পূর্ব কলকাতা
বাইপাস
ঝুঁকির মোড়
সিগন্যাল চালু হল। গাড়ি নিয়ে চারমাথার মোড় পেরোতে গিয়েই ব্রেকে পা। কারণ উল্টো দিক থেকে ধেয়ে আসছে একটি সরকারি বাস। রোজ এ ভাবেই চারমাথার মোড় পার করেন গাড়ি চালকেরা। অথচ ট্রাফিক কর্মী থেকে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল সবই আছে।
এমনই বিচিত্র ব্যবস্থা চালু আছে বেলেঘাটা-ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের মোড়ে। পথচারী এবং গাড়িচালকদের অভিযোগ, যতই ট্রাফিক কর্মীরা থাকুন না কেন, যে কোনও দিন ওই মোড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে ওই মোড়ের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুক প্রশাসন। পথচারীদের অভিযোগ, রাস্তা পারাপার করাও মুশকিল।
স্থানীয় বাসিন্দা কমল রায় বলেন, “সমস্যা মূলত অফিসটাইমে বেশি হয়। কিন্তু রাস্তায় গাড়ি কম থাকলেও সমস্যা কমে না। কারণ ট্রাফিক ব্যবস্থা। একই সঙ্গে একাধিক দিকের গাড়ি চালু করা হয়। ফলে সে সময় রাস্তা পারাপার করাও সমস্যার হয়।
বেলেঘাটা-ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের মোড় থেকে এক দিকে বেলেঘাটা মেন রোড অন্য দিকে বিধাননগরে যাতায়াত করা যায়। ফলে এক দিকে বেলঘাটা মেন, অন্য দিকে বিধাননগর, আবার ওই মোড় থেকে বাইপাস ধরে সায়েন্স সিটি, অন্য দিকে বাইপাস ধরে উল্টোডাঙার দিকে গাড়ি যাতায়াত করে।
যখন শুধু বাইপাসের গাড়িগুলি চালু হয়, অর্থাৎ উল্টোডাঙা থেকে সায়েন্স সিটি অভিমুখে আপ-ডাউনে গাড়ি চলাচল করে, সে সময় বিধাননগর থেকে সায়েন্স সিটি অভিমুখে বেরনো গাড়ি যাতায়াত করে। আবার উল্টোডাঙা থেকে বিধাননগর এবং সায়েন্স সিটি থেকে বেলেঘাটামুখী গাড়িগুলিও চলাচল করে। ফলে সে সময় কার্যত রাস্তা পারাপার করা মুশকিল।
সমস্যা বাড়ে যখন বেলেঘাটা মেন রোড থেকে সায়েন্স সিটি অভিমুখের গাড়িগুলি ছাড়া হয়, কারণ সে সময় বিধাননগর থেকে গাড়িগুলি একই সঙ্গে সায়েন্স সিটির দিকে, উল্টোডাঙার এবং বেলেঘাটা অভিমুখে যায়। ফলে এই মোড় পার করতে গিয়ে মুখোমুখি পড়ে গাড়িগুলি। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে।
রোজ ওই পথেই বিধাননগর থেকে বাড়ি ফেরেন বেলেঘাটার বাসিন্দা দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিচিত্র ব্যবস্থা। আমি যখন বিধাননগর থেকে বেলেঘাটা মেন রোডের দিকে যাচ্ছি, সে সময় বেলেঘাটা মেন রোড থেকে বাইপাসমুখী গাড়িগুলি ছাড়া হয়। ফলে বাইপাসের উপর গিয়ে গাড়ি থামাতে হয়, সুযোগ পেলে তখন বেলেঘাটার রাস্তায় ঢুকে পড়ি। অর্থাৎ যে সময় বিধাননগর থেকে বেরোনো গাড়িগুলি ছাড়া হচ্ছে, ঠিক সে সময় বেলেঘাটা থেকে বেরোনো গাড়িগুলিও ছাড়া হয়। ফলে মুখোমুখি সংঘর্ষের পরিস্থিতি এড়িয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।

ওই মোড়ে নেমে রোজ বেলেঘাটায় অফিসে যান বিরাটির বাসিন্দা সুশোভন দাস। তিনি বলেন, “যখন বেলেঘাটা ও বিধাননগর থেকে বেরোনো গাড়িগুলি ছাড়া হয়, সে সময় রাস্তাও পারাপার করেন পথচারীরা। আমিও তেমন সময়েই রাস্তা পার হই। তবে অসতর্ক হলেই যে কোনও সময়ে গাড়ির ধাক্কা খেতে হবে। অথচ ট্রাফিক কর্মীরা ওই মোড়ে থাকেন সর্বদাই।”
ওই মোড়ের ট্রাফিক কর্মীরা অবশ্য জানিয়েছেন দুর্ঘটনার নজির নেই। বেলেঘাটা এবং উল্টো দিকের বিধাননগর থেকে বেরোনো গাড়িগুলি একই সঙ্গে ছাড়া হলেও তাঁরা সর্বদা লক্ষ্য রাখেন। তাঁদের দাবি, সমস্যা খুব বেশি হয় না। যদিও তাঁদের দাবি মানতে নারাজ পথচারীরা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে কলকাতা ট্রাফিকের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আলাদা আলাদা করে বিধাননগর ও বেলেঘাটা থেকে বেরোনো গাড়িগুলিকে ছাড়া হলে রাস্তা পারাপারে সময় বেশি লাগে। তখন পথচারীদের একাংশ আপত্তি করেন। যে কারণে রাস্তার মাঝে ট্রাফিক কর্মী রেখে দুটি দিকের গাড়ি একত্রে ছাড়া হয়। ট্রাফিক কর্মী না থাকলে সমস্যা হয়। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ
Previous Story

Kolkata

Next Story

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.