পূর্ব কলকাতা
পুরভবন কবে
ভোগান্তির প্রতীক্ষা
পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় ছ’বছর। কিন্তু নির্মাণকাজ শুরু হয়নি এখনও। পুরভবন নির্মাণের জন্য রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা জমি কিনে রেখেছে ২০০৫ সালে। তা সত্ত্বেও পুরসভার কাজ এখনও চলছে ভাড়া বাড়িতে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিজস্ব পুরভবন না-থাকায় নানা কাজে পুরসভায় গিয়ে অসুবিধায় পড়তে হয় নাগরিকদের। পুরপ্রধানের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও রোদ-বৃষ্টির মধ্যে পুরভবনের উঠোনে লাইন দিয়ে দাঁড়াতে হয়। বসার ব্যবস্থাও নেই। বাসিন্দাদের দাবি, নতুন পুরভবন তৈরি হলে তাঁদের সমস্যা মিটবে। ভাড়া বাবদ অর্থও গুণতে হবে না পুরসভাকে।
রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার বর্তমান কাজকর্ম চলছে পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাড়িতে। বাড়িটি একটি ট্রাস্টি বোর্ডের। দোতলা বাড়িটির কয়েকটি ছোট ছোট ঘর আর ঘিঞ্জি সিঁড়িই পুরকর্মীদের কাজের জায়গা। কাজের দিন ঘরগুলিতে চেয়ার-টেবিল-আলমারির ভিড়ে মানুষের নড়াচড়ার জায়গা অবধি থাকে না। পুরপ্রধানের সাক্ষাৎপ্রার্থীদের দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পুরপ্রধানের ঘরের সামনে প্রায় খোলা আকাশের নীচে। বৃষ্টি নামলে অপরিসর সিঁড়িতে লোকের ভিড়ে ওঠা-নামাও দুরূহ হয়ে ওঠে।
পুরসভার আরও কিছু কাজকর্মের জন্য পুরনো এই বাড়িটির পিছনে আরও দু’টি বাড়ির একটি করে তল ভাড়া নিয়েছে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা। এ ছাড়া পুরসভার জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া ও পুর কর আদায়ের জন্য কেষ্টপুর, জ্যাংড়া, তেঘরিয়া ও বাবলাতলায় রয়েছে আরও কয়েকটি কার্যালয়। জায়গার অভাবে এ ভাবেই পুরসভার কাজকর্ম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে চলছে নানা জায়গায়। রাজারহাটের বাসিন্দা পুলক মণ্ডল বললেন, “পুরপ্রধানের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। বসার জন্য কোনও ছাউনি ঘেরা জায়গা নেই। অপেক্ষা করতে করতে গরমে অসুস্থ হয়ে বাড়ি চলে আসি। পুরপ্রধানের সাক্ষাৎপ্রার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট ঘর থাকলে ভাল হয়।”
নিজস্ব পুরভবন নির্মাণের জন্য রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা ভিআইপি রোড আর নিউটাউনগামী মেজর আর্টারিয়াল রোডের চিনার পার্ক মোড়ের মাঝে রাস্তার ধারে ৮৪ কাঠা জমি কিনেছে হিডকো-র কাছ থেকে। পুরসভা সূত্রে খবর, ওই জমিতে পুরভবনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ করা হবে ‘তথ্যপ্রযুক্তি ভবন’। ওই ভবন তৈরির জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন ‘তথ্যপ্রযুক্তি’ কোম্পানিকে ডাকা হবে। তার পর নির্দিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘পুরভবন’ আর ‘তথ্যপ্রযুক্তি ভবন’ নির্মাণ করা হবে। পুরভবন নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা আর সম্ভাব্য খরচের পরিকল্পনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ‘বেঙ্গল কনসালটেন্সি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস’ নামে একটি সংস্থাকে। পুরভবন তৈরির জন্য পুর বাজেটে অর্থও বরাদ্দ করা হয়েছে।

কিন্তু নতুন পুরভবন নির্মাণ শুরু হবে কবে, এ প্রশ্নের উত্তরে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার পুরপ্রধান সিপিএমের তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই জমিতে ‘তথ্যপ্রযুক্তি ভবন’-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ছয়তলা ভবন তৈরি হবে। প্ল্যান হয়ে গিয়েছে। যৌথ উদ্যোগের জন্য রাজ্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। ওই অনুমতির জন্য জমির চরিত্র বদলের প্রয়োজন হয়। জমির মিউটেশন হয়েছে। চরিত্র বদলের জন্য জরুরি ভিত্তিতে চেষ্টা চলছে। সাক্ষাৎপ্রার্থীদের জন্য উঠোনে ত্রিপল টাঙিয়ে অস্থায়ী ছাউনি করা যায় কি না দেখছি। যেহেতু ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পত্তি তাই স্থায়ী ছাউনি তৈরিতে সমস্যা রয়েছে।” পুরসভায় বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের মনোরঞ্জন ঘোষ বললেন, “পুরসভার সব কাজ এক জায়গায় না হওয়ায় সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুরপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করব।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ
Previous Story

Kolkata

Next Story

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.