রমনাবাগানের মিঠে জলে মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে রাজা

নোনা জলের কুমির কি মিঠে জলে থাকতে পারে? বর্ধমান রমনাবাগান মিনি জু-তে রাখা কুমির নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই একজোড়া স্ত্রী-পুরুষ কুমির ছাড়া হয়েছিল এখানকার জলাশয়ে। পুরষটির নাম রাজা, স্ত্রীটির রানি। কিন্তু মাস কয়েক আগে স্ত্রী কুমির রানির মৃত্যু হয়। আর তার পর থেকেই এই প্রশ্ন উঠেছে।
কিন্তু তার জবাব মেলেনি রমনাবাগান কর্তৃপক্ষের তরফে।
বনবিভাগের এই ক্রোকোডাইল এনক্লোজারের গায়ে দু’টি বোর্ড লাগানো। বড় ও নতুন বোর্ডটিতে লেখা আছে, কুমিরগুলি মোহনার কুমির। অপেক্ষাকৃত পুরনো ও আকারে ছোট আরও একটি বোর্ড রয়েছে এনক্লোজারের অন্য পাশে। সেখানে আবার লেখা, এই কুমিরগুলি নোনা জলের। নতুন বোর্ডটিতে আরও বলা হয়েছে, পুরুষ কুমিরটির গায়ের রঙ তুলনামূলক ভাবে বেশি কালো। তার জন্ম ১৯৮০ সালে। দৈর্ঘ্য ২.৮৮ মিটার। ওজন ১১২ কেজি। স্ত্রী কুমিরটির জন্ম ১৯৮৩ সালে। তার গায়ের রঙ অপেক্ষাকৃত সাদা, দৈর্ঘ্য ২.৬৫ মিটার, ওজন ১০২ কেজি।
রমনাবাগান ক্রোকোডাইল এনক্লোজারের কাছে দুপুরে ঘোরাফেরা করে দেখা গিয়েছে, জীবিত ও একমাত্র পুরুষ কুমির রাজা পাড়ের কাছেই ঘোরাফেরা করছে। অতিরিক্ত শ্যাওলা জমায় জলাশয়ের জল সবুজে পরিণত। জলও বেশ কমে গিয়েছে। বনবিভাগের এক কর্মী জানালেন, দীর্ঘ দিন বৃষ্টি হয়নি বলে জলাশয়ের জল দ্রুত কমে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে শ্যালো পাম্পের সাহায্যে জল ঢালা হয় সেখানে। কিন্তু যত দিন রানি বেঁচে ছিল, তত দিন রাজাকে বিশেষ একটা জলের বাইরে দেখা যেত না। রানিকে দেখেই মনোরঞ্জন হত দর্শকদের। কিন্তু রাজাকে এখন পাড়ের কাছে ঘনঘন ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। কেন? বন বিভাগের কর্মীদের কথায়, সম্ভবত ওই পুরুষ কুমিরটি জলের ভিতরে থাকতেই পারছে না। জল গরম হয়ে যাওয়া এর কারণ হতে পারে। অথবা, অতিরিক্ত শ্যাওলা জমে জলের ভিতরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমেছে।

নিজস্ব চিত্র।
মোহনায় জোয়ার-ভাটার মধ্যে বসবাসকারী কুমির কী করে বর্ধমানের মিঠে জলে বাঁচে? বর্ধমানের বনাধিকারিক গোপালচন্দ্র কাজুরির কথায়, “আরে! মরুভূমির মানুষ কি উত্তর মেরুতে গিয়ে বাঁচে না? কিছু দিন হয়তো সমস্যা হয় মানিয়ে নিতে। পরে সব ঠিক হয়ে যায়।’’ বর্ধমানের রেঞ্জার আখতার উজ্জামান বলেন, “কুমিরগুলো মিষ্টি জলে কত দিন বাঁচে সেটাই তো দেখা হচ্ছে।” বনবিভাগ সূত্রে বলা হয়েছে, সুন্দরবনের ভগবৎপুর কুমির প্রকল্প থেকে কুমির দু’টি নিয়ে আসা হয় রমনাবাগানে।
ক্রোকোডাইল এনক্লোজারের কাছে গিয়ে দেখা গেল, রাজার মাথা ও লেজের একাংশ সাদা হয়ে গিয়েছে। কেন এমন হল? উত্তর দেওয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি রমনাবাগানে। মিনি জু’র প্রবেশ পথে এক পশু চিকিৎসকের নামধাম লেখা থাকলেও তাঁর দেখা মেলেনি। রাজ্যের সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ দীপক মিত্র অবশ্য বলেন, “নোনা জলের কুমিরদের মিঠে জলে ছাড়লে তাদের আয়ু কমে যায়। কারণ নোনা জল বা মোহনার কুমির ক্যালসিয়াম সংগ্রহ করে কাঁকড়া খেয়ে। ফসফরাস পায় সামুদ্রিক মাছ থেকে। মিঠে জলে গরুর মাংস, মিষ্টি জলের মাছ ছাড়া অন্য কিছু তারা খেতে পায় না। যথেষ্ট ক্যালসিয়াম, ফসফরাস না পেয়েই অপুষ্টির অভাবে তারা মারা যায় অকালে। কালো কুমিরের শরীর সাদা হয়ে যাচ্ছে, কারণ তার শরীরে রক্তাল্পতা ঘটছে।”
রানি মারা যাওয়ার পরে বনবিভাগ জানিয়েছিল, এই মৃত্যু বার্ধক্যজনিত কারণে। রাজা কত দিন আর বাঁচবে তারও ঠিক নেই। তার মৃত্যুর পরে বনবিভাগের কর্তারা কী অজুহাত দেবেন, কে জানে!
First Page Jibjagat Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.