|
|
|
|
উদ্যান প্রায় উধাও শহর থেকে, বলছে সমীক্ষা |
মিলন দত্ত ² কলকাতা |
কলকাতায় অন্তত ১৫টি ওয়ার্ডে কোনও পার্কের অস্তিত্বই নেই। ২৪টি ওয়ার্ডে রয়েছে মাত্র একটি করে পার্ক। এ শহরে যতগুলি মাদার ডেয়ারির বুথ রয়েছে, তার সবই পার্কের মধ্যে। সম্প্রতি কলকাতার ১৪১টি ওয়ার্ডে সমীক্ষা চালিয়ে ৫১৫টি ছোট-বড় পার্কের হদিস মিলেছে। তবে পুরসভার তালিকাভুক্ত বহু পার্ক খুঁজেই পায়নি ওই সমীক্ষক দল। সেখানে গ্যারাজ, এমনকী ফ্ল্যাট বাড়িও তৈরি হয়ে গিয়েছে। কোথাও আবার হয়েছে ইমারতি সামগ্রী রাখার জায়গা, বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার, টেলিফোনের জংশন। কয়েকটি পার্কে আবার কলকাতা পুরসভাই বাড়ি বানিয়ে বিয়ে বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দিচ্ছে।
কলকাতার মাত্র ৫% জায়গা জুড়ে পার্ক আর উদ্যান। তবে সেই পাঁচ শতাংশের অর্ধেকটা আবার ময়দান। অর্থাৎ, শহরের মাত্র ২.৫% জায়গায় আসলে রয়েছে উদ্যান। সেটুকুর বেশির ভাগই আবার কংক্রিটে ঢাকা। বছর দশেক আগে পুরসভার করানো একটি সমীক্ষা থেকে এই তথ্য জানা গিয়েছিল। শহরের মুক্ত সবুজের এই বেহাল দশা একটুও বদলায়নি। বরং খারাপ হয়েছে আরও। তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, ১৫টি ওয়ার্ডে বেশ কিছু নতুন পার্কেরও হদিস মিলেছে। সেগুলি অবশ্য সবই দক্ষিণ এবং পূর্ব কলকাতার সংযুক্ত এলাকায়।
তবে শহরে মোট কতগুলি পার্ক আছে, তার হিসেব নিয়েও বিস্তর গণ্ডগোল। পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার জানালেন, কলকাতায় পার্ক আছে ‘৬৫৩টির মতো’। অথচ পুরসভার কাছে ৪৮৬টি পার্কের একটি তালিকা রয়েছে। আবার ২০০১ সালে পুরসভা যে সমীক্ষাটি করিয়েছিল, সেখানে ২৮৬ পার্কের হিসেব রয়েছে। সর্বশেষ সমীক্ষায় পার্কের সংখ্যা ৫১৫। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
গবেষণামূলক ওই সমীক্ষাটি করেছে ‘সেন্টার ফর কনটেম্পোরারি কমিউনিকেশনস’ নামে একটি সংগঠন। এই সমীক্ষার পাশাপাশি কলকাতা পুর-এলাকার পার্কগুলিকে চিহ্নিত করে একটি মানচিত্রও তৈরি করেছে বলে জানালেন সেন্টারের অধিকর্তা মল্লিকা জালান। আজ, শনিবার সেই মানচিত্রটি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করবেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পুরসভারই করার কথা, এ কথা মেনে নিয়ে দেবাশিস কুমার বলেন, “শহরের পার্ক নিয়ে ওই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি ওঁরা আমাদের দেবেন বলে জানিয়েছেন। পার্ক সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ওই তথ্যগুলি আমাদের কাজে লাগবে।”
মল্লিকা জালান বললেন, “শহরকে সবুজ প্রাণোচ্ছলতায় ফেরাতে পার্কগুলির উপরেই জোর দিতে চাই। সেগুলি সংরক্ষণে এলাকাবাসীর অংশগ্রহণ কতটুকু, তা-ও খোঁজা হয়েছে এই সমীক্ষায়।” এর পরে তাঁরা পুরসভার সহযোগিতায় সেরা পার্কের একটি প্রতিযোগিতা করতে চান। শহরে একটি আদর্শ পার্ক গড়ে তোলারও পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
পার্কগুলি প্রাণবন্ত করে তুলতে পারলে কলকাতা দৃশ্যত আরও সবুজ ও প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠবে। সেন্টারের পক্ষে তপতী ঘোষ বলেন, “পার্কের উন্নয়নের কাজের সঙ্গে আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের যুক্ত করতে চাই।” বহু পার্ক কংক্রিটে ঢেকে গিয়েছে। তাই এই কাজের অনেকটাই করতে হবে পুরসভার সাহায্য নিয়ে। পুরসভা অবশ্য পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। কিছু পার্কে জলের কোনও ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। সেখানে তাই কোনও সবুজ তৈরি সম্ভব নয়। অনেক বড় বড় পার্কে শিশু, মহিলা বা প্রবীণদের জন্য পৃথক জায়গা তৈরির নামে খাঁচায় বন্দি হয়ে গিয়েছে সবুজ।
পার্কের এই বন্দিত্ব ঘোচাতে পারে শুধু পুরসভাই। |
|
|
|
|
|