দফতরের একটি ছোট নার্সারি ছিল। কিন্তু সেখানে মূলত আকাশমণি, মেহগনির মতো বড় গাছের চাষ হত। কিন্তু ২০০৯ সালে ডুমুরজলায় আগাছার জঙ্গলে ভরা ওই জায়গাটিকে নতুন ভাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা শুরু করে জেলা বন দফতর। দফতরের কর্তারা সিদ্ধান্ত নেন, পুরো জায়গাটি কাজে লাগিয়ে সেখানে একটি অত্যাধুনিক মানের নার্সারি গড়ে তোলা হবে। যেখানে বড় গাছের পাশাপাশি ঘর সাজানোর গাছের চাষ বেশি পরিমাণে করা হবে। এমন পরিকল্পনা করা হল কেন? জেলার বনাধিকারিক গৌতম চক্রবর্তী বলেন, “হাওড়া শহরাঞ্চলে ফাঁকা জমি কম থাকায় বড় গাছের চাহিদা ক্রমশ কমে আসছিল। কিন্তু শহরাঞ্চলেও সবুজের প্রয়োজন হওয়ায়, পরিকল্পনা করা হয় শহরের প্রতিটি বাড়ির ভিতরে গাছ পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগে তৈরি সে রকম কোনও নার্সারি জেলায় ছিল না, যেখানে বাড়ির ভিতরে রাখার মতো গাছের চাষ হয়।” জেলার কর্মকর্তাদের এই পরিকল্পনার কথা জানানো হয় রাজ্য বন দফতরকে। সেখান থেকে কয়েক দিনের মধ্যে সবুজ সঙ্কেতও মিলে যায়। তার পরেই রাজ্য বন দফতরের আর্থিক সহায়তায় হাওড়া জেলায় শুরু হয় অত্যাধুনিক নার্সারি তৈরির কাজ। |
জেলা বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগাছায় ভরা প্রায় এক বিঘা নিচু জমিটি উন্নতমানের নার্সারি তৈরির উপযুক্ত করে তুলতে প্রথমে সেখানে মাটি ফেলে উঁচু করা হয়। অফিস ঘর, গ্রিন হাউস, ফোয়ারা দিয়ে সাজানো হয় নার্সারিটি। এর পরে আমতলা, বিবিঘাট ও অন্যান্য জায়গার বিভিন্ন নার্সারি থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ঘর সাজানোর গাছ সংগ্রহ করে আনা হয়। জেলা বন দফতরের উদ্যোগে তৈরি ডুমুরজলা নার্সারিতে প্রায় দেড় হাজার গাছ নিয়ে আসা হয়েছে। এগুলির মধ্যে বেশির ভাগই ঘর সাজানোর গাছ। গৌতমবাবু জানান, বাইরে থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাদার গাছ নিয়ে আসা হয়েছে। সেই গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে পুনরায় তৈরি করা হচ্ছে নতুন চারা। পূর্ণাঙ্গ আকার পাওয়ার পরে সেগুলিকে বিক্রি করা হবে।
কয়েকটি প্রক্রিয়ার পরে নার্সারির গম্বুজাকৃতি বিশেষ ঘরে রাখা হচ্ছে চারাগুলি। এক-দু’মাস পরে গাছগুলিকে ওই ঘর থেকে বের করে টবে স্থানান্তরিত করে, কয়েক দিনের জন্য বাইরের আবহাওয়ায় রেখে তবেই বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া অন্য পদ্ধতিতেও নতুন চারা তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি, অর্কিডের জন্যও একটি আলাদা গ্রিন হাউস তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বিশেষ পদ্ধতিতে মাদার গাছ থেকে তৈরি হবে নতুন অর্কিড। আগামী ৬ মাসের মধ্যে অর্কিডের চারাও পাওয়া যাবে বলে জানান বনকর্মীরা। |
জেলা বন দফতর সূত্রে খবর, ডুমুরজলার এই নার্সারিতে আরও অনেক বাহারি গাছ, ছ’টি প্রজাতির অর্কিড, কলস উদ্ভিদ ছাড়াও গুল্ম, ফুল জাতীয় অসংখ্য ঘর সাজানোর গাছের চাষ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, মেক্সিকান ঘাস, বিদেশি জবা, ফাইকাসের মতো বাগানের গাছেরও চাষ হচ্ছে। গৌতমবাবু বললেন, “এখনও কিছু কাজ বাকি। আশা করি, আর কয়েক দিনের মধ্যেই নার্সারিটি সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ডুমুরজলা থেকেই যাতে গাছের চারা কেনা যায় তার জন্য এখানে অফিসের পাশাপাশি বিক্রয় কেন্দ্রও খোলা হবে।”
রাজ্যের মুখ্য বনপাল অতনু রাহা বলেন, “বনমন্ত্রী রাজ্যের সব জেলাতেই সামাজিক বনসৃজনের কথা বলেছেন। হাওড়াও তার ব্যতিক্রম নয়। ডুমুরজলায় উন্নতমানের চারা তৈরির অত্যাধুনিক নার্সারি গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে ফল, ফুল ও গাছের চারার চাষ হবে। ভবিষ্যতে হাওড়ায় এমন আরও কয়েকটি নার্সারি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।” |