ইসফাক আমেদ, ধনরাজ, মোহনরাজ, মণীশ মাখানিদের থেকে ফুটবলের নানা কলাকৌশল শিখে নিচ্ছিল ওরা। যদিও ওদের জীবন সাধারণ ঘরের ছেলে-মেয়েদের মতো মসৃণ নয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বেড়ে ওঠা এমনই এক ঝাঁক যৌনকর্মীর সন্তানের জন্য অ্যাকাডেমি গড়ে তুলতে উদ্যোগী হল দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের দক্ষিণ রামনগরে পঞ্চাশ বিঘা জমির ওপর যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েদের জন্য গড়ে উঠেছে একটি আবাসিক হোম। রাহুল বিদ্যানিকেতন নামের এই হোমটিতে এখন ৪০ জন ছেলে এবং ৩৪ জন মেয়ে রয়েছে। ওঁরা স্থানীয় রামনগর হাইস্কুলে পড়ে। সংগঠনের সচিব ভারতী দে বললেন, “যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েদের সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য ২০০০ সালে আমরা এই হোম গড়ে তুলি। আমাদের স্বপ্ন ছিল যৌনকর্মীর সন্তানরা আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির সন্তানের মতোই লেখাপড়া শিখবে।”
শুধু চর্চাই নয় ফুটবলে এদের মধ্যে কয়েক জন নজরও কেড়েছে। হোমে থেকে পড়াশোনা শিখছে দশম শ্রেণির সাজ্জাত আলি। গত বছর অনূর্ধ্ব ১৪ জাতীয় ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন বাংলা দলের সদস্য ছিল সাজ্জাত। হোমে না থাকলেও বারুইপুরে অনুশীলন করতে আসেন করণ পাসওয়ান। কালীঘাট হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রটি এ বারই অনূর্ধ্ব ১৩ বাংলা দলের হয়ে খেলে এসেছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ভক্ত করণ ভবিষ্যতে বড় ফুটবলার হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে মাকে নিয়ে অন্যত্র সুস্থ ভাবে বাঁচার।
হোমের ফুটবল কোচ বিশ্বজিৎ মজুমদার বললেন, “প্রথমে ছেলেদের ফুটবল শেখাতে শুরু করেছিলাম। এখন মেয়েরাও শিখছে। বাইরের ছেলেমেয়েরাও আসছে।
সাজ্জাত ও করণ ছাড়াও অনূর্ধ্ব ১৩ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া সুব্রত দাসও এখানে অনুশীলন করত।” প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে ব্যারেটো উৎসাহ যোগাতে এসেছেন অনেকেই। সম্প্রতি ইসফাকদের কাছে পেয়ে খুশিতে মেতে উঠেছিল ওরা। দু’টি ম্যাচ খেলা ছাড়াও টিপসও পেল খুদেরা। আই এফ এ পরিচালিত এ বারের নার্সারি ফুটবলে খেলবে এরা। চলছে দল গড়ার তোড়জোড়।
সাফল্যে উৎসাহী হয়ে হোমের পাশেই আলাদা করে জমি কিনে শুরু হয়েছে অ্যাকাডেমি গড়ে তোলার চেষ্টা। ইতিমধ্যে মাটি ফেলে জমি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কোচ বিশ্বজিৎবাবু বললেন, “শুধু ফুটবলই নয়, আরও কয়েকটি খেলার জন্য অ্যাকাডেমি গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রীড়া দফতরের কাছে ২৬ লক্ষ টাকার একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি।” ভারতীদেবী বললেন, “প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিক ভাবে দু’লক্ষ টাকা দেন। নতুন ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলব।”
ছবি: পিন্টু মণ্ডল্য
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.