সচেতনতা কোথায়
ব্রাত্য উড়ালপথ
ব্যস্ত রাস্তায় মোড়ে বিপজ্জনক ভাবে রাস্তা পারাপার চলছে। কিন্তু কাছেই আছে উড়ালপুল। ছবিটি অতি পরিচিত। মাঝেমধ্যেই এর জন্য দুর্ঘটনা ঘটছে। সচেতনতা বাড়াতে প্রচারও চলেছে। কিন্তু সমস্যা রয়ে গিয়েছে যে-কে-সেই। প্রশাসন এর জন্য পথচারীদের সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করেছে। যদিও পথচারীরা উড়ালপুল ব্যবহারের নানা অসুবিধার কথা বলেছেন।
পুরসভা সূত্রে খবর, একটি উড়ালপুল তৈরি করতে ৭০ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এসক্যালেটর বা লিফ্ট বসালে খরচ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। এর পরেও অধিকাংশ পথচারী উড়ালপুল ব্যবহার করেন না। যেমন, উল্টোডাঙার মোড়ের উড়ালপুলটি। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, অল্প সংখ্যক পথচারীই এটি ব্যবহার করেন। অধিকাংশ পথচারীই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হন। পথচারী নির্মল দত্ত বলেন, “তাড়াতাড়ি করতে অধিকাংশ পথচারীই এই উড়ালপুল ব্যবহার করেন না। এখানে লিফ্ট বা এসক্যালেটর বসালে ভাল হয়। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের সুবিধা হয়।” এখান থেকে সামান্য এগিয়ে রয়েছে টাটা কমিউনিকেশন সেন্টারের সামনের উড়ালপুলটি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই উড়ালপুলটি কার্যত কেউই ব্যবহার করেন না। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটির অবস্থাও ভাল নয়। এক দিকের সিঁড়ির মুখ আটকে রমরমিয়ে চলছে ভাতের হোটেল ও চায়ের দোকান।

উল্টোডাঙা

রাজাবাজারে উড়ালপুলটিও কার্যত অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। এর এক দিকের সিঁড়ির পাশে পুরসভার ভ্যাট এবং ঝুপড়ি রয়েছে। পথচারীদের অভিযোগ, এই অবস্থার জন্য ইচ্ছে থাকলেও এটি ব্যবহার করা যায় না। নীলরতন সরকার হাসপাতালের সামনেও একটি উড়ালপুল রয়েছে। এক দিকের সিঁড়ির মুখ আগলে বসে থাকেন ফল বিক্রেতারা। এই উড়ালপুলটি অবশ্য বেশ কিছু পথচারী ব্যবহার করেন। তবে এই উড়ালপুল নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। যেমন, নিত্যযাত্রী শৈবাল ধর বলেন, “এত দোকান আর মানুষের ভিড় ঠেলে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে যথেষ্ট সময় লাগে। পরিশ্রমও হয়।”
সিঁড়ি ভাঙার সমস্যা মেটাতে পার্ক সার্কাসের উড়ালপুলে লিফ্ট বসানো হয়েছিল। সোম থেকে শুক্রবার, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে লিফ্ট দু’টি। এই কারণে এই উড়ালপুল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি। শনিবার অর্ধেক ও রবিবার লিফ্ট সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। প্রতি দিন লিফট চালানোর দাবি করেছেন পথচারীরা।
শিয়ালদহ
রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের উড়ালপুলে এসক্যালেটর ও লিফ্টেরও ব্যবস্থা রয়েছে। তবু অধিকাংশ পথচারীর এই উড়ালপুলটি ব্যবহারে অনীহা রয়েছে। এখান দিয়ে নিত্য যাতায়াত করেন দেবাশিস ঘোষ। তিনি বললেন, “রাস্তা পেরোতে সময় কম লাগে বলে বেশির ভাগ পথচারী রাস্তা পেরিয়েই যান।” ঢাকুরিয়া দক্ষিণাপনের সামনের উড়ালপুলটির বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। উড়ালপুলে ও সিঁড়িতে গর্ত হয়ে গিয়েছে। খসে পড়ছে ব্রিজের নীচের চাঙড়। শ্যামল নস্কর এই পথে প্রতি দিন যাতায়াত করেন। তাঁর কথায়:, “এই উড়ালপুলের নীচ দিয়ে যাতায়াত করাও বিপজ্জনক। তা ছাড়া সিঁড়ির মুখ আটকে রয়েছে ফলের দোকান। জেব্রা ক্রসিং থেকে উড়ালপুলের দূরত্বও অনেক।”
পুরসভার সূত্রে খবর, উড়ালপুল নির্মাণে সরকারি অর্থ ব্যয় হয় না। বোর্ড মিটিংয়ে প্রস্তাব পাশ হলে টেন্ডার ডেকে বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। নির্মাণের ব্যয় এবং চুক্তির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্ব পায় ওই সংস্থা। বিজ্ঞাপনের থেকে যা আয় তা ওই সংস্থাই পায়। পুরসভা শুধু বিজ্ঞাপনের জন্য কর পায়। কলকাতা পুরসভার বিজ্ঞাপন বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়: “উড়ালপুল থেকে পুরসভা সামান্য বিজ্ঞাপন কর পায়। কোনও কোনও উড়ালপুল থেকে সেটুকুও মেলে না।”
ঢাকুরিয়া

ডি সি ট্রাফিক দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উড়ালপুল ব্যবহারের জন্য মানুষকে আমরা অনুরোধ করতে পারি। কিন্তু জবরদস্তি করতে পারি না। নিয়ম না মানলে পাঁচ থেকে পঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। বছরে গড়ে প্রায় পঁচিশ হাজার কেস হয়। তবে শুধু আইন করে এই সমস্যার সমাধান হবে না। দরকার সচেতনতার। এর জন্য আরও প্রচার চালাতে হবে।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সব উড়ালপুলগুলিতে লিফ্ট ও এসক্যালেটর বসানোর চিন্তা করা হচ্ছে। তা হলে বেশি মানুষ সহজে উড়ালপুল ব্যবহার করতে পারবেন।”

Previous Story

Kolkata

Next Story

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.