পূর্ব কলকাতা
এসএসকেএম
নগদে দুর্ভোগ
কাল সওয়া ১০টা নাগাদ নাতিকে ভর্তি করানোর জন্য এসএসকেএমের ক্যাশ কাউন্টারে লাইন দিয়েছিলেন গড়বেতার বাসিন্দা সাহানারাবিবি। নাতি হৃদযন্ত্রের অসুখে ভুগছে। তাকে নিয়ে একাই এসেছেন। আউটডোরে বছর দশেকের নাতি বাবলুকে শুইয়ে রেখে টাকা জমা দিতে এসে মহা ফাঁপরে পড়েছেন তিনি। ওখানে একা একা ছেলেটা কী করছে এই ভাবনায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছটফট করছেন দিদিমা। অপেক্ষা ছাড়া উপায়ও নেই। টাকা জমা দিলে তবেই তো হবে ইসিজি। শুরু হবে চিকিৎসা।
টাকা জমা দেওয়ার লম্বা লাইনে আটকে পড়েছেন ধুপগুড়ির উজ্জ্বল বিশ্বাসও। শ্বাসকষ্টে কাতর ওঁর কাকা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু সেখানেও গেরো ক্যাশ কাউন্টারের বিশাল লাইন। নৈহাটির বাসিন্দা মণিমালা বসু তো বলেই ফেললেন, “আজ যদি মমতাদিকে সামনে পেতাম, তাহলে এই হয়রানির চিত্রটা দেখাতে পারতাম।”
রাজ্যের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা করাতে এসে এই সমস্যায় পড়তে হয় অধিকাংশ রোগীর আত্মীয়স্বজনকে। বিশেষ করে রোগী একা এলে তো চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। প্রায় ১২০০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশে মাত্র চারটি কাউন্টার। এক সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল চারটি কাউন্টারের দু’টি খোলা। ওখানে কর্মরত এক কর্মী জানালেন, একটি সব সময় বন্ধ থাকে। অথচ সেখানে কম্পিউটার বসানো আছে। বাকি তিনটির মধ্যে একটির ঝাঁপ প্রায়ই বন্ধ থাকে। স্বভাবত, দু’টি কাউন্টারে লম্বা লাইন ঘর ছেড়ে বাইরে চলে যায়। ক্যাশ কাউন্টারে কর্মরত ওই কর্মী বলেন, “টাকা দিতে আসা মানুষজনের অসুবিধার কথা সবই বুঝি। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। সুপারকে বার বার বলেছি কাউন্টার বাড়ান। আরও বেশি লোক দিন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।”

প্রায় ঘণ্টা দেড়েক লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিয়ে হাঁফ ছাড়লেন সাহানারাবিবি। তাঁর বক্তব্য, “এত দেরির কারণে নাতির কোনও ক্ষতি হলে কাকে দায়ী করব বলতে পারেন?”

কার্ডিওলজি বিভাগের রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসারের বক্তব্য, “বছরের পর বছর এ ভাবেই চলছে। এসএসকেএম হাসপাতালে এমনিতেই রোগীর চাপ অনেক বেশি। তাই ক্যাশ কাউন্টার আরও বাড়ানো দরকার।” ক্যাশ কাউন্টারে কর্মরত এক কর্মী বলেন, “তিনটি কাউন্টারে মোট ৭ জন কর্মী। ২৪ ঘণ্টাই কাউন্টার খোলা রাখতে হয়। রোটেশন ডিউটি। এত কম লোকে কী করে সম্ভব? সে কারণেই কখনও কখনও মাত্র দুটো চলে। লাইনও বেড়ে যায়।” ক্যাশ কাউন্টারের কর্মীদের বক্তব্য, “রোগীর এই দুর্ভোগের কথা হাসপাতাল প্রশাসনের কর্তারা সবই জানেন। কিন্তু তাঁদের ঘুম ভাঙছে না।” তাঁদের মুখেই শোনা গেল, ২০০৯ সাল থেকে এই সমস্যা বেড়েছে। বার বার কাউন্টারে লোক দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভুগছেন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা মানুষজন।
ধুপগুড়ির উজ্জ্বলবাবু সংবাদপত্রে দেখেছেন মুখ্যমন্ত্রীর আচমকা হাসপাতাল সফর। তাঁর বক্তব্য, “রেলমন্ত্রী হিসেবে মানুষের সুবিধায় চারি দিকে রেলের কাউন্টার খুলেছেন। এ বার এসএসকেএমের ক্যাশ কাউন্টারের সমস্যা নিশ্চয় তাঁর নজর পড়বে।”
ক্যাশ কাউন্টারে লম্বা লাইন পড়ার বিষয়টি হাসপাতাল প্রশাসনও ভাল ভাবেই জানেন। এ বিষয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের ডেপুটি সুপার দিলীপকুমার ঝা বলেন, “কর্মীর অভাবেই কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানো যায়নি। ওই কাউন্টার তো বেসরকারি সংস্থার কর্মীকে দিয়ে চালানো যায় না। তাই কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য
Previous Story

Kolkata

Next Story

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.