|
|
|
|
‘আক্রান্ত’ সিপিএম সমর্থকদের ধর্না মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা ² কলকাতা ও আরামবাগ |
তৃণমূল কর্মী -সমর্থকদের ‘হামলা’য় জেরবার হয়ে আরামবাগের গ্রাম থেকে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের সামনে এসে ধর্না দিলেন এক প্রাক্তন সিপিএম নেতার পরিবারের লোকজন।
শুক্রবার দুপুরে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সামনে ধর্না দিতে যান আরামবাগের বাতানল গ্রামের প্রাক্তন সিপিএম নেতা বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে তন্ময়বাবু, তাঁর স্ত্রী শ্রাবণীদেবী এবং তাঁদের ৮ বছরের মেয়ে অহনা। অহনার গলায় ঝোলানো ছিল মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা প্ল্যাকার্ড‘পিসিমা আমরা খাব কী? থাকব কোথায়? আমরা গৃহহীন’। একই রকম প্ল্যাকার্ড শ্রাবণীদেবীর গলাতেও ঝোলানো ছিল‘দিদি এ কী পরিবর্তন দেখছি ! আমরা খাব কী? থাকব কোথায়?’
আগাম অনুমতি না -থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তন্ময়বাবুদের কথা হয়নি। আধ ঘণ্টা ধর্না চালিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেই তৃণমূলের হামলার লিখিত অভিযোগ জমা দেন তাঁরা। একই অভিযোগ তাঁরা করেছেন রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা ) সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের দফতরেও। তন্ময়বাবু কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “তৃণমূল সমর্থকেরা সশস্ত্র ঢুকে হামলা, লুঠপাট চালাল। জল পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের অপরাধ, আমরা সিপিএম সমর্থক। আশা করি মুখ্যমন্ত্রী একটা বিহিত করবেন।” এডিজি (আইনশৃঙ্খলা ) জানান, আরামবাগের ঘটনায় কয়েক জনের খোঁজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, এই ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। |
 |
আরামবাগ থেকে অভিযোগ জানাতে মহাকরণে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র |
পালাবদলের পর থেকে আরামবাগে সিপিএম নেতা -কর্মীদের বাড়িতে হামলা, মারধর হয়েই চলেছে। শুক্রবার ফের আরামবাগের বাতানল এবং পুইন গ্রামে তিন সিপিএম নেতা -সমর্থকের বাড়িতে হামলা ও লুঠপাট চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মারধর থেকে রেহাই পাননি মহিলারাও। ঘটনাটিকে ‘বর্বরোচিত’ বলে চিহ্নিত করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূলের জোটসঙ্গী কংগ্রেস।
অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে বাতানল হাইস্কুলের মাঠেই বৃহস্পতিবার লাঠিসোটা নিয়ে তৃণমূলের একটি জমায়েত দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিল বহু ছাত্রছাত্রী। তারা স্কুলে আসেনি। শুক্রবার সকালে বাতানল বাজারে বেশ কিছু বোমা ফাটে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ওই বাজারের কাছেই সিপিএমের আরামবাগ জোনাল কমিটির প্রাক্তন সদস্য বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ভাই সিপিএম নেতা শম্ভুনাথবাবুর বাড়ি। বছর দেড়েক আগে বিশ্বনাথবাবু পদত্যাগ করেছিলেন। দলীয় সদস্যপদও আর পুনর্নবীকরণ করাননি। তাঁর পরিবার অবশ্য এখনও সিপিএম সমর্থক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলার আশঙ্কায় বৃহস্পতিবারই দুই ছেলেকে নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন বর্ষীয়ান বিশ্বনাথবাবু। বাড়িতে ছিলেন বিশ্বনাথবাবুর স্ত্রী কল্পনাদেবী এবং দুই পুত্রবধূ। অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন বোমা ফাটিয়ে শাবল দিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে লুঠপাট চালায়। বাড়ি ও জিনিসপত্রও ভাঙচুর করে। মারের হাত থেকে রেহাই পাননি কল্পনাদেবী। একই ভাবে হামলা হয় শম্ভুনাথবাবুর বাড়িতেও। তিনিও প্রহৃত হন। ঘটনার জেরে উত্তেজনা ছড়ায় সংলগ্ন চকহাজি গ্রামে। কিছুটা দূরে পুইন গ্রামেও সিপিএমের আরামবাগ জোনাল কমিটির সদস্য খন্দকার নুরুল ইসলামের দু’টি বাড়িতে হামলা ও লুঠপাট হয়। তাঁর ছেলে আশারুল ইসলামকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এর পরে অস্ত্র রয়েছে দাবি করে, তৃণমূল সমর্থকেরা দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাড়িটি ঘেরাও করে। পুলিশ অবশ্য তল্লাশি চালিয়ে কোনও অস্ত্র পায়নি। বাতানল থেকে ৯ তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।
আরামবাগের কংগ্রেস নেতা প্রভাত ভট্টাচার্য বলেন, “অবিলম্বে তৃণমূল এই সব নোংরামি বন্ধ করুক। সন্ত্রাসের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে না। আমি বাতানলে সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি, বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। এ নিয়ে আমরা শীঘ্রই তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব।”
এ ঘটনা নিয়ে তৃণমূল শিবির থেকে অবশ্য দু’রকম বক্তব্য পাওয়া গিয়েছে। আরামবাগের তৃণমূল নেতা সমীর ভাণ্ডারী বলেন, “ওই ঘটনায় আমাদের কেউ জড়িত নয়।
জনরোষের শিকার হয়েছে সিপিএমের লোকজন।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত অবশ্য বলেন, “কিছু দলীয় সমর্থক ওই এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের দলে ঠাঁই নেই।’’ |
|
|
 |
|
|