বিধান পরিষদ গঠনের ব্যাপারে এসইউসি-র আপত্তিকে খুব একটা গ্রাহ্যের মধ্যে আনছে না তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তাঁর ‘সদ্য-প্রাক্তন’ জোটসঙ্গী এসইউসি মমতাকে একটি চিঠি দিয়েছিল। দলের রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসুর চিঠির মূল বক্তব্য ছিল, বিধান পরিষদ গঠন করলে ‘অকারণে’ বিপুল পরিমাণ আর্থিক বোঝা রাজ্য সরকারের কাঁধে চাপবে। শুক্রবার রাজ্য মন্ত্রিসভার এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলেন, “বিধান পরিষদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্ন। সেটা তাঁর প্রতিশ্রুতির মধ্যেও পড়ে। এখনও বিষয়টি স্রেফ তোড়জোড়ের পর্যায়েই রয়েছে। সিদ্ধান্তের আগে সকলের মতামত নেওয়া হবে।”
প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দু’টি কক্ষ ছিল। উচ্চতর কক্ষ বিধান পরিষদ। নিম্নতর কক্ষ বিধানসভা। ১৯৬৯ সালে অজয় মুখোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকার বিধানসভা ও বিধান পরিষদের অনুমোদন নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে বিধান পরিষদ বাতিল করে। রাজ্যের ব্যয়ভার কমানোই ছিল ওই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য।
সৌমেনবাবু চিঠিতে লিখেছেন, “এমনিতেই রাজ্যের আমজনতার আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। বেকার এবং কর্মচ্যুত মানুষের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। গরিব চাষিরা অনেকেই ঋণের ফাঁসে জড়িয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। সিপিএমের দুর্নীতি, স্বজনপোষণ এবং ভ্রান্ত নীতির ফলে রাজ্য কোষাগারের হাল খারাপ। এই অবস্থায় বিপুল অর্থ ব্যয় করে বিধান পরিষদ পুনর্গঠন সমীচীন নয়।”
বিধানসভা ভোটের আগে মমতা বহু বার জানিয়েছিলেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে বিধান পরিষদ পুনর্গঠন করবেন। সাংবিধানিক নিয়ম এ ব্যাপারে কোনও বাধা হবে না। তবে ৪২ বছর পরে ফের কেন বিধান পরিষদ গড়ার প্রয়োজন হচ্ছে, সে কথা তৃণমূল বা কংগ্রেস এখনও স্পষ্ট করেনি। বস্তুত, বিধানসভার মাধ্যমেই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকারের হাতে রয়েছে। সরকার পরিচালনার অন্য কোনও ক্ষেত্রেও বিধান পরিষদ অপরিহার্য নয়। এই প্রেক্ষিতেই বিধান পরিষদ গঠনে এসইউসি তাদের আপত্তি সবিস্তার জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেন। |