|
|
|
|
পিলখানার পরিচয় এখন ১০০-এ ১০০ |
সেবাব্রত মুখোপাধ্যায় ² রেজিনগর |
‘অরূপের বাড়ি খুঁজছেন তো? চলুন।’ গ্রামে ঢুকতেই প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন পথ চলতি এক যুবক। নিজেই উদ্যোগ নিয়ে পৌঁছে দিলেন অরূপের বাড়িতে। রেজিনগরের পিলখানায় অরূপ মণ্ডলের বাড়ি চিনিয়ে দিয়েও একটা প্রচ্ছন্ন গর্ববোধ। অচেনা পিলখানাকে ভাল ফলের মানচিত্রে এনে দিয়ে ছেলেটি এখন সবার প্রিয়।
এ বছর মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, অঙ্কে অরূপ একশোয় একশো! এই ফলের জন্য শুধু অরূপ বা তার পরিবারের লোক না, খুশি গোটা গ্রামের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা রামপাড়া-২ পঞ্চায়েতের সিপিএমের সদস্য শান্তিময় ঘোষ বলেন, “গ্রামের কোনও ছেলে আগে পরীক্ষায় এত নম্বর পায়নি। অরূপ দেখিয়ে দিল। কত কষ্ট করেছে ছেলেটা। ওর জন্য খুব ভাল লাগছে। গ্রামের ছেলের সাফল্যের কথা অন্যদেরও বলছি।”
এক ছটাক জমি রয়েছে অরূপের বাবা হারাধন মণ্ডলের। চাষ করে কোনওমতে সংসার চলে। তার উপর বাড়ির কাছে কোনও স্কুল নেই। অরূপ তাই পিলখানায় মামার বাড়িতে মানুষ। সেখানে রেজিনগর দাদপুর স্কুলে পড়ে সে। যে কোনও সমস্যায় অরূপের ভরসা স্কুলের শিক্ষকেরা। বিনা পারিশ্রমিকে পড়ানো, বইখাতা কিনে দেওয়া বেশিরভাগ দায়িত্বই নিয়েছিলেন শিক্ষকেরা। মা মিঠু মণ্ডল বলেন, “সব সময় ছেলেকে বলেছি, আর কিছু চাই না মামা এবং মাস্টারমশায়দের সম্মানটা রাখিস। ছেলেটা পেরেছে।” অরূপের প্রাপ্ত নম্বর ৭২১। বাংলায় ১৬৬, ইংরেজিতে, ৮৩, জীবনবিজ্ঞানে ৯৮, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৮৬, ভুগোলে ৯০ আর অঙ্কে ১০০। হারাধনবাবুর বক্তব্য, “দারিদ্র্য কী ছেলে জানে। ওকে খাতা বই কিনে দিতে পারিনি। তার মধ্যে এমন ফল করবে ভাবিনি।”
প্রধান শিক্ষক সমীরকুমার মণি বলেন, “৯০ শতাংশের বেশি নম্বর তার উপর অঙ্কে ১০০, অরূপের সাফল্যে আমরা গর্বিত। ওর পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব আমাদের।” মামা বাপ্পা মণ্ডল বলেন, “পড়ার জন্য কখনও ওকে বলতে হয়নি। নিজের চেষ্টা আর মাস্টারমশায়দের সাহায্যে এতটা করেছে।” আগামী দিনে কী করতে চায় অরূপ? তাঁর কথায়, “ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে অনেক খরচ। আপাতত নিজের স্কুলে বিজ্ঞান পড়ব।” |
|
|
|
|
|