|
|
|
|
নির্দেশ বাঁকুড়ার নার্সিংহোমগুলিকে |
শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে আইসিসিইউতে ভর্তি নয় |
নিজস্ব সংবাদদাতা²বাঁকুড়া |
পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো না থাকলে আইসিসিইউ বিভাগে আপাতত রোগী ভর্তি বন্ধ করতে হবে। ‘আইসিসিইউ লাইসেন্স’ প্রাপ্ত নার্সিংহোমগুলিকে চিঠি দিয়ে এই নির্দেশ দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ দিন্দা শুক্রবার বলেন, “আইসিসিইউ বিভাগে যে-সব পরিষেবা থাকার কথা, তা না থাকলে সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের ওই বিভাগে রোগী ভর্তি করা যাবে না। পরিষেবার সেই ঘাটতি মেটানোর পরে ফের তারা আইসিসিইউ-তে রোগী ভর্তি করতে পারবেন। যেসব নার্সিংহোমে আইসিসিইউ বিভাগ রয়েছে, তাদের বুধবার লিখিতভাবে এই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।” তবে বাঁকুড়া শহরের কেন্দুয়াডিহি এলাকার যে নার্সিংহোমে হৃদরোগীর মৃত্যুকে ঘিরে এই গোটা বিতর্কের সূত্রপাত, শুক্রবার থেকে সেই নার্সিংহোমের আইসিসিইউ বিভাগে রোগী ভর্তি পুনরায় চালু করায় সম্মতি দিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
বাঁকুড়া শহরে পাঁচটি ও সারেঙ্গার পিড়রগাড়ি এলাকায় একটি নার্সিংহোমে আইসিসিউ পরিষেবা রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে নার্সিংহোমগুলিকে এ ব্যাপারে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ২২ মে কেন্দুয়াডিহির ওই নার্সিংহোমের আইসিসিইউ বিভাগে এক হৃদরোগীর মৃত্যুর পরে স্বাস্থ্য দফতর নড়েচড়ে বসে। জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারির নির্দেশে সে দিনই ওই নার্সিংহোম পরিদর্শনে যান মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই জানিয়ে তিনি আইসিসিইউ বিভাগে রোগী ভর্তি করতে তিনি নিষেধ করেন। এই নিয়ে নার্সিংহোম মালিক সংগঠন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে শুরু হয় চাপানউতোর।
এ দিন বিকেলে ‘বাঁকুড়া ডিস্ট্রিক্ট প্রাইভেট হসপিটালস অ্যান্ড নার্সিংহোম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রতিনিধিরা জগন্নাথবাবুর সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “শর্তবলী মেনে সুচিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে কেন্দুয়াডিহির ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছেন। তাই সেখানাকার আইসিসিইউ বিভাগে রোগী ভর্তির নিষেধাজ্ঞা আপাতত প্রত্যাহার করা হয়েছে।” নার্সিংহোমটির মালিক সুজিত দত্তের কথায়, “স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মতো রোগীদের সুচিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ দিন সন্ধ্যা থেকে রোগী ভর্তিও শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গরহাজির থাকলে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের রোগীদের তা জানিয়ে দেওয়া হবে। তার পরে তাঁরা রোগী ভর্তি করবেন কি না সিদ্ধান্ত নেবেন।”
জগন্নাথবাবু জানান, নিয়ম অনুযায়ী আইসিসিইউ বিভাগ চালু করার আবশ্যিক শর্ত হিসেবে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও অ্যানাসথেটিস্ট তো বটেই, সব সময়ের জন্য রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসারও রাখতে হবে। এ ছাড়াও অন্য শর্তাবলিও রয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “নার্সিংহোম মালিকরা সম্প্রতি চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ওই তিন জনের যে কোনও একজন থাকলেই আইসিসিইউ বিভাগ চালানো সম্ভব। কিন্তু তাঁরা ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। এই অপব্যাখ্যা থেকে যাতে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ভুলচুক না হয়, তা দেখা দরকার। সাধারণ মানুষের স্বার্থে সে জন্যই নার্সিংহোমগুলিকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, শর্তাবলি না মানা হলে ওই বিভাগে রোগী ভর্তি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। শর্ত পূরণ করে রোগী ভর্তি করা যাবে।”
জেলা নার্সিংহোম মালিক সংগঠনের সম্পাদক নীলাঞ্জন কুণ্ডু অবশ্য বলেন, “কয়েক সপ্তাহ ধরে যা পরিস্থিতি চলছে, তাতে ওই নির্দেশ হাতে পাওয়ার আগেই কয়েকটি নার্সিংহোম আইসিসিইউ বিভাগে রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। ওই বিভাগ চালানোর মতো অন্যান্য ব্যবস্থাপনা থাকলেও সব সময়ের জন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ পাওয়া মুশকিল। কারণ, রাজ্যে খুব কম সংখ্যক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন।” তাঁর দাবি, এ ভাবে চললে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়বেন।
এ দিকে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেপুটি সিএমওএইচ ১ বরুন সাঁতরা ও ডেপুটি সিএমওএইচ ২ দেবাশিস রায়কে নিয়ে দুই সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন নার্সিংহোমের পরিষেবা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছেন। জেলা জুড়েই স্বাস্থ্য দফতরের নজরদারি চলবে। এ ছাড়া রোগীরাও পরিষেবা সংক্রান্ত অভিযোগ তাঁদের জানাতে পারেন। |
|
|
|
|
|