নির্বাচনী বিপর্যয় নিয়ে জেলার নেতাদের কাছ থেকে খোলাখুলি মতামত জানতে চায় আলিমুদ্দিন। জেলার শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে বারবার রিপোর্ট নিয়েই ফল ঘোষণার আগের দিন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেছিলেন, বামফ্রন্ট প্রায় ১৯৯টি আসন জিতবে। কেন কোনও জেলা নেতৃত্বই ‘মানুষের মন’ বুঝতে পারলেন না, রাজ্য কমিটির বৈঠকে আসার কথা সেই প্রসঙ্গও।
বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ পর্যালোচনা করতে আজ, শনিবার থেকে সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে। বৈঠকে যোগ দিতে শুক্রবার রাতেই দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট কলকাতায় এসেছেন। তার পরে তিনি পরাজয়ের প্রাথমিক কারণগুলি নিয়ে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলিমুদ্দিনে প্রাথমিক আলোচনায় বসেন। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সিপিএম দলীয় কার্যালয় বন্ধ এবং কার্যালয় থেকে অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে কারাট বলেন, “কোনও মন্তব্য করব না।”
নির্বাচনী বিপর্যয়ের প্রাথমিক কারণগুলি নিয়ে এ দিন দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আলোচনা করে একটি ‘নোট’ তৈরি হয়েছে। রাজ্য কমিটির বৈঠকে সেই ‘নোট’ দেওয়া হবে ঠিকই কিন্তু নোটের বাইরে গিয়েও রাজ্য কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে খোলাখুলি মতামত চায় আলিমুদ্দিন। বিভিন্ন জেলায় দল ও গণ-সংগঠনের কী পরিস্থিতি, কত কার্যালয় বন্ধ, কী করে তা খোলা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হবে।
সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব পরাজয়ের যে সব কারণ নিয়ে খসড়া নোট তৈরি করেছেন, তা ইতিমধ্যেই চর্চিত। যেমন, রাজ্যের মানুষ ‘পরিবর্তনে’র পক্ষে ভোট দিয়েছেন। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের ঘটনা ভোটে প্রভাব ফেলেছে। গরিব মানুষের একটি বড় অংশ বামেদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তাদের সিংহভাগও তৃণমূল জোটের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সরকারি কাজকর্ম নিয়ে বহু মানুষের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। ভোটে তারও প্রভাব পড়েছে। মুসলিমদের মধ্যে ওবিসি সংরক্ষণ চালু করে সংখ্যালঘু ভোট ফিরে পাওয়ার যে কথা বামেরা ভেবেছিল, তা কার্যত বিফলে গিয়েছে। মুসলিম অনগ্রসরদের পাশাপাশি হিন্দু অনগ্রসর, তফসিলি জাতি, উপজাতিদের ভোটও বামেদের বিরুদ্ধে গিয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পরে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একটি বড় অংশ বিপর্যয়ের জন্য মূলত দায়ী করেন কারাটকে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির দায় কার, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। মূল দায় এসে পড়েছে পরাজিত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর উপরে। বুদ্ধবাবু দীর্ঘদিন মৌনব্রত অবলম্বন করার পরে ৩১ মে ধর্মতলার সমাবশে জানান, পরাজয় থেকে তাঁরা শিক্ষা নেবেন। অন্য দিকে, প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবু একাধিক বার জানিয়েছেন, পরাজয়ের ‘দায়’ কারও একার নয়। কিন্তু শুধুই পরাজয়ের কারণ নিয়ে কাটাছেঁড়া নয়, কী করে তৃণমূলের হামলা-আক্রমণ থেকে দলীয় কর্মীদের রক্ষা করা যায়, রাজ্য কমিটির বৈঠকে সেই ব্যাপারেও অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হবে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। |