উত্তর কলকাতা:পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
নিত্য দুর্ভোগ
জট পাকানো পথ

ব্যস্ত রাস্তা, জনবহুল বাজার আর ঘিঞ্জি জনপদ। উত্তর শহরতলির সোদপুর স্টেশন রোড ও বারাসত রোডের চিত্রটা এক নজরে এই রকম। রাস্তার দু’ধারে উপচে পড়া পসরা নিয়ে সকাল-সন্ধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। আর বি টি রোড থেকে মধ্যমগ্রাম যাওয়ার জন্য শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এতটাই দুর্ঘটনাপ্রবণ যে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনার জেরে পথ অবরোধ বা রাস্তা বন্ধ লেগে থাকে।
বি টি রোডের উপর সোদপুর চৌমাথা থেকে সোদপুর স্টেশনের উড়ালপুল পর্যন্ত রাস্তাটিকে বলে সোদপুর স্টেশন রোড। আর উড়ালপুল পেরনোর পর থেকে মধ্যমগ্রাম পর্যন্ত রাস্তাটির নাম বারাসত রোড। বি টি রোডে সোদপুর চৌমাথা থেকে উড়ালপুল পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে ফুটপাথ থাকলেও বহু বছর ধরেই সেটি দোকান ও হকারদের হাতে বেদখল হয়ে গিয়েছে। এখন দোকান-বাজার নেমে এসেছে ফুটপাথ ছাড়িয়ে রাস্তায়। দুই লেনের ওই রাস্তা দু’টিকে সংযোগ করেছে সোদপুর স্টেশনের উড়ালপুলটি। স্টেশন রোডে ফুটপাথ থাকলেও সেটি বেদখল। বারাসত রোডে ফুটপাথের বালাই নেই। স্টেশন রোডে ডিভাইডার আছে, বারাসত রোডে সেটিও নেই। সন্ধ্যার পরে ঠিকমতো আলোও জ্বলে না।

সোদপুর স্টেশন থেকে চৌমাথা পর্যন্ত কয়েক হাজার দোকান। পুজো ও বিভিন্ন উৎসবের সময় এই রাস্তা ভিড়ে থিকথিক করে। তবে শিল্পাঞ্চলের বড় বাজারগুলির মধ্যে বিখ্যাত সোদপুর বাজার। স্থানীয় দোকানের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডও তাদের আউটলেট খুলেছে এখানে। কিন্তু দোকানে আসা ক্রেতাদের গাড়ি রাখার কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই দখল হওয়া রাস্তা ও ফুটপাথের আরও কিছুটা বেদখল ক্রেতাদের গাড়িতে।
হকারদের দাবি, তাঁদের বসার বিকল্প জায়গা নেই। আবার বড় বড় দোকানের মালিকদের অভিযোগ, দোকানের মুখ আটকে ফুটপাথ জুড়ে দোকান বসায় বড় দোকানগুলোরও ব্যবসা নষ্ট হচ্ছে। ক্রেতারা নাকাল হচ্ছেন ভিড় ঠেলে পছন্দসই জিনিস কিনতে। আর পথচারীদেরও দুর্ভোগের অন্ত নেই। ফুটপাথে দোকান. রাস্তায় গাড়ির ভিড়। তাঁদের অভিযোগ, দিনের পর দিন এই অবস্থা চলছে।
এই অঞ্চলের প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, এই শহরতলিতে আগে ফুটপাথ বলে কিছু ছিল না। রাস্তার ধারে ছোটখাটো দোকান ছিল। ১৯৭৫-এ জরুরি অবস্থা জারির পরে বহু দোকানপাট ভাঙা হয়। সত্তরের দশকের শেষে পুর-বাজার তৈরি করা হয়। সেখানে প্রায় ৮৫ জন দোকানদারের ঠাঁই হয়। এর পর তৈরি হল দেবী কর্নার ও ঠাকুর কর্নার সোদপুরের অন্যতম দু’টি হকার্স মার্কেট।
সোদপুরের পথিপার্শ্বস্থ দোকানদার সমিতির সম্পাদক বিজন ভৌমিক বলেন, “ফুটপাথে বসা হকাররা নিরুপায়। অনেকের অনেক অসুবিধার কথা জেনেও তাঁদের পেটের টানে বসতে হয়। বছর পনেরো আগেও সংখ্যাটা যা ছিল, এখন সংখ্যাটা তার কয়েক গুণ বেশি।” তিনি বলেন, “১৯৮৮ সালে এক বার ফুটপাথ থেকে দোকানদারদের হঠিয়ে দেওয়া হয়। তখন রাস্তাটা আবার আগের চেহারায় ফিরে গিয়েছিল। পরে তাঁরা আবার বসতে বাধ্য হয়েছেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উড়ালপুলের নীচে বিবেকানন্দ বাজারে ৩০০ জন দোকানদারকে পাট্টা দেন তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী। তাতেও সকলের স্থান সঙ্কুলান হয়নি।”

সোদপুর স্টেশন রোডের এই সমস্যা উড়ালপুল ছাড়িয়ে বারাসত রোডেও। পানিহাটি হাসপাতাল ছাড়িয়ে ব্যস্ত রাস্তার উপর বসে ঘোলা বাজার। সকালবেলা এই বাজারে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিড়ে যানজট তৈরি হয়। আলু, পটল, সব্জির দোকানের পাশে কাটা হচ্ছে মুরগি, খাসিও। সোদপুরের বাসিন্দা চিত্রা রায়ের কথায়: “এত দোকান হওয়ার সুবিধা যেমন আছে, অসুবিধাও কম নয়। ফুটপাথ দখল হওয়ায় সোদপুর স্টেশন রোড দিয়ে যাতায়াত করাটাই দুষ্কর। বিশেষ করে সন্ধ্যাবেলা খুব অসুবিধা হয়। উড়ালপুল থেকে নামার মুখে এত যানজট হয় যে রাস্তা পার হতে অনেক সময় লেগে যায়।”
পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের চারণ চক্রবর্তী বলেন, “পথের ধারে বসা এই সব হকাররা বৈধ নন। রাস্তার উপর গাড়ি রেখে যানজট তৈরি করাও ঠিক নয়। কিন্তু, রাস্তাটি যেহেতু পূর্ত দফতরের তাই আমরা সরাসরি হকারদের সরাতে পারি না। তবে পূর্ত দফতর সরাসরি উচ্ছেদ অভিযানে নামলে আমরা সহযোগিতা করি।”
পানিহাটির বর্তমান বিধায়ক তৃণমূলের নির্মল ঘোষ বলেন, “সোদপুরের স্টেশন রোড ও বারাসত রোডের রাস্তা দখল নিয়ে সমস্যা আছে জানি। ফুটপাথ ও রাস্তা বেদখল হতে দেওয়া যাবে না। আমরা নতুন সরকার গড়লাম। এত বছর ধরে চলে আসা ব্যবস্থা বদলাতে একটু সময় লাগবে। কিন্তু শহরতলির দু’টি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এই সমস্যা জিইয়ে রাখা যাবে না। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।” যদিও পূর্ত বিভাগের উত্তর কলকাতা ডিভিশনের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার (২) স্নেহাশিস সাহা বলেন, “সরকারি দফতরগুলির সমন্বয়ের পরেই যে কোনও রাস্তা বেআইনি দখলমুক্ত করা যায়। তবে মাঝে নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলায় এ ক্ষেত্রে এখনও সে রকম কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ
First Page

Kolkata

Next Story

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.