পূর্ব কলকাতা
সঙ্কটে বাসিন্দারা
দূষণে ডুব
য়ানজুলির জল আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই জল উপচে ঢুকছে পুকুরে। ফলে সেই জলও দূষিত হয়ে পড়েছে। ছাড় পায়নি চাষের জমিও। দূষিত জলে ভরা মাঠে চাষ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ, কয়েকটি কারখানা থেকে বেরনো বর্জ্য জল। এমনই অভিযোগ রসপুঞ্জ ও সামালি এলাকার বাসিন্দাদের।
ঠাকুরপুকুর বাজার পেরিয়ে বাখরাহাট রোডের দু’পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় কারখানা। তৈরি হয়েছে অসংখ্য আবাসনও। কিছু গ্রামও রয়েছে। সামালি থেকে রসপুঞ্জ পর্যন্ত এই সব অঞ্চলের জলের অন্যতম উৎস ছিল নয়ানজুলি আর পুকুর। তা ছাড়া নয়ানজুলি ও পুকুরে মাছ চাষও হত। অনেকে মাছ চাষ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থানীয় কয়েকটি কারখানার বর্জ্য জল এই নয়ানজুলি ও পুকুরে পড়ছে। আগে এই নয়ানজুলিগুলির সঙ্গে চড়িয়াল খালের যোগ ছিল। কিন্তু এখন তা নেই। কয়েকটি নয়ানজুলি আবার বুজেও গিয়েছে। ফলে বর্জ্য জল নয়ানজুলি ও পুকুরে জমে পচে যাচ্ছে। সেই জল উপচে চাষের জমিতেও ঢুকে পড়ছে। রসপুঞ্জের বাসিন্দা বিমল সর্দার বলেন, “জল ঢুকে পুকুরের মাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চাষের জমিও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” সামালির বাসিন্দা ওসমান বলেন, “যে জমিতে ওই জল ঢুকেছে সেখানে আর চাষ করা যাচ্ছে না।” সমস্যা হচ্ছে প্রাত্যহিক কাজকর্মেও। স্থানীয় গৃহবধূ সাবিরা বিবির কথায়: “আগে পুকুর ও নয়ানজুলির জলে বাসন ধোয়া, স্নান, কাপড় কাচা, এমনকী, রান্নাও হত। এখন আর সম্ভব নয়। জল গায়ে লাগলেই চুলকোয়।”
এ বিষয়ে স্থানীয় কারখানা মালিকদের বক্তব্য মোটামুটি এক। একটি কারখানার মালিক সুমন্ত রায় বলেন, “আমার কারখানায় বর্জ্য জলকে পরিশুদ্ধ করার জন্য প্লান্ট রয়েছে। পরিশুদ্ধ করেই জল নয়ানজুলিতে ফেলা হয়। জল বেরতে না পারায় পচে যাচ্ছে।” অন্য একটি কারখানার মালিক অনিরুদ্ধ কাজারিয়াও বর্জ্য জলকে পরিশুদ্ধ করে নয়ানজুলিতে ফেলা হয় বলে জানান। তিনি বলেন, “ট্রিটমেন্ট করেই জল ফেলা হয়। আগে খালের সঙ্গে যোগ থাকায় জল বেরিয়ে যেত। এখন বেরতে পারে না। জল বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেই সমস্যা মিটে যাবে।” অন্য এক কারখানার মালিক কামেশ্বর সিংহের কথায়: “কারখানার বর্জ্য জলের জন্য এই অবস্থা হচ্ছে না।” যদিও কারখানা-কর্তৃপক্ষের এই দাবি মানতে নারাজ বাসিন্দারা।
অঞ্চলটি বিষ্ণুপুর (পশ্চিম) বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। এলাকার নব-নির্বাচিত বিধায়ক দিলীপ মণ্ডল বলেন, “বিষয়টা নিয়ে খোঁজখবর নেব। সাধারণ মানুষের কোনও ক্ষতি বরদাস্ত করা হবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই এলাকা থেকে এখনও কোনও অভিযোগ আসেনি। তবুও স্থানীয় প্রশাসনকে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাধিপতি তৃণমূলের শামিমা শেখ বলেন, “সমস্যার কথা জানি। দীর্ঘ দিন নয়ানজুলিগুলির সংস্কার না হওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে। দ্রুত নয়ানজুলিগুলির সংস্কার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নয়ানজুলির সংস্কার হলে বর্জ্য জল খালে চলে যাবে।”
ছবি: পিন্টু মণ্ডল
Previous Story

Kolkata

Next Story

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.