|
|
|
|
হিংসার প্রতিকার চেয়ে মমতার কাছে সূর্যরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা ²কলকাতা |
বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের উপর শাসক দলের লোকেরা হামলা করছে বলে বাম নেতারা আগেই রাজ্যের বিভিন্ন থানায় অভিযোগ করেছিলেন। শুক্রবার মহাকরণে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সেই একই অভিযোগ জানিয়ে স্মারকলিপি জমা দিলেন বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলের প্রতিনিধিরা।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে পরিষদীয় দলের ১১ জন প্রতিনিধি এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন তিন পাতার একটি স্মারকলিপি এবং নির্বাচনোত্তর বিভিন্ন হিংসাত্মক ঘটনা সংক্ষিপ্তসার।
সূর্যকান্ত এ দিন বলেন, “আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আবেদন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ শাসক জোটের নিচু তলার কর্মীরা তা মানছেন না।” তাঁর অভিযোগ, নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে গত ২০ দিনে বর্তমান শাসক জোটের কর্মী-সমর্থকদের আক্রমণে ১২ জন নৃশংস ভাবে খুন হয়েছেন। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্তত ৪২৫ জন। আহত হওয়া সত্ত্বেও অনেককে হাসপাতালে যেতে দেওয়া হয়নি। বর্তমান বিধানসভার সদস্য বাসুদেব মেটে এবং সুনীল মণ্ডলের উপরেও হামলা করা হয়েছে। বেশ কয়েক জন মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। শারীরিক অত্যাচার করা হয়েছে শতাধিক মহিলার উপর। |
|
সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে মহাকরণে বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা । নিজস্ব চিত্র |
পরিষদীয় দলের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে এখনও পর্যন্ত বামফ্রন্টের বিভিন্ন শরিক দলের ৪১২টি কার্যালয়ে ভাঙচুর করে লুঠপাট করা হয়েছে। আগুন লাগানো হয়েছে পাঁচটি কার্যালয়ে। অন্তত ৫৪৫টি দলীয় কার্যালয়, ট্রেড ইউনিয়ন এবং গণ সংগঠনের অফিস দখল করে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা তোলা হয়েছে। দলীয় কার্যালয় তালাবন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কমপক্ষে ১৫৭টি জায়গায়।
সূর্যবাবুর অভিযোগ, অস্ত্র উদ্ধারের অছিলায় ‘নাটক’ করা হচ্ছে। উল্টে দলীয় কর্মীদের বাড়িতে হামলা করা হচ্ছে। তালা দেওয়া হচ্ছে কার্যালয়ে। শাসক দলের কর্মীদের অত্যাচারে রাজ্যে এখনই ঘরছাড়া হয়েছেন ৭ হাজার ৩৫১ জন। অনেককে গণআদালতে ডেকে এনে জরিমানা করা হচ্ছে। হামলা করা হচ্ছে কলেজের ছাত্র সংসদের কার্যালয়েও। গরমের ছুটির পরে কলেজগুলি খুললে হামলার ঘটনা আরও বাড়বে বলে তাঁর আশঙ্কা। বিভিন্ন পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্যকে কোথাও পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, কোথাও নথিভুক্ত বর্গাদার ও পাট্টাদারদের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও বিরোধী দলনেতা এ দিন অভিযোগ করেন।
স্মারকলিপি এবং বিরোধী দলনেতার অভিযোগের প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, মুখ্যমন্ত্রী ‘রাজনৈতিক সৌজন্য’ দেখিয়ে পরিষদীয় দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাঁরা যে স্মারকলিপি দিয়েছেন তা দলীয় স্তরে লেখা। তা পড়তে গেলে ‘হোঁচট খেতে হয়’। বাম নেতাদের অভিযোগের সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই বলে দাবি করে পার্থবাবু বলেন, “বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে তা তাৎক্ষণিক। নির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়নি। তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যে যে কোনও মৃত্যুই দুঃখের।”
শিল্পমন্ত্রীর দাবি, যে ঘরছাড়াদের ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁদের ঠিকানা বা জেলাওয়াড়ি তালিকা দেওয়া হয়নি। কেবল ঘরছাড়াদের সংখ্যা দেওয়া হয়েছে। ওই সব ঘটনা ঠিক কোথায় ঘটেছে, তা বলা হয়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে যে কোনও মূল্যে শান্তি ফেরাতে হবে। অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রেও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে বলেছেন তিনি। |
|
|
|
|
|