স্বাধীনতার পর দ্বিতীয় বার মন্ত্রী পেল ঐতিহাসিক শহর বহরমপুর। সেও দু’ দশক পর। ফলে স্বাভাবিক কারনেই মন্ত্রী হিসাবে মনোজ চক্রবর্তীর নাম ঘোষণায় আনন্দে আপ্লুত বহরমপুর। এর আগে বহরমপুরের বিধায়ক হিসাবে প্রথম মন্ত্রী হন ১৯৭৭ সালে আর এস পি-র বতর্মান রাজ্য সম্পাদক দেবব্রত বন্দ্যেপাধ্যায়। তিনি বহরমপুর কেন্দ্র থেকে টানা তিন বার নির্বাচনে জিতলেও ১৯৯১ সালের ভোটে আসন বদল করে চলে যান বড়ঞায়। ফলে সেই থেকে বহরমপুর ছিল মন্ত্রী শূন্য। আজ শুক্রবার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বহরমপুরের ওই শূন্য স্থান পূর্ণ হবে টানা ২০ বছর পর। দেশভাগের আগেই পূর্ববঙ্গের যশোহর থেকে বহরমপুরে চলে আসেন মনোজবাবুর বাবা নবকুমার চক্রবর্তী ও মা মিনতীদেবী। দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে মনোজ অগ্রজ। ১৯৫৩ সালে বহরমপুরে তাঁর জন্ম। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে তাঁর হাতেখড়ি হয়। প্রাথমিক বিভাগের পাঠ চুকিয়ে কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুল থেকেই পুরনো উচ্চমাধ্যমিক, অর্থাৎ দ্বাদশ শ্রেণি উর্ত্তীণ হন। তার পর বহরমপুর কলেজে থেকে বানিজ্যে স্নাতক। বরাবর ধবধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবিতে ‘ফিটবাবু’ মনোজ চক্রবর্তীর রাজনীতির হাতেখড়ি ওই স্কুল থেকে।
তাঁর কথায়, “বাড়িতে বরাবর কংগ্রেসি ঘরানা। তার পর এল সেই আগুন ঝরা ১৯৬৭-৬৯ সাল। রাজনীতির উত্তাল ঢেউ-এ স্কুল কলেজের পরিবেশও টলমল। ওই পরিবেশে আমিও কখন যে মিশে গেলাম ছাত্র পরিষদের মিছিলে তা মনে পড়ে না।” ছাত্র মিছিলের রাজনীতিই তাঁকে ১৯৮৪ সালে জেলা ছাত্রপরিষদের সভাপতির আসনে বসায়। প্রয়াত মন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের বদ্যানত্যায় খুব কম বয়সে মনোজকে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক করা হয় ১৯৮৮ সাল নাগাদ। তার পর ১৯৯১ সাল থেকে পর দু’ বার তিনি বহরমপুর পুরসভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে পূর্ত দফতরের দায়িত্ব সামলান। ওই রাজনৈতিক সাফল্যের উর্ধমুখি ‘গ্রাফ’ ১৯৯৮ সালের নভেম্বর নিম্নগামী হয়। ১৯৯৮ সালের পুরভোটে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে বহরমপুর পুরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বতা করেন। ওই ভোটে প্রবল অধীর-ঝড়ে নিজের জামানত খোয়ান। ফের কপাল খোলে ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মনোনীত নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৎকালীন কংগ্রেস বিধায়ক ‘হাত’ প্রতীকের মায়ারানী পালকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হন মনোজ চক্রবর্তী। দ্বিতীয় বারের বিধায়ক ‘হাত’ প্রতীকের মনোজ এ বার মন্ত্রী। |