আর্সেনিক আক্রান্তদের জন্য সরকারি হাসপাতালে আলাদা কোনও বিভাগ নেই। নেই বিশেষজ্ঞও। ফলে এই দুর্ভোগ।”
পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকে নেই জল পরীক্ষা কেন্দ্রও। ফলে বাড়ির নলকূপের জলে কতটা আর্সেনিক আছে, তা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন না বাসিন্দারা।
মহকুমায় আর্সেনিক আক্রান্তদের দুরবস্থার কথা স্বীকার করে নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সহ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুভাষচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “বছর পাঁচেক আগে পূর্বস্থলী ১ ব্লকে কয়েক জন চিকিৎসককে এই রোগের চিকিৎসা নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা অন্যত্র বদলি হয়ে গিয়েছেন। ফলে সমস্যা সেই একই জায়গায় থমকে।” বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
এলাকার আর্সেনিক-সমস্যাকে গত দু’দশক ধরে প্রচারের আলোয় তুলে এনেছেন বর্তমান বিধায়ক তথা আর্সেনিক প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক স্বপন দেবনাথ। তাঁর কথায়, “আর্সেনিক আক্রান্তদের জন্য এলাকায় যাতে দ্রুত সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের কাছে দরবার করব।”
রতনমালাদেবীর দু’চোখে তবু থমকে অন্ধকার। আর একরাশ প্রশ্নও। সে দিনের দেখা মেলা কি আর তাঁদের মা-ছেলের কপালে আছে?
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.