পুস্তক পরিচয় ২...
‘রবিঠাকুর আমাদের বাড়িতে নিষিদ্ধ ছিলেন’
‘রবীন্দ্রনাথের নাটককে যে একেবারে আমাদের এই যাপিত মুহূর্তের সংলগ্ন করে ভাবা যায়, আমাদেরই মনের নানা জট-জটিলতা সমস্যা সংঘাত যে প্রচ্ছন্ন আছে এর মধ্যে, তাঁর নাট্যবিষয় আর নাট্যবিন্যাস যে আমাদের আধুনিক নাট্যচর্চার একটা সামর্থ্যেভরা উপাদান হয়ে উঠতে পারে, এই বোধটাকে
তৈরি করে দেওয়াই ‘বহুরূপী’র এক ঐতিহাসিক কৃতিত্ব।’’ লিখেছেন শঙ্খ ঘোষ। রচনাটি ফিরে পড়া গেল বহুরূপী-র (সম্পা: প্রভাতকুমার দাস) ‘সার্ধশতবর্ষ রবীন্দ্রজন্ম বিশেষ সংখ্যা’-য়। এ-সংখ্যার পুনর্মুদ্রণ অংশটি গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত নতুন প্রজন্মের কাছে, পুরনো রচনাগুলির ভিতর দিয়ে তারা ছুঁতে পারবে রবীন্দ্র-নাট্য নিয়ে মনস্বী বাঙালির ভাবনাকে। পঞ্চাশ বছর আগে কবির জন্মশতবর্ষে বহুরূপী-র যে সংখ্যাটি নিবেদিত হয়, তার রচনাগুলি আছে এ-সংখ্যায়। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাটক নিয়ে বিশিষ্ট জনের এ বারের নতুন রচনাগুলিও নতুন দিশা দেবে পাঠককে।

সুন্দরবন নিয়ে ক্রোড়পত্র অনুষ্টুপ-এ (সম্পা: অনিল আচার্য), তাতে অনিতা অগ্নিহোত্রী লিখেছেন ‘আয়লার দেড় বছর পর সুন্দরবন যাচ্ছি। বুঝতে পারছি ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও ক্ষয়ক্ষতির তৈরি করা ঘা এখনও জ্বলজ্বলে দগদগে হয়ে আছে।’
আর ‘সুন্দরবনের জনজীবনে মন্ত্রতন্ত্র: প্রাসঙ্গিকতা ও প্রভাব’ নিয়ে অনুপুঙ্ক্ষ বাস্তবের তথ্যনিষ্ঠা প্রভাসরঞ্জন ঘরামী-র কলমে: ‘...মন্ত্রচর্চাকারী ওঝা, গুনিন, বাউলেরা কখনও কখনও হোমিওপ্যাথী চিকিৎসাও করে থাকে। এছাড়া যারা গুণ-জ্ঞান জানে না শুধুমাত্র হোমিওপ্যাথি অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক, তারা বেশ প্রভাব প্রতিপত্তির সঙ্গেই চিকিৎসা চালিয়ে যান। এই সমস্ত চিকিৎসকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণি থেকে দশম/একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত, ...আর্থিক দুরবস্থা এবং যাতায়াত ব্যবস্থার দুরধিগম্যতার কারণে গ্রামের মানুষ এদের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়।’
জরুরি আলোচনা স্বপনকুমার মণ্ডলের “বাংলা কথাসাহিত্যে ‘উপেক্ষিত’ মুসলিম সমাজ...”, অর্ণব সাহার “ ‘জনপ্রিয়’ উপন্যাসের উপাদান: কয়েকটি বিক্ষিপ্ত সূত্র’, জ্যোতির্ময় সেনের ‘আঠারো ও উনিশ শতকে কলকাতার বাজার’, পলাশ বরন পালের ‘বাংলা পরিভাষার তিন দিগন্ত’। ‘দেবীপ্রসাদের উত্তরাধিকার’ নিয়ে রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের গদ্য: ‘‘জনযুদ্ধ-র যুগে (১৯৪২-৪৫) কমিউনিস্ট দেখলেই কংগ্রেস ও সুভাষচন্দ্র বসুর অনুগামীরা তাঁদের তাড়া করতেন, শুধু জানে মারাটা বাকি থাকত। সেই সময়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন দেবীপ্রসাদ।... ‘পার্টিতে স্থান’ অর্থাৎ শাখা সম্পাদক বা স্থানীয় কমিটির সদস্য ইত্যাদি কি না এর জায়গায় তিনি লিখেছিলেন: ‘ফালতু’।”

রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতজন্মবর্ষে কবিতীর্থ-এর (সম্পা: উৎপল ভট্টাচার্য) শ্রদ্ধার্ঘ্যে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যোগেন চৌধুরী: ‘তাঁর আঁকায় এমন একটা প্রাণগুণ আছে, এমন একটা spirit আছে যা রং, space রেখা, বুনোটের মধ্যে স্পষ্ট।
এগুলি তাঁর ছবিতে এমন একটা ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে যা থেকে আমরা রবীন্দ্র-চিত্রের abstract গুণ খুঁজে পাই।’ এ ছাড়া বিনয় ঘোষ শিবনারায়ণ রায় অলোক রায় সুরজিৎ দাশগুপ্ত আলোক সরকার বা অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত আলো ফেলেছেন কবি-প্রতিভার নানান দিকে। মলয় রায়চৌধুরীর ‘রবিঠাকুর আমাদের বাড়িতে নিষিদ্ধ ছিলেন’ চমকে দেওয়ার মতো রচনা: বয়স্কদের বক্তব্য ছিল যে রবিবাবু ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে বিকৃত করেছেন। বড়োদাদু অনাদিনাথ যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন আমি ওই বাড়িতে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজতে বা কাউকে গাইতে শুনিনি।’ কবির বিভিন্ন বয়সের বেশ কিছু ছবি আছে পত্রিকাটিতে।
পরিচয়-এর ‘ঐতিহ্যের সন্ধানে’ সংখ্যায় (সম্পা: বিশ্ববন্ধু ভট্টাচার্য) নানা গুরুত্বপূর্ণ রচনার পুনর্মুদ্রণ। সম্পাদক জানিয়েছেন: ‘বিপন্ন সময়ের প্রেক্ষিতে অগ্রজদের চিন্তার ব্যাপ্তি বর্তমানের কাছে নতুন ভাবনার দিশা দিতে পারে বলে আমাদের আশা।’ চলচ্চিত্র-সংগীত-নাটক-চিত্রকলা নিয়ে ঋত্বিক ঘটক অশোক মিত্র সুচিত্রা মিত্র মৃণাল সেন খালেদ চৌধুরী পরিতোষ সেন কুমার রায় তাপস সেন প্রমুখের রচনা। ‘রক্তকরবী’ আর ‘ম্যাকবেথ’ নিয়ে হিরণকুমার সান্যাল, অশোক রুদ্র, কার্তিক লাহিড়ীর রচনা। ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অপ্রকাশিত ইংরেজি রচনা থেকে অনুবাদ করেছেন চিন্মোহন সেহানবীশ, যুগলবন্দি বটে! ধূর্জটিপ্রসাদের অভিজ্ঞতা: ‘‘আমার ধারণা গান্ধীজী না রাগসংগীত, না অন্য কোনো সংগীতেরই তেমন অনুরাগী ছিলেন, তিনি পছন্দ করতেন শুধু ধর্মসংগীত, বিশেষত ভজন। একবার আহমেদাবাদে আম্বালাল সারাভাইয়ের বাড়িতে বিখ্যাত বীণাকার মুরাদ আলি বাজাচ্ছিলেন তাঁর উপস্থিতিতে। গৃহকর্তা জানতে চাইলেন, ‘কেমন লাগছে বাপুজী?’ বাপু বললেন, ‘আশ্চর্য, কিন্তু আমার চরখার গানের চাইতে মিষ্টি নয়।’
ওটা কৌতুক কিন্তু রসগ্রাহিতা কি?” শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেওয়া শম্ভু মিত্র অমলাশঙ্কর আর সত্যজিৎ রায়ের দুর্লভ সাক্ষাৎকার, তাতে প্রশ্ন তুলেছেন সত্যজিৎ: ‘‘কিন্তু সব কিছু নিয়ে ছবি করবার স্বাধীনতা কোথায়? ‘পরশপাথর’ দেখে তদানীন্তন সেন্সর বোর্ড আমাকে বলেছিলেন ফিল্মের উপর তুলি বুলিয়ে তুলসীবাবুর গান্ধীক্যাপ কালো করে দিতে।”‘কথাকোবিদ রবীন্দ্রনাথ’-কে নিয়ে এবং মুশায়েরা-য় (সম্পা: সুবল সামন্ত) গল্প-বিষয়ক একগুচ্ছ প্রবন্ধ, উপন্যাস-বিষয়কও। কবির গল্পের ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ উদয়কুমার চক্রবর্তীর কলমে। ‘রবীন্দ্রনাথের গল্পে নারীভাবনা’ নিয়ে লিখেছেন সুতপা ভট্টাচার্য। ‘সে’ নিয়ে দেবেশ রায়ের ‘প্রথম পুরুষ’ লেখাটি যেমন তর্ক তুলবে তেমন ভাবাবেও। আর জরুরি রচনা নিত্যপ্রিয় ঘোষের ‘ব্রিটিশ চোখে রবীন্দ্র গল্প-উপন্যাস’। পরিশিষ্টে রবীন্দ্রগল্পের প্রথম প্রকাশ, উপন্যাসের কালানুক্রমিক প্রকাশ, কাজে লাগবে।
Previous Item Alochona Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.